২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লক্ষ্মীপুরে অবৈধ দখলে মরে যাচ্ছে ডাকাতিয়া নদী

-

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ডাকাতিয়া নদীর মাঝে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ কারণে নদীটি এখন মৃতপ্রায়। অবৈধভাবে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণে পানি নিষ্কাশনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। নদী দখলের কারণে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নদী দখলমুক্ত করতে সম্প্রতি ডাকাতিয়া সুরক্ষা আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
একসময় রায়পুর বাজারের খুব কাছে লঞ্চঘাট ছিল, যেখানে লঞ্চ ও নৌকায় মালামাল আনা-নেয়া হতো। এই নদী দিয়ে ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ভোলা, বরিশাল, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাত্রী ও মালামাল বহন করা হতো।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রায়পুর পৌরসভা এলাকা, উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চর বংশী, দক্ষিণ চর বংশী এলাকায় নদীর উপরে আড়াআড়ি করে বাঁশ ও জাল দিয়ে অবৈধভাবে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নদীর তীরে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং ময়লা-আর্বজনা ফেলার কারণে নদীটি তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। রায়পুর মহিলা কলেজের সামনে নদী ভরাট করে একাধিক বহুতল ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। রায়পুর শহর থেকে ষোলা খালি ব্রিজ পর্যন্ত নদীর উপরে অবৈধ দখলের এমন চিত্র দেখা গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রায়পুরের পৌর মেয়র ও তার লোকজন রায়পুর মহিলা কলেজ থেকে জমাদ্দার বাড়ির সামনের পোল পর্যন্ত অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। একইভাবে জমাদ্দার বাড়ির পোলের পশ্চিম পাশে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেন দলবল নিয়ে মাছ চাষ করছেন। মাত্র ৪ কিলোমিটার নদী এলাকায় ২০-২৫টি অবৈধ বাঁধ দেখা গেছে।
স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, দখলের কারণে নদীটি প্রায় মৃত। দখল উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে এনে পরিবেশ রক্ষার দাবি জানান তারা। এতে ওই এলাকার লক্ষাধিক মানুষ নদী ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সামাজিক সংগঠন ডাকাতিয়া সুরক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে সম্প্রতি রায়পুর শহরে নদী দখলমুক্ত করে রায়পুর থেকে হাজীমারা পর্যন্ত নৌপথ চালুর দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। ওই কর্মসূচিতে ‘দখল দূষণমুক্ত প্রবহমান ডাকাতিয়া নদী, বাঁচবে প্রাণ বাঁচবে প্রকৃতি’ ওই স্লোগান ছিল মানুষের মুখে মুখে।
উপজেলা কৃষকলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, পৌর মেয়রসহ অনেকে প্রায় ৩০টি বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষ করছেন এ নদীতে।
এ বিষয়ে দখলদার কামাল হোসেন কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ দিকে নদী দখলের বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার অভিযোগে সম্প্রতি স্থানীয় লোকজনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে মেয়র ছেলের বিরুদ্ধে।
পৌরসভার মেয়র ইসমাইল হোসেন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ডাকাতিয়া নদীর এই অংশটি মরা নদী, আমার ব্যপারে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সঠিক নয়। পৌরসভার ভেতরে যে অংশটুকু রয়েছে তা আট বছর আগে ইজারার আওতায় আনা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মুসা জানান, ডাকাতিয়া নদীর কোনো অংশই কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। যারা মাছ চাষ করছে তারা অবৈধ কাজ করছে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায় বলেন, আমরা নদীটি অবৈধ দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ নিচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement