২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘিওরে যমুনার ভাঙনে ২ সপ্তাহে ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন

যমুনার ভাঙনে এভাবে বিলীন হচ্ছে মানিকগঞ্জের ঘিওরের বিস্তীর্ণ এলাকা; ইনসেটে ভাঙনের মুখে ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছে এলাকাবাসী :নয়া দিগন্ত -

যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে তিন শতাধিক বসতবাড়ি। বিলীন হয়েছে শত বছরের পুরনো ভিটি, স্কুল, মাদরাসা ছাড়াও শত শত বিঘা ফসলি জমি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি ইউনিয়নের উত্তরখণ্ড কাঁঠালতলা বাজার এলাকায় যমুনার কড়াল গ্রাসে হুমকির মুখে পড়েছে বাজার, রাস্তাঘাট ও স্কুল-মাদরাসা। ঘরের চালা ও বেড়া তড়িঘরি করে স্থানান্তর করছে নিরাপদ জায়গায়। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেউ কেউ কোনো রকমে ছাউনি তৈরি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করছে খোলা আকাশের নিচে। আবার অনেকে আশ্রয় নিয়েছে স্কুল বা অন্যের জমিতে ভাড়া চুক্তি করে।
যমুনার ভাঙনে উত্তরখণ্ড কাঁঠালতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারা টাঙ্গাইলের নাগরপুরের সরকারি কুমুদিনী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান জানান, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের এপাড়ে টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকা উত্তরখণ্ড যেন কালেরগর্ভে বিলীন হতে শুরু করেছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তার বাপ-চাচার বসত বাড়িসহ বিলীন হয়েছে তিন শতাধিক বসতবাড়ি। আর দুই বছরে নদীতে বিলীন হয়েছে চরকাটারি ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের অন্তত ৬০টি গ্রাম। এ ছাড়া বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে উত্তরখণ্ড কাঁঠালতলী বাজার এলাকাসহ ৬ নং ও ৭ নং ওয়ার্ডের অন্তত ৩০টি গ্রাম। এভাবে ভাঙতে থাকলে অচিরেই উত্তরখণ্ডের আর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি আরো জানান, কয়েক দিন আগে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। উত্তরখণ্ড এলাকার অস্তিত্ব বাঁচাতে তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে বলেন, ইতোমধ্যে চরকাটারী ও বাচামারা ইউনিয়নে সাত মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে সরকার আরো বরাদ্দ দেবে। নগদ অর্থ, চাল, ঢেউটিন যাই আসুক সবটুকু জিনিস ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সমানভাবে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, বাচামারা ও চরকাটারীর ছয়-সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যে ভাঙন শুরু হয়েছে তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিওব্যাগ ফেলে রোধ করা সম্ভব নয়। এখানে ভাঙন রোধ ও স্রোত ঠেকাতে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হবে তিনি জানান।
উপজেলার চরবারাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি সমেজ প্রামাণিক জানান, গত দুই যুগে তিনি আট দফা ভাঙনের শিকার হয়েছেন। তার ৪০ বিঘা জমি ও ঘরবাড়ি ছিল। এখন কিটুই নেই। সবই যমুনায় বিলীন হয়েছে। ইপিজেড এলাকায় কুলির কাজ করে চলে তার সংসার। চরকাটারী মণ্ডল পাড়ার আবদুল খালেক মণ্ডল জানান, নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়। এবার নিজের বাড়িতে থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। চরকাটারী বোর্ডঘর বাজার এলাকার আলমগীর হোসেন জানান, যমুনার ভাঙনে বাড়িঘর, জায়গা-জমি বিলীন হওয়ায় গরু-ছাগল নিয়ে এখন অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে কোনোমতে বসবাস করছেন।
চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক মণ্ডল জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে কাঁঠালতলী এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কাঁঠালতলী গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের চাল না দিয়ে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে নগদ অর্থসহায়তা দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে চরকাটারী ইউনিয়নের অস্তিত্ব বলে কিছু থাকবে না।


আরো সংবাদ



premium cement