২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


১০ শয্যার অবকাঠামো দিয়ে চলছে ৫০ শয্যা হাসপাতাল মানিকছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

-

মানিকছড়ি উপজেলার ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ শয্যার জনবল ও আসবাবপত্র দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। ১০ জন রোগীর খাবার খাচ্ছেন ৩০ জন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠিত। পার্বত্য মংসার্কেলের আবাসস্থল মানিকছড়ি হওয়ার কারণে রাজপ্রসাদ ও প্রজাদের নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসায় প্রথমে কমিউনিটি ক্লিনিকের আদলে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়। পরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালে পুরোদমে উপজেলাবাসীর চিকিৎসার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী ফটিকছড়ি, রামগড়, গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়ির বিভিন্ন গ্রামের লোকজন আপদ-বিপদে দ্রুত এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেন। দীর্ঘ কাল এ হাসপাতালটি ১০ শয্যার জনবল ও আসবাবপত্র দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে অতিরিক্ত রোগীর কারণে। ফলে দাবি ওঠে হাসপাতালটিতে উন্নত সেবা নিশ্চিতকল্পে ৫০ শয্যায় উন্নতি করার। জনগণের দাবির পরিপ্রক্ষিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। যথাসময়ে ঠিকাদার কাজ শেষ করলে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পুরাতন ১০ শয্যার ভবনে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাওয়ায় ননঅফিসিয়াল ভাবে ৫০ শয্যার ভবনে কার্যক্রম শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এ নতুন ভবনে চিকিৎসা সেবা শুরুর খবরে উপজেলা ও আশপাশের রোগীর ভিড় বেড়ে গেছে চারগুণ। কিন্তু জনবল ও আসবাবপত্র ১০ শয্যারই রয়ে গেছে। ফলে কর্তৃপক্ষ এখন পুরোপুরি বেসামাল হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া ২০০৪ সালে এ হাসপাতালে উন্নতমানের একটি ৩০০এমএ এক্সরে মেশিন সরবরাহ করা হলেও সেটি লো-ভোল্টেজের কারণে অ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্ত্বেও যন্ত্রাংশের অভাবে পাঁচ বছর ধরে সেটি বিকল থাকায় সাম্প্রতিককালে বিআরটিসির পরীক্ষক দল অ্যাম্বুলেন্সটিকে ব্যবহার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে। ফলে সেটিও অকালে হারাতে হলো উপজেলাবাসীকে।
বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ সাতজন। পদ রয়েছে ১১ জনের। নার্স ১১ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন আটজন।
নতুন ভবনে আধুনিক সুবিধায় দুইটি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও কোনো যন্ত্রপাতি না থাকায় সেটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
অথচ উপজেলার লক্ষাধিক জনগণের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে কর্তৃপক্ষের। এ ছাড়া ১০ শয্যার বেডে এখন প্রতিনিয়ত রোগী ভর্তি থাকছে গড়ে ৩০ জন। এই সব রোগীর খাবার ও ওষুধ বিতরণে কর্তৃপক্ষকে চরম বেগ পেতে হয়। কাউকে বুঝানো যায় না যে, ১০ বেডের ওষুধ ও খাবার ভর্তিকৃতদের মাঝে ভাগ করে দেয়া ছাড়া কর্তৃপক্ষের কিছুই করার থাকে না।
এ ক্ষেত্রে অনেক সময় নতুন রোগী ও আত্মীয়-স্বজনরা চিকিৎসকদের ভুল বোঝেন। সব মিলিয়ে মানিকছড়ির একমাত্র চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ শয্যার অনুমোদন দিয়ে তাতে আসবাবপত্র, জনবল, ওষুধপত্র, খাদ্য সরবরাহ জরুরি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: নোমান মিয়া বলেন, ১০ শয্যার জনবল, আসবাবপত্র, ওষুধ ও ভর্তি রোগীর খাদ্য চাহিদা দিয়ে ৫০ শয্যার কাজ চালানো সম্ভব না। কিছুতেই রোগীদের সঙ্কটের কথা বুঝানো যাচ্ছে না। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ৫০ শয্যার অনুমোদনসহ আসবাবপত্র, জনবল, ওষুধপত্র, সরবরাহে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য ও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান এম এ জব্বার বলেন, ৫০ শয্যার অনুমোদনসহ জনবল, আসবাবপত্রসহ যাবতীয় সঙ্কট নিরসনে জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত সমস্যা সমাধানসহ জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।


আরো সংবাদ



premium cement