২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জে শিল্প ও পণ্যমেলায় চলছে জুয়া আর লটারি ব্যবসা

মেলা মনে হলেও ভেতরের দৃশ্য ব্যতিক্রম
-

সুনামগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী ষোলঘর মাঠে মাসব্যাপী শিল্প ও পণ্যমেলায় দর্শনার্থীদের পকেট কেটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পকেটমার চক্র। মেলার মাঠের ভেতরে শিশুদের বিনোদনের নামে চলছে অতিরিক্ত অর্থ আদায়। এতে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে জেলা শহরের ষোলঘর স্টেডিয়ামে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে এবং বাংলাদেশ বেনারসি মসলিন ও জামদানি সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় শুরু হয়েছে শিল্প ও পণ্যমেলা। বাইরে থেকে শিল্প ও পণ্যমেলা মনে হলেও ভেতরের দৃশ্য পুরোপুরি ব্যতিক্রম। এক ধরনের জুয়ার আখড়ায় পরিণত হয়েছে মেলার ভেতর ও চারপাশ। আর মাইকের বিকট আওয়াজ আশপাশের পাড়া-মহল্লার ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় বিঘœ ঘটছে।
কোমলমতি শিশুদের নিয়ে ১০ টাকার টিকিট কিনে মেলায় প্রবেশ করছেন তাদের অভিভাবকেরা। মেলার চারপাশ ঘুরে দেখা যায় শিল্প ও পণ্য সামগ্রী তেমন একটা না থাকলেও শিশুদের মন কাড়ানো বিনোদন ব্যবস্থা রয়েছে মেলায় কিন্তু সুনামগঞ্জবাসীর জন্য এক বেদনাদায়ক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে অতিরিক্ত টাকায় টিকিট কিনে প্রতিদিন বিনোদন উপভোগ করতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ। মেলায় ৭০টিরও বেশি স্টল বসেছে বিভিন্ন নিম্নমানের পণ্য সামগ্রী নিয়ে। পাশাপাশি শিশুদের অতিরিক্ত বিনোদনের অয়োজন রয়েছে মেলার পুরো আঙ্গিনায় অন্যান্য বছরের বাণিজ্য তুলনায় তিনগুণ বাড়তি বিনোদনের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। মেলা দেখতে আসা দর্শনার্থীদের পকেট কেটে পকেটমার চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রবেশ টিকিটের নামে চলছে লটারি ব্যবসা। একেকজন ৪০-৫০টি বেশি টিকিট সংগ্রহ করছেন মোটরসাইকেল আর গাড়ি পাওয়ার লোভে।
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে শিশুদের বিনোদন উপভোগ করাতে গিয়ে তাদের পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে। বিনোদনের নামে মেলায় বসেছে স্লিপার যমুনা পার্ক যা শিশুদের সবচেয়ে বেশি মন কাড়ানো খেলা। তারা আরো জানান, যাদের টাকা আছে তাদের সন্তানরাই এই পণ্য মেলায় এসে শিশুদের বিনোদন হিসেবেখ্যাত স্লিপার বিনোদন উপভোগ করতে পারবেন। স্লিপার বিনোদনের টিকিট ১৫ মিনিটের জন্য কিনতে হয় ৩০০ টাকায়। আবার অনেকে বলছেন এটা নামে শিল্প ও পণ্যমেলা হলেও আড়ালে আয়োজকেরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বিনোদনের মধ্যে রয়েছে নাগরদোলা যার টিকিট মূল্য ৩০ টাকা, নৌকা দোলনার টিকিট ৫০ টাকা, রেলগাড়ি ৩০ টাকা, হেলিকপ্টার বিনোদন ৩০ টাকা, মোটরসাইকেল ও গাড়ির জেন্ডার গেমের টিকিট মূল্য ৩০ টাকা, হাতিঘোড়া চড়কির টিকিট ৩০ টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে বড়দের জন্য সবচেয়ে বেশি সময়ের বিনোদন সার্কাস যার টিকিট মূল্য ৫০ টাকা, ৭০ টাকা ও ৯০ টাকা। প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শত শত দর্শক। মেলা দেখতে আসা বেশ কয়েকজন জানান, তাদের পকেট কেটে টাকা নিয়ে গেছে পকেটমার চক্র। এ রকম পকেট কাটা বিনোদন বন্ধ করে মেলায় সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের জন্য সহনীয় পর্যায়ের টিকিটে বিনোদন দেখার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা।
এ ব্যাপারে মেলার মালিক বাবলু মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায় করতে এসেছি। আপনারা পত্রিকায় নিউজ না করে আমাদের সহযোগিতা করুন।
এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রাজা চৌধুরী বলেন, একটি মেলা চলবে সরকারের নীতিমালার আলোকে। কেউ যদি বিনোদনে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে এবং মেলার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে অশ্লীল নৃত্য চালানোর চেষ্টা করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপরে জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরিফুর ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement