২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাইক্ষ্যংছড়িতে ১২ বছর চাকরি করেও জাতীয়করণ থেকে বাদ ২ শিক্ষক

-

দীর্ঘ দিন পর পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের রেজুগর্জনবিনয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চূড়ান্ত গেজেটের অফিস আদেশ প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য এটি খুশির খবর হলেও দীর্ঘ এক যুগ ধরে বিনা বেতনে চাকরি করে আসা দু’জন শিক্ষকের নাম চূড়ান্ত গেজেটের অফিস আদেশ থেকে বাদ পড়ায় সর্বমহলে দেখা দিয়েছে হতাশা। ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অভিযোগ, হাইকোর্টে মামলা থাকার পরও বড় ধরনের দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়মিত দু’জন শিক্ষককে বাদ দিয়ে মন্ত্রণালয় ভুয়া দু’জন শিক্ষককে গেজেটভুক্ত করেছে।
সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে স্থানীয় কিছু শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়ে নিজেদের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে রেজুগর্জনবনিয়া এলাকায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। অনেক অভাব-অনটনের কারণে প্রতিষ্ঠার চার-পাঁচ বছরের মাথায় বিদ্যালয়টির বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধান শিক্ষক ছাড়া নতুন করে দু’জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেন তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান দীপক বড়–য়া। এরা হলেনÑ শফিউল ইসলাম ও সিরাজুল হক। পর্যায়ক্রমে ২০০৭ সালে এসে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে বুলবুল আক্তারকে নিয়োগ দেয়া হয়। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১০ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন ও চালুর অনুমতি লাভ করে।
প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ হামজা বলেন, ২০১২ সালে সরকার সারা দেশের রেজিস্টার্ড ও আন-রেজিস্টার্ড ২৩ হাজার ৬০০ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করলে ২০১৩ সালে আমি ও উল্লিখিত তিনজন শিক্ষকের নাম উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি বরাবর জমা দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ করা হয় এবং ২০১৬ সালে আমি ছৈয়দ হামজা, শফিউল ইসলাম, বুলবুল আক্তার ও সিরাজুল হকের নামে খসড়া গেজেট প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি দুর্নীতিবাজ চক্র বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আগের তারিখে নিয়োগ দেখিয়ে খসড়া গেজেটে অন্তর্ভুক্ত দু’জন শিক্ষকদের নাম বাদ দিয়ে বহিরাগত দু’জনের নামে গত ১২ আগস্ট গেজেটের অফিস আদেশ জারি করে মন্ত্রণালয়।
তবে ওই গেজেটের অফিস আদেশটি ৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট স্থগিত করেছে বলে জানিয়েছেন সহকারী শিক্ষিকা বুলবুল আক্তার। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা অদৃশ্য কারণে আমলে নেয়া হচ্ছে না। উল্টো অফিস আদেশটি কার্যকর করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসকে চাপ দেয়া হচ্ছে। একইভাবে শফিউল ইসলাম নামের আরেকজন সহকারী শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, খসড়া গেজেটের পর চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় প্রধান শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষক বাদি হয়ে চলতি বছরের মে মাসে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। হাইকোর্ট মামলাটি আমলে নিয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে গেজেট জারি করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি রুলনিশি জারি করেন। কিন্তু এ সময়ে মন্ত্রণালয় সেই আদেশ অমান্য করে নিয়মিত দু’জন শিক্ষককে (শফিউল ইসলাম ও বুলবুল আক্তার) বাদ দিয়ে ভুয়া দু’জন শিক্ষকের (উকচাইন চাকমা ও পারভীন আকতার) নামের গেজেটের অফিস আদেশ প্রকাশ করে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহমেদ জানান, ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীকরণের সময় তারা যে চারজন শিক্ষকের নাম প্রস্তাব করেছিলেন, তার মধ্যে থেকে শফিউল ইসলাম ও বুলবুল আক্তারকে বাদ দিয়ে কিভাবে গেজেটের অফিস হয়েছে তা তার জানা নেই। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ই ভালো জানে বলে জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement