২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সুরমার ভাঙন রোধে উদ্যোগ নেই

বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ফসলি জমি

সুনামগঞ্জের সুরমার ভাঙন থেকে ইনাতনগর গ্রামের মসজিদ রক্ষায় আল্লাহর কাছে মুনাজাত করছেন মুসল্লিরা :নয়া দিগন্ত -

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় সুরমা নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভাঙনে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, মসজিদ, গাছপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা হারিয়েছে অনেক পরিবার। কোনো কোনো এলাকার মানচিত্রই পাল্টে যাচ্ছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলেও দুই-একটি জায়গা ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
পাউবো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দোয়ারাবাজার উপজেলাকে ভয়াবহ নদী ভাঙনকবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতনদের কাছে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলার অন্য উপজেলার ভাঙন এলাকারও প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে বরাদ্দ এলে কাজ শুরু হবে। তবে সেই বরাদ্দ কবে আসতে পারে তাও জানা যায়নি।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় বছর তিনেক আগে ভাঙনের কবলে পড়ে চলাচলের পাকা রাস্তাসহ প্রায় ১০টি দোকানঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মূল রাস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন লঞ্চযাত্রী ও পথচারীরা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা লঞ্চঘাটের ভাঙন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার পরিদর্শন করে নকশা তৈরি করেছেন বলে জানা গেলেও এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সুরমা তীরবর্তী পূর্ব ইব্রাহিমপুর গ্রামের রাস্তা, শতাধিক ঘরবাড়ি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত দুই বছর ধরে গ্রামের নতুন নতুন স্থানে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীভাঙন প্রতিরোধে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করলেও কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। ইব্রাহিমপুরের পাশের গ্রাম জগন্নাথপুর, মইনপুর, ধারারগাঁও এলাকার হালুয়ার ঘাটের কিছু অংশ, ব্রাহ্মণগাঁও, নতুন ব্রাহ্মণগাঁও, আমবাড়ি বাজার, আদারবাজার, হরিনাপাটী এলাকার একই অবস্থা। মোহনপুর ইউনিয়নের পৈন্দা এলাকায় নদীভাঙন চলছে দীর্ঘ দিন। সুনামগঞ্জ সদরের ইনাতনগর গ্রামের মসজিদ ও ঘরবাড়ি ভাঙছে। তবে সম্প্রতি মসজিদটি রক্ষায় পাউবোর উদ্যোগের কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, মসজিদ, মাদরাসা, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, খাদ্যগুদাম ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসভবনের অংশবিশেষ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নৈনগাঁও এলাকায় জায়গাজমি ও গাছপালা, মুরাদপুর, মাঝেরগাঁও এলাকায় নদীরপাড়, ঘরবাড়ি, গাছপালা, মাছিমপুর ও পশ্চিম মাছিমপুর গ্রামের ঘরবাড়ি ও গাছপালা, কাটাখালি, জলালপুর ও সোনাপুর এলাকা, ছাতকের মুক্তিরগাঁও গ্রামের পাকা রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও গাছপালা, লক্ষ্মীবাউর গ্রামের ছাতক-দোয়ারা সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গোবিন্দনগর গ্রামের ধানিজমি ও গাছপালা এবং মাদরাসা এলাকার রাস্তা নদীতে বিলীন হয়ে এখন মাদরাসাই হুমকির মুখে পড়েছে। বাউসা গ্রামের অনেক ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। দোলারবাজার এলাকার মইনপুরবাজার রাস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেলেও ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজারের আশপাশের এলাকা, জামলাবাজ, তেলিয়াপাড়া, নুরপুর, রামনগর, কামলাবাজ, নয়াহালট, রামপুরসহ বেশ কয়েকেটি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। এ এলাকার নদীভাঙন প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।
তবে ইতোমধ্যে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আল ইমরান বেশ কয়েকটি গ্রামের ভাঙনকবলিতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন বলে জানিয়েছেন ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদসচিব অজিত কুমার রায়।


আরো সংবাদ



premium cement