২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নৌ নিরাপত্তাসরঞ্জাম নেই : ঝুঁকিতে ভোলার দেড় লাখ জেলে

ঝড়ো আবহাওয়া উপেক্ষা করে মাছ শিকারে জেলেরা : নয়া দিগন্ত -

নদীবেষ্টিত দ্বীপজেলা ভোলা। এখানকার নদী ও সাগরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে মৎস্য আহরণ করে দেড় লক্ষাধিক জেলে। অথচ এই জেলেদের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগের সময়ও সুরক্ষা বা প্রস্তুতি ছাড়াই মাছ ধারতে যান তারা। ফলে প্রতি বছর নৌকা ডুবিতে মারা যাচ্ছেন অনেক জেলে। তাই দ্রুত জেলেদের জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের দাবি মৎস্য বিভাগের। আর জেলা প্রশাসক বলছেন, জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করা হবে।
মেঘনার মোহনায় ও বঙ্গবোসাগরের কূল ঘেঁষে জেগে ওঠা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ জেলা ভোলা। এই জেলার মানুষের একটা বড় অংশ মৎস্যজীবী। মেঘনা, তেঁতুলিয়া আর সাগরে মৎস্য আহরণ করে দেড় লক্ষাধিক জেলে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগের সময়ও সুরক্ষা বা প্রস্তুতি ছাড়াই মাছ ধারতে যান এই সব জেলেরা। ফলে প্রতি বছর নৌকা ডুবিতে মারা যাচ্ছেন অনেক জেলে। কিন্তু সরকার থেকেও কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পান না এই জেলেরা। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেই সাগরে মাছ ধরতে যান জেলেরা। নৌকায় নিরাপত্তাসরঞ্জাম থাকে না। মাছ ধরতে গিয়ে প্রতি বছরই ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে নৌকা ডুবছে। আর জেলেরাও মারা যাচ্ছেন। এ জন্য জেলে নৌকার নিবন্ধন করার পাশাপাশি জেলেদের বীমা করা দরকার।
মাছের ঘাটগুলোর তথ্য মতে, ২০০৭-১৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ২৩২ মাছ ধরা নৌকা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে ডুবে গেছে। এতে নিহত ও নিখোঁজ হয়েছেন ৬৮৩ জন।
জেলেরা জানান, আবহাওয়া বিচার করলেতো না খেয়ে মরতে হবে। মাছ ধরেই তাদের সংসার চলে এসব কেনার মতো সামর্থ্যও নেই আমাদের।
ভোলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, দুর্যোগকালীন নিরাপত্তা নিরসন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, লাইফ জ্যাকেট, বয়া দিতে পারলে ঝুঁকি কিছুটা কমে আসবে।
বিআইডব্লিউটিএ ভোলা অফিস পরিদর্শক নাছিম আহাম্মেদ বলেন, ছোট হোক, বড় হোক; একটি জেলে নৌকায় পর্যাপ্ত বয়া, লাইফ জ্যাকেট, সার্চলাইট, রেডিও, মোবাইল ও কম্পাস জরুরি। না থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করতে এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে জেলেদের সচেতন করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
সাত উপজেলার মাছঘাটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ বছরে নৌকাডুবিতে মনপুরায় ১৫৪, দৌলতখানে ২২৫, চরফ্যাশনে ১২৫, তজুমদ্দিনে ৬৫, বোরহানউদ্দিনে ১৫, লালমোহনে ২৩, ও সদর উপজেলায় ৭৫ জন নিহত ও নিখোঁজ হয়েছেন।
উল্লেখ্য, বেসরকারি সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ২০০ জেলের হাতে প্রথমবারের মতো দুর্যোগের ঝুঁকি মেকাবেলার জন্য একটি করে বয়া বিতরণ করে।


আরো সংবাদ



premium cement