০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙনে মসজিদ চারতলা ভবনসহ ৩ বাড়ি বিলীন

পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে নড়িয়া পৌর এলাকার পাকা সড়ক ও ঘরবাড়ি; ইনসেটে পদ্মায় নিলীন হয়ে যাওয়া বাড়িটি : নয়া দিগন্ত -

পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে নড়িয়া-সুরেশ্বর সড়কের মূলফৎগঞ্জ বাজারসংলগ্ন খান বাড়ি জামে মসজিদ ও হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী অনুসারী গাজী কালুর মেহমান খানা নামের চারতলা ভবন, দিলু খানের দোতলা ও খান বাড়িটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় ভবনের সামনের পাকা সড়কটিও নদীতে বিলীন হয়ে যায়। শনিবার রাত ৯টায় একই সাথে বাড়িগুলো ও মসজিদটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। মারাত্মক ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে মূলফৎগঞ্জ বাজার, পদ্মায় বিলীন মেহমান খানার সামনের তিনতলা ভবন, নড়িয়া বাজার, পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় হারিয়ে যাবে আশপাশের আরো অনেক স্থাপনা। পদ্মার তীরবর্তী লোকজনের চোখে ঘুম নেই। তারা দিন-রাত তাদের সর্বশেষ সম্বল ঘরবাড়ি, দোকানপাট সরিয়ে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছরও বর্ষা মওসুম শুরু থেকে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে পদ্মা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নড়িয়া উপজেলার বাঁশতলা, মূলফৎগঞ্জ, সাধুর বাজার, ওয়াপদা এলাকার দুই হাজারেরও বেশি পাকা ঘরবাড়ি, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্রিজ কালভার্ট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে নড়িয়া উপজেলা শহর ও মূলফৎগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের এলাকাটি নদীতে চলে যাবে। একই সাথে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, মসজিদ-মাদরাসা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মার তীর রক্ষাবাঁধ বাস্তবায়ন না হলে এবং নদীর স্রোত পরিবর্তন না হলে বর্ষা মওসুমেই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী আরো জানান, এ বছর বর্ষা মওসুমের আগে পদ্মার তীর রক্ষা বাঁধ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও তা বর্ষার আগে বাস্তবায়ন হয়নি। এ ভয়াবহ ভাঙন রোধে সরকার পদ্মা নদীর দক্ষিণ (ডান) তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প গ্রহণ করে। এরপর গত ২ জানুয়ারি তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য এক হাজার ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তা একনেকের বৈঠকে পাস করে। এ বছর বর্ষা মওসুমে ভাঙন শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে ৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে নদীর গতি পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল এবং কাজ ধীর গতিতে হওয়ায় কোনো কাজেই আসেনি সরকারে এ অতিরিক্ত বরাদ্দ। গত শনিবার দুপুরে নড়িয়ার বাঁশতলা থেকে মূলফৎগঞ্জ সড়কের ১০০ মিটার পদ্মায় চলে যায়। এরপর শনিবার রাতে একই সাথে পদ্মায় বিলীন হয়ে যায় নড়িয়া-সুরেশ্বর সড়কের মূলফৎগঞ্জ বাজারসংলগ্ন খান বাড়ি জামে মসজিদ ও হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতীর অনুসারী গাজী কালুর মেহমান খানা নামের চারতলা ভবন, দিলু খানের দোতলা ও খান বাড়িটি। এ দিকে নড়িয়া বাজার ও মূলফৎগঞ্জ বাজার পদ্মার কাছে চলে আসায় ব্যবসায়ী ও আশপাশের লোকজন প্রতিটি মুহূর্ত ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর দাবি ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হলে এখনো নড়িয়া বাজার রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে শিগগিরই পদ্মার দক্ষিণ তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হবে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, বিলাসবহুল বাড়িটি পদ্মায় তলিয়ে গেছে শুনে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। পদ্মার তীরবর্তী লোকজনকে দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিং করা হচ্ছে। এর আগে এক হাজার ৪০০ জন ক্ষতিগ্রস্তের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশা করি ঈদের আগেই আরো এক হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement