২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


হাওরাঞ্চলে চলছে ধান মাড়াই ও শুকানোর ধুম

হাওরাঞ্চলে চলছে ধান মাড়াই ও শুকানোর ধুম -


কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, নিকলী ও বাজিতপুরসহ হাওরাঞ্চলে সবখানেই এখন ধান মাড়াই ও শুকানোর ধুম পড়েছে। কৃষাণ- কৃষাণীরা নাওয়া খাওয়া ভুলে বোরো ধান ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর এ অঞ্চলে ভালো ফলন হয়েছে। এর মধ্যে ৮০-৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। অন্যগুলো কয়েকদিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে। এখন চলছে পুরোদমে ধান মাড়াই ও রোদে শুকানোর কাজ।
এ দিকে হাওর এলাকার রাস্তা, স্কুল, বাড়ির বারান্দায়, মাঠে এখন ধান শুকানোর কাজ চলছে। বাতাসে ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। পরিবারের সবাই এখন শ্রমিক হয়ে কাজ করছে। কারণ এ অঞ্চলের ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি এখন এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা।
হাওরাঞ্চলে বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াইয়ের শেষদিকে উৎসব মুখর পরিবেশে এখন সেই ধান রাত জেগে সিদ্ধ করে সকাল থেকে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। রাত-দিন পরিশ্রমের পরেও কোনো ক্লান্তি নেই তাদের। উৎপাদিত ফসলের বাম্পার ফলন ও দাম আশানুরূপ হওয়ায় খুশি কৃষকরা।

কৃষকরা সড়কে ধান শুকানোর জন্য বাড়ি থেকে সিদ্ধ ধান বস্তায় ভরে বাইসাইকেলে করে এনে রাস্তার ওপর ঢালছেন। আর কৃষাণীরা সে ধান পা দিয়ে আলগা করে দিচ্ছেন। তীব্র গরমে তাপপ্রবাহ রোদে সোনালী ধানে পা দিচ্ছেন কৃষাণীরা। অনেকেই হাট-বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বাড়ি থেকেও বিক্রি করছেন তাদের উৎপাদিত ফসল।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর করগাঁও, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী হাওরের বিভিন্ন সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠ দখল করে ধান শুকানোর ধুম পড়েছে। প্রচণ্ড রোদেও নেই কৃষাণ-কৃষাণীদের ক্লান্তি বরং ধান শুকাতে পেরে স্বস্তির হাসি দেখা দিয়েছে, তাদের চোখে-মুখে। ধান ও খড় শুকানোর কাজে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান শুকানোর কাজ করছেন তারা। দ্রুত ধান শুকাতে মাঠের ঘাসের ওপর বিছানো হয়েছে ছোট-বড় পলিথিন। আর সেই পলিথিনে শুকানো হচ্ছে ধান। কেউ ধান উল্টিয়ে দিচ্ছেন, কেউ ধানের আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। অনেকেই তাদের উৎপাদিত ফসল রোদে শুকিয়ে হাটে তোলার প্রস্ততি নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে প্রখর রোদ আর বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে ধান ঘরে তোলা ও বাজারজাত করার কাজ। অবসর নেই কারো। অস্বস্তির রোদই যেন তাদের স্বস্তি এনে দিয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় এক লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে এক লাখ চার হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে হাওরে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৫ টন ধান। যা বিক্রি হবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই বাকি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।

ইটনা উপজেলার বরিবাড়ি গ্রামে সড়কে ধান শুকাচ্ছিলেন হালিমা আক্তার (৪৭) তিনি বলেন, ‘নিজের উঠান আছে। সেটা ছোট আর রোদ কম পাওয়া যায়। এনে যে ধান ২-৩ দিনে শুকাইবে সেই ধান হামার উঠানে শুকাইতে ৮-৯ দিন নাইগবে। পরে যদি বৃষ্টি আসে তাহলে আরো বিপদ। কামের মানুষও পাওয়া যায় না। পাইলেও দাম বেশি দেয়া নাগে। সেই জন্য রাস্তায় আসছি ধান শুকাইতে। সময়ও কম লাগে, টাকাও বাঁচে।’
অন্য দিকে হাটগুলোতে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি ও বেচাকেনা। কৃষকরা তাদের ধান ভটবটি, মিনি ট্রাক ও নৌকা দিয়ে হাটগুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন। আশানুরূপ দাম হাঁকলেই বিক্রি করছেন খুচরা ও পাইকারি ক্রেতাদের কাছে। হাটে ধানের দাম ঠিক হওয়ার আগেই কৃষকদের হাতে টাকা গুঁজে দেয়ার চেষ্টা করছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী। বোরোর বাম্পার ফলনে ও ভালো দামে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

ইটনা উপজেলার শিমুলকান্দি গ্রামের কৃষক সোবান আলী জানান, ‘পরিশ্রম আর পরিচর্যায় এ বছর বোরো মৌসুমে তাদের উৎপাদিত ফসলের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বর্তমানে ধানের দামও ভালো হওয়ায় তারা বেজায় খুশি। কেন না খরচ বাদ দিয়ে তাদের বিঘাপ্রতি লাভ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এটা গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষকদের হিসাব বলে যোগ করেন তারা। তিনি আরো জানান, ‘কিছু জমিতে কাটা-মাড়াই কাজ শেষের দিকে। সেই ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তারা। এ বছর কিশোরগঞ্জের ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন হাওরসহ নিকলী, বাজিতপুর, তাড়াইল, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী এবং উজান এলাকার অন্যান্য উপজেলায়ও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের দামও ভালো। মাড়াইস্থলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকায়।
নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের কৃষাণী সালমা বেগম বলেন, এখন আমরা ধান সিদ্ধ করছি খাওয়ার চাল তৈরির জন্য। সকালে বস্তায় করে সিদ্ধ ধান সড়কে নিয়ে আসি শুকানোর জন্য। রাস্তায় পলিথিন বিছিয়ে শুকাতে দিছি। আকাশের অবস্থা ভালো আছে, সারা দিনে সব ধান শুকিয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের রতন মিয়া জানান, ধান ও খড় শুকানোর জায়গার তীব্র সঙ্কটের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বাড়ির আশপাশে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। সে কারণে এখানে আসা। তা ছাড়া এ রাস্তায় ধান শুকানোর অনেক সুবিধাও আছে। আজকে এখানে ২০-২৩টি পরিবারের ধান দেয়া আছে। প্রতিটি পরিবার থেকে কমপক্ষে দু-তিনজন করে এখানে কাজ করছেন। সবাই সবাইকে সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে ঝড় বা বৃষ্টি এলে ধান কখনো ভিজবে না। আমরা সবাই সবাইকে সহযোগিতা করি।’
কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে আমরা আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারবে কৃষকরা। রাত জেগে কৃষকরা কাজ করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ফের ইংলিশ লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যানসিটি ম্যানসিটির টানা চতুর্থ শিরোপা কেএনএফের তৎপরতার প্রতিবাদে বান্দবানে মানববন্ধন তাপপ্রবাহের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য নতুন নির্দেশনা ‘ভুয়া তথ্য’ ছড়িয়ে কিরগিজস্তানে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা রংপুরে হুমকি দাতা ইউপি মেম্বারকে তলব করল রিটার্নিং কর্মকর্তা রোহিঙ্গা গ্রামে আরাকান আর্মির হামলা ও অগ্নিসংযোগ মিরপুরে ব্যাটারি চালিত রিক্সাচালক ও পুলিশ সংঘর্ষ : আহত অর্ধশত লজ্জাহীনতার বার্তা শিশুদের মনে দুর্ঘটনার কবলে ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার গুরুতর আঞ্চলিক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল