২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শঙ্খ নদীর ভাঙন অব্যাহত সাতকানিয়ায় দেড় শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন

সাতকানিয়া উপজেলার দ্বীপ চরতি দক্ষিণ বামনডেঙ্গা এলাকার ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি শঙ্খ নদীতে এভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় শঙ্খ ও ডলু নদীর অব্যাহত ভাঙনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে উপজেলার আয়তন। এতে করে প্রতি বছর অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ছে। বর্ষা মওসুমে শঙ্খ ও ডলু নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। চলতি বর্ষা মওসুমে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের ফলে উপজেলার চরতি ও আমিলাইশ ইউনিয়নে দেড় শতাধিকের বেশি বসতবাড়ি ও আবাদি জমি শঙ্খ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও উপজেলার শঙ্খ নদীর তীরবর্তী আরো শত শত বসতবাড়ি ও আবাদি জমি ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। প্রতি বছর শঙ্খের দুই পাড়ের নতুন নতুন এলাকা ভাঙনের মুখে পতিত হচ্ছে। ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। নদী ভাঙনের সাথে সাথে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অতীতে কোনো সরকারই ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলে প্রতি বছর নতুন নতুন এলাকা এবং ঘরবাড়ি শঙ্খের করালগ্রাসে চলে যাচ্ছে। আর গৃহহীনদের তালিকায় নতুন নতুন নাম সংযুক্ত হচ্ছে।
ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতীতে বর্ষা মওসুমে অধিক বৃষ্টির কারণে সাতকানিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে শঙ্খ নদীর ভাঙনে শত শত বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার চরতি ইউনিয়নের মধ্যম চরতি, বামনডেঙ্গা, আমিলাইশের সাইরপাড়া, কৈবক্তপাড়া, হাফেজেরপাড়া, খলিফাপাড়া, নলুয়ার নবীরপাড়া, টেন্ডলপাড়া, মধ্যম নলুয়া, জেলেপাড়া ও কালিয়াইশের মাইঙ্গাপাড়া এলাকায় কয়েক হাজার বসতবাড়ি ও কয়েক শ’ একর আবাদি জমি গিলে খেয়েছে শঙ্খ নদী।
চরতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা: রেজাউল করিম জানান, প্রতি বছর বর্ষা মওসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে শঙ্খ নদীর দুই পাড়ে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়ে বসতবাড়ি ও আবাদি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চলতি বর্ষা মওসুমে দ্বীপ চরতির ১ নম্বর ওয়ার্ডে দক্ষিণ বামনডেঙ্গা এলাকায় হাজী বাহাদুল্লাহ, হাজী নুরুন্নবী, নুরুচ্ছপা, তফসির, ওসমান গণি, মো: হারুণ, মো: আলী, নুর মোহাম্মদ, নাছির উদ্দিন, মনির আহমদ, আবুল কাশেম, আবদুস ছালাম, মোজাম্মেল হক, নাছির উদ্দিন ও নুর মোহাম্মদের বাড়িসহ অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি শঙ্খ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে আরো অনেক বসতঘর ও ফসলি জমি নদীর ভাঙনের মুখে রয়েছে। শঙ্খ নদীর ভাঙনে বিগত এক যুগে মধ্যম চরতি, দক্ষিণ চরতি, উত্তর তুলাতলি, উত্তর বামনডেঙ্গা ও দক্ষিণ বামনডেঙ্গায় কয়েক হাজার বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে।
দ্বীপ চরতি দক্ষিণ বামনডেঙ্গার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন জানান, গত তিন বছরে দক্ষিণ বামনডেঙ্গায় পাঁচ শতাধিকেরও বেশি বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। যার মধ্যে শতাধিক পাকা বাড়িও রয়েছে। গত বছর বর্ষা মওসুমে তার এলাকার একটি দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল ইসলাম দাখিল মাদরাসা, দক্ষিণ পাড়া শাহী জামে মসজিদ ও মসজিদের পাশের একটি বিশাল কবরস্থান শঙ্খ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বর্ষা মওসুমে এই এলাকার জনসাধারণের একমাত্র চলাচলের মাধ্যম আধাপাকা সড়কটির বেশির ভাগই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
দ্বীপ চরতি বামনডেঙ্গা এলাকায় শঙ্খ নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি হারানো আবুল কাশেম ও আবদুস ছালাম বলেন, বাপ দাদার রেখে যাওয়া বসতভিটের মধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো রকমে সুখে শান্তিতে দিন যাপন করছিলাম। কিন্তু রাক্ষুসী শঙ্খ হঠাৎ আমাদের সব সুখশান্তি পানির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে স্থান পরিবর্তন করে পাঁচবার ঘর তৈরি করেছি। কিন্তু শঙ্খ নদীর শত্রুতার কারণে সেসব ঘরে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ হয়নি। এই বছরেও শঙ্খ নদী আমাদের বসতবাড়ি ও ভিটেমাটির চিহ্নটুকু পর্যন্ত ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
এ দিকে আমিলাইশ ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম হানিফ জানান, প্রতি বছর বর্ষা মওসুমে সৃষ্ট বন্যায় তার এলাকার শত শত ঘরবাড়ি নদীর বুকে হারিয়ে গেছে। চলতি বর্ষা মওসুমেও ১১০টি বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যার মধ্যে একতলা, দুইতলা অনেক পাকা বাড়িও রয়েছে। বর্তমানেও শঙ্খ পাড়ের আরো শত শত ঘরবাড়ি নদীরতে বিলীন হওয়ার পথে। এলাকাবাসীর চলাচলের একমাত্র প্রধান সড়কটিরও বিভিন্ন স্থান শঙ্খ নদী গ্রাস করেছে। ফলে এলাকাবাসীর যাতায়াত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্তমানে নতুন নতুন এলাকা ভাঙনের কবলে রয়েছে। শঙ্খের ভাঙনে বসতবাড়ি হারানো মানুষগুলো বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।


আরো সংবাদ



premium cement