২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাটোরে অতিথি আপ্যায়নে জিআর প্রকল্পের দেড় কোটি টাকা ব্যয়

কোনো প্রতিষ্ঠান বরাদ্দকৃত সব টাকা পায়নি
-

নাটোরে অতিথি আপ্যায়নের নামে নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় মানবিক সহায়তা কর্মসূচির (জিআর) আওতায় বরাদ্দ দেয়া দেড় কোটি টাকার ৪৬০ টন চাল ব্যয় করা হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে নাটোর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার মোট ২২২টি প্রকল্পের আওতায় ৩০০ টন এবং নলডাঙ্গায় ১০৯টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৬০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক টন করে তবে বিশেষ ক্ষেত্রে তিন টন চালও বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই দুই উপজেলার মোট ৩৩১টি প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নামে ৪৬০ মণ চাল বরাদ্দের জন্য ২৩৯টি ডিও লেটার দেয়া হয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং, শিশু সদন, অনাথ আশ্রম, মুসাফিরখানা ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিতরণের জন্য সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে বিতরণের জন্য ওই চালের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রায় সবাই সরকারদলীয় নেতাকর্মী। বরাদ্দ পাওয়া এসব চাল বিক্রির টাকা দিয়ে স্থানীয় মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, ইসলামি জলসা ও বিভিন্ন মন্দিরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শুধু অতিথি আপ্যায়নেই ব্যয় করা হয়েছে। সবখানেই বরাদ্দ করা চাল না দিয়ে সরকারি নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাল বিক্রির টাকা দেয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানেই বরাদ্দ পাওয়া সব চালের দাম দেয়া হয়নি এমন অভিযোগও রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ধরাইল হাফিজিয়া কওমি মাদরাসার ইসলামি জলসায় অতিথি আপ্যায়নের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান নুরুল ইসলাম নাজিমের নামে তিন টন জিআরের চাল বরাদ্দ দেখানো হলেও তিনি দলীয় এক নেতার মাধ্যমে পেয়েছেন মাত্র সাত হাজার টাকা। একই ইউনিয়নের ফজলুল উলুম কওমি মাদরাসার নামে তিন টন চাল বরাদ্দ দেখানো হলেও তারা পেয়েছেন ২১ হাজার টাকা। নলডাঙ্গা উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার ১০৯ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে জিআর প্রকল্পের মোট ১৬০ টন চাল বিক্রির টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই উপজেলার করেরগ্রাম মাদরাসার নামে তিন টন চাল বরাদ্দ থাকলেও সেই প্রতিষ্ঠান ১১ হাজার টাকা পেয়েছে। উপজেলার আঁচড়াখালী উত্তরপাড়া ঈদগাহে ইসলামি জলসার অতিথি আপ্যায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান আবুল হোসেনের নামে তিন টন চাল বরাদ্দ দেখানো হলেও সেখানে কোনো জলসাই হয়নি। একই উপজেলার ঠাকুর লক্ষ্মীকোল জামে মসজিদের অতিথি আপ্যায়নের জন্য মোহাম্মদ সলিমের নামে তিন টন জিআরের চাল বরাদ্দ দেখানো হলেও ওই নামে ঠাকুর লক্ষ্মীকোলে কোনো জামে মসজিদই নেই। এ ছাড়াও কোনো কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জিআরের টাকা ২০১৭ সালের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে খরচ দেখানো হয়েছে কিন্তু চলতি বছরে সে সব প্রতিষ্ঠানে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানই হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান। জিআর বরাদ্দের সময় চালের বাজার দর ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা টন থাকলেও বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানদের চাল না দিয়ে ২৭ হাজার টাকা টন দরে ওই চাল বিক্রি দেখানো হয়েছে। নাটোর ও নলডাঙ্গা উপজেলায বরাদ্দ করা মোট ৪৬০ টন চাল এভাবে কম দামে বিক্রি দেখিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আখতার বানু জানান, সদরের এসিল্যান্ডকে প্রধান করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠিত পাঁচ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশেই এসব চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই কমিটির যাচাই-বাছাই করা ২২২টি প্রকল্পের একটি তালিকা তিনি নাটোরের জেলা প্রশাসক, নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দফতরে জমা দিয়েছেন।
কোনো প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ করা চাল না পেয়ে টাকা কেন পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি খাদ্য বিভাগকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ করা ডিও লেটারের মাধ্যমে চালই সরবরাহ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু চালের বদলে কেন টাকা দেয়া হলো বা কম টাকা দেয়া হলো সে ব্যাপারে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ না আসায় তিনি সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, ভালোভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিটি বরাদ্দেই কিছু-না-কিছু অনিয়ম রয়েছে, জনস্বার্থে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
একইভাবে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা হাসান যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ১০৯টি প্রতিষ্ঠানে নামে ১৬০ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। এই উপজেলার বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দকৃত চালের সব টাকা পাওয়া যায়নি। সরকারের উচিত মানবিক সাহায্যের এসব কর্মসূচি তদন্ত করে দেখা।


আরো সংবাদ



premium cement