০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অত্যাচার ও নিপীড়নের কথা শোনালেন আফগানিস্তানের বাগরাম কারগারের সাবেক বন্দীরা

বাগরাম কারগারের সাবেক কারাবন্দী হাজীমুমিন হামজা (মাঝে) - ছবি : সংগৃহীত

হাজী মুমিন হামজা এক বিশাল ও অন্ধকার করিডোর দিয়ে হাঁটছিলেন। ওই সময় তিনি ওই স্থানটি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তিনি এমনভাবে দেখছিলেন যেন তিনি এ জায়গাটিকে আগে দেখেননি। ৩৬ বছর বয়সী এ দাড়িওয়ালা লোকটির মাথায় ছিল কালো পাগড়ি আর গায়ে ছিল পাঞ্জাবি-পাজামা। আজ তিনি তালেবান যোদ্ধাদের সাথে এখানে এসেছেন। তিনি এমন এক স্থানে এসেছেন যার কথা তিনি কখনো ভুলতে পারবেন না। হঠাৎ তার চোখ একটি খালি চেয়ারে আটকে যায়।

এ সময় হাজীমুমিন হামজা বলেন, তারা আমাদেরকে (কারাবন্দী) এ চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখত। আমাদের হাত-পা বেঁধে আমাদের ওপর ইলেক্ট্রিক শক দেয়া হতো। মাঝে মধ্যে তারা আমাদের এ চেয়ারে বেঁধে রেখে খুব মারধর করত। তিনি এসব কথা বলেছিলেন তার জেলে আটক থাকার সময় হওয়া নির্যাতনের কথা স্মরণ করে। তিনি এ কুখ্যাত বাগরাম কারাগারে ২০১৭ সাল থেকে তালেবানের হাতে কাবুলের পতন হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিলেন। পরে তিনি কারাগার থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশের এ কারাগারটিকে প্রস্তুত করে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারাগারটি বাগরাম কারাগার নামে পরিচিত। বাগরাম কারাগারকে আফগানিস্তানের গুয়ানতানামো বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ২০০১ সাল থেকে এখানে তালেবান যোদ্ধা ও সন্দেহভাজন সাধারণ আফগানদের আটক করে রাখত। ওই সময় তালেবানদের ক্ষমতা থেকে অপসারিত করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তখন তালেবান যোদ্ধারাও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের অব্যাহত সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছিল। ওই মার্কিন-তালেবান সঙ্ঘাত ২০ বছর ধরে চলছিল।

এ কারাগারটি ছিল বাগরাম বিমান ঘাঁটির অভ্যন্তরে। পারওয়ান প্রদেশের এ কারাগারটিকে অস্থায়ী বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু, পরে এ বিষয়টা অন্য দিকে মোড় নেয়, কারণ এ কারাগারটিকে স্থায়ীভাবে বন্দীদের আটক রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এখানে পাচঁ হাজার কারাবন্দীকে আটক করে রাখা হয়েছিল। পরে ১৫ আগস্ট তারিখে তালেবান কর্তৃপক্ষ আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ওই কারাগারটিকে খুলে দেয়।

বাগরাম কারাগারের সাবেক বন্দী সুলতান। তিনি এ জেলে ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত আটক ছিলেন। এ কারাগারে তার ওপর ভয়ানক নিপীড়ন ও অত্যাচার করা হয়। ওই ভীষণ অত্যাচারে তিনি তার সকল দাঁত হারান। যদিও আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইন অনুসারে এ ধরনের অত্যাচার অবৈধ। ৪২ বছর বয়সী এ সাবেক বন্দী তার পুরো নাম বলেননি। কিন্তু, অত্যাচারের প্রমাণ স্বরূপ তিনি তার দন্তহীন মুখ খুলে দেখান।

সূত্র : আল-জাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement