১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


আত্মসাৎ অপচয় অপব্যয়ের অর্থনীতি

আত্মসাৎ অপচয় অপব্যয়ের অর্থনীতি - ছবি : সংগৃহীত

মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রয়াস প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত শক্তি ও সম্ভাবনা শনাক্তকরণ যেমন জরুরি তেমনি এর অন্তর্নিহিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক দুর্বলতা, স্বচ্ছতা জবাবদিহির অসঙ্গতি ও ন্যায়নীতিনির্ভর আর্থসামাজিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় অপারগতার দিকটিও আরো বেশি সচেতন সতর্কতার সাথে বারবার পর্যালোচনাযোগ্য। কেননা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধু ভাব-ভাবনার তথা প্রচার প্রচারণার বিষয় হয়ে থাকলে এবং এ ব্যাপারে বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ও স্বচ্ছতা জবাবদিহির আবশ্যকতা যদি অমনোযোগের হাতে বন্দী থাকে কিংবা প্রগলভতায় ভিন্ন খাতে প্রবাহের প্রয়াস পরিলক্ষিত হয় তা হলে স্বপ্ন দেখাই শুধু সার হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাস্তবতার বাসর পাবে না।

ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে মূল্যবান ও কারুকার্য সম্বলিত আধুনিক সিগন্যাল বাতি বসানো আছে। ডিজিটাল পদ্ধতির এসব সিগন্যাল সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় স্বাভাবিকভাবেই বেশি। বাস্তবে দেখা যায়, এগুলোর প্রকৃত ব্যবহার একেবারে নেই। বিপুলসংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ তাদের মান্ধাতার আমলের আমলাতান্ত্রিক উপস্থিতি দিয়ে, সম্পূর্ণ অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে, ‘নিজের ব্যক্তিগত খেয়াল খুশি ও বিচার’ মতো ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে চলছে। এক দিকে ডিজিটাল সিগন্যাল লাইটও জ্বলছে আবার তার বিপরীত বলয়ে ট্রাফিকের ম্যানুয়াল (ব্যক্তিগত) কসরতও চলছে। এ অব্যবস্থাপনায় শুধু ট্রাফিক পুলিশের নয়, সড়ক ব্যবহারকারী লাখ লাখ মানুষের সহস্র শ্রমঘণ্টা বিনষ্ট হচ্ছে। মহার্ঘ্য মূল্যে ক্রয় করা এবং সংস্থাপিত সিগন্যালিং সিস্টেমের ব্যবহারিক কার্যকারিতা না থাকলেও সেগুলো নিয়মিত জ্বলছে, ইনডিকেশন দিয়ে চলছে এবং সেগুলোর সংস্থাপন ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিশ্চয়ই এখনো বহন করতে হচ্ছে। বছর চারেক আগে মহানগরের দুই মেয়র মহোদয় সিটি করপোরেশন সিগন্যালিং সিসটেমে ফিরে যাবার একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু কাদের কারসাজিতে তা দু’দিনেই প্রত্যাহার করতে হয় তার বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ ও প্রতিকার প্রয়োজন। প্রয়োজনে একটির পর একটি পয়েন্টে পর্যায়ক্রমে প্রকৃত ব্যবস্থায় ফেরায় স্থির প্রাজ্ঞ থাকতে হবে। সড়কে কিংবা ভবনে অজস্র ডিজিটাল বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন প্রচারের এমন বাহুল্য বিশ্বের অনেক শিল্পোন্নত দেশেও দেখা যায় না। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সংগ্রামে রত একটি অর্থনীতির জন্য এ মুহূর্তে এ ধরনের ব্যয়বহুল আয়োজন বালসুলভ ব্যবস্থা নয় কি?

এক পর্যালোচনায় সদ্য প্রয়াত আকবর আলি খান বলেছিলেন আমলা ও প্রশাসনের সেবাদানের সার্বিক সমস্যার কথা। করোনা বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকালে বৈশ্বিক মন্দার কবলে পড়া মধ্যম আয়ের দেশ অভিলাষী একটি দেশে সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আর্থিক ‘অন্তর্ভুক্তি’র প্রসার শুধু পুষ্টিকরই নয়, এটিই এখন অন্যতম দৃষ্টিভঙ্গী হওয়া উচিত। কিন্তু তা শুধু কথার কথায় কিংবা বিদেশে বিশেষ সেমিনারে স্বীকৃতি ও প্রশংসা প্রাপ্তির মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে বিকশিত হতে পারে না। অন্তর্ভুক্তির দর্শন সার্বিকভাবে টেকসই ও বাস্তবায়নযোগ্য করা উচিত। প্রশাসনে, আর্থসামাজিক পরিবেশে, সংস্থায় প্রতিষ্ঠানে, দেশজ সংস্কৃতিতে সর্বত্র পক্ষভুক্তকরণের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচ্যুৎকরণ ব্যবস্থাপনার উপস্থিতিতেই অন্তর্ভুক্তি উন্নয়ন দর্শন যাতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রাষ্ট্রের সেবা ও সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে (ক্ষেত্রবিশেষে) বিশেষ প্রাধান্য প্রাপ্তি এবং অন্যায় অনিয়মে প্রতিকার প্রতিবিধান এ পক্ষপাতিত্ব কিংবা গণ-আবেদন উপেক্ষা অবিবেচনা অপারগতার মধ্যে অন্তর্ভুক্তির মতো কার্যকর দর্শন হারিয়ে যেতে পারে না। শত শত ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দীর্ঘ দিন কর্মহীন অবস্থায় বেতনভাতাদি পরিশোধ করতে হচ্ছে, ঊর্ধ্বতন পদে উন্নীত হয়েও আগের পদে কাজ করতে হচ্ছে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটার কারণে যে ২/৩ গুণ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, ব্যাংকিং খাতে গণডিপোজিট ও সঞ্চিতি বড় দাগে আত্মসাৎ ও লোপাট হচ্ছে, তা তো যেকোনো বিবেচনায় ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিস প্রডিউস না হয়েও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়’। হু হু করে বেড়ে যাওয়া দ্রব্যমূল্য, নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, পাবলিক অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে মহার্ঘ্য ব্যয়ে ব্যবসাবাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় বাড়তি ব্যয় বৃদ্ধির নানান অস্থিরতায় ব্যাহত উৎপাদন, সরবরাহে বিঘ্ন, সিন্ডিকেশনে, নানান দুর্ঘটনায়, দুর্নীতিতে, রাসায়নিক অগ্নিকাণ্ডে যে বিপুল ক্ষতি হয় সেটিই সেটিই এই মুহূর্তে অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রধান প্রতিপক্ষ ও চ্যালেঞ্জ। এক দিকে বলা হচ্ছে, দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীর সংখ্যা কমছে, সার্বিক দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, তার বিপরীতে ধনী-দরিদ্র সব শিক্ষার্থীকে ভর্তুকির টাকায় বিনামূল্যে পাঠ্য বই সরবরাহের যৌক্তিকতার যথার্থতার সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় না। সবার হাতে বই পৌঁছাতে পারার শিক্ষা-সামাজিক তাৎপর্য নিশ্চয়ই আছে, এটি সরকারের একটি সৃজনশীল ও দূরদর্শী প্রশংসনীয় পদক্ষেপও বটে; কিন্তু এই আর্থিক ব্যয়ের স্বচ্ছতা, পাঠ্যবই ও বিষয়ের মান (যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে চক্ষুষ্মান করতে বড় বিনিয়োগ) ও প্রভাবক ভূমিকা পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বিদ্যুতে ব্যাপক ভর্তুকি, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় কার্যকর মনোযোগ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ব্যতিরেকে, উপযুক্ত মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে দায়দায়িত্ব বুঝে না পেয়ে তথা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন নিশ্চিত না করে পাবলিক ফান্ড থেকে সরকারি বেসরকারি সব শিক্ষকের পূর্ণ বেতনভাতার ভার বহন কাউনটার প্রডাকটিভ যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ রাখা দরকার।

বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যাবহুল, স্বল্প কৃষিজমি, বেকারের ভারে ন্যুব্জ, অতি আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠা, বৈদেশিক মুদ্রা আনয়নকারী ও প্রযুক্তিবাহী বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু এ দেশে বিগত পাঁচ দশকে আসা বৈদেশিক বিনিয়োগ এর স্থিতিপত্র কষলে দেখা যায় বা যাবে, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ সূত্রে বৈদেশিক মুদ্রা ততটা আসেনি যতটা বরং দেশী মুদ্রায় অর্জিত মুনাফা বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে গিয়েছে (যেমন টেলিকম ও টোবাকো সেক্টরে) বা যাচ্ছে। আসেনি তেমন কোন শ্রমঘন শিল্প। বাংলাদেশের অদক্ষ শ্রমিকরা যখন অধিক অর্থ ব্যয় করে (বণিক বার্তায় প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন) স্বল্প মজুরিতে বিদেশ যেয়ে অনেক ক্ষেত্রে মানবেতর জীবন যাপন করছে এবং দেশে শিক্ষিত বেকারের মিছিল যখন দ্রুত ধাবমান, তখন এ দেশে স্টেট অব আর্ট এ চালিত কতিপয় বিদেশী শিল্প (যেমন সিমেন্ট, সিগারেট, আর্থিক, টেলিকম, শিপিং) গড়ে উঠছে আর গার্মেন্টসসহ প্রায় সব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ে বিদেশীদেরই মোটা বেতনে অধিক কর্মসংস্থান হয়েছে বা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশীরা বছরে ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি বেতন, পারিশ্রমিক বাবদ নিয়ে যাচ্ছে, তাদের কাছ থেকে ন্যায্য কর আদায় নিয়েও অপারগতা রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, দেশে রেমিট্যান্স আসছে অধিক অর্থ ব্যয় করে বিদেশে যাওয়া অদক্ষ শ্রমিকদের কাছ থেকে। সেকেন্ড হোম কিংবা মেধা পাচার হয়ে যাওয়া শিক্ষিত, পেশাজীবীদের কাছ থেকে অর্থনীতি কোনো প্রত্যাবাসন পায় না। তারা দেশী পুঁজি বা মুদ্রা বরং বিদেশে নিয়ে যান। আবার অন্য দিকে দেশে প্রত্যাবাসিত অর্থের টাকা অলস হয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং সা¤প্রতিক টানাটানিতে তা বোঝা যায়। আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ একটি আনুপাতিক পর্যায় পর্যন্ত হওয়া বা থাকার আবশ্যকতা রয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে সদাচঞ্চল ও সক্রিয় অর্থনীতির জন্য রিজার্ভ অবশ্যই ভালো। কিন্তু অলসভাবে পড়ে থাকার কারণে রিজার্ভের বৃদ্ধি এবং সেই বৃদ্ধির জন্য আত্মতৃপ্তি ও গর্ববোধ বেমানান বৈকি। কেননা ‘প্রশান্তিবোধ’ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সচেতনতায় শৈথিল্য আনতে পারে। অতিরিক্ত তারল্য বিনিয়োগ ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে, মানি সাপ্লাইয়ে প্রন্থিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। গত কয়েক বছর ডলারের সাথে টাকার বিনিময় হার স্টেটিক রাখতে গিয়ে আত্মঘাতী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থ ব্যবস্থাপনায় অলস অতিরিক্ত রিজার্ভ একটা ‘অতি নিরাপদ’ ধারণার জন্ম দিয়ে কর্ম ও দায়িত্ব সচেতনতাকে প্রভাবিত করে ব্যয়ে দায়িত্বহীন ও বলগাহীন করে দিতে পারে।

একটি বৃহৎ দেশ ও অর্থনীতির পেটের মধ্যে, বিরানব্বই শতাংশ উন্মুক্ত সীমান্ত পরিবেষ্টিত ছোট একটি দেশ ও অর্থনীতির সীমান্ত বাণিজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাকে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নব্যবস্থাপনাকে কিভাবে পদে পদে প্রভাবিত করতে পারে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান তার বড় উদাহরণ। বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে বহির্বাণিজ্য ইনফর্মাল ট্রেড আর অসমর্থিত বাণিজ্য বিনিময়-বিনিয়োগ-তাড়িত, শাসিত। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের উন্নয়ন অভিমুখী অর্থনীতি হিসেবে পদে পদে হিসেবি, সচেতন ও স্বাবলম্বী হওয়ার বিকল্প নেই। উৎসবের অর্থনীতির এক হিসাবে দেখা গিয়েছিল, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ থেকে বছরে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের শুধু প্রাণিসম্পদ আমদানি হলেও তার বেশির ভাগ লেনদেন চলেছিল হুন্ডি বা অসমর্থিত ব্যবস্থায়। আর এ ক্ষেত্রে সবচাইতে অন্তর্ঘাতমূলক ব্যবস্থা ছিল এবং এখনো আছে কি না বোঝা যায় না, বাংলাদেশে আমদানি করা ঐসব পশুর কাঁচা চামড়া সীমান্ত বিনিময় বাণিজ্যে পাচার হয়ে যায়। এই বিষয়গুলোর প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিকারমুখী সংস্কার ব্যবস্থাপনা অত্যাবশ্যক হবে মধ্যম আয়ের দেশের পথে হাঁটতে হলে।

কর-জিডিপি রেশিওর কথা এসেই যায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পারদর্শিতার বিচার বিশ্লেষণ করতে গেলে। বাংলাদেশে কর-জিডিপির রেশিও ১০-১১ এর কাছাকাছি ঘুরপাক খাচ্ছে। সাধারণ হিসাব অনুযায়ী জিডিপির ন্যূনতম ১৭ ভাগ কর রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা। হচ্ছে ১০-১১ ভাগ। অর্থাৎ জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ কর (যা জাতীয় বাজেট ঘাটতির চাইতে বেশি) পরিশোধিত হচ্ছে না বা আহরিত হচ্ছে না। অর্থাৎ ন্যায্য কর রাজস্ব আহরিত হলে বাজেটে ঘাটতি হতো না। কর রাজস্ব আহরণের পথে অগ্রসর হওয়ার পথে যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে করদাতা ও আহরণকারীর মনোভঙ্গিকে দায়িত্বশীল, উন্নত ও পরিশীলিত করণের অবকাশ অনস্বীকার্য। অনস্বীকার্য পদ্ধতি সহজীকরণ ও করদাতা বান্ধবকরণের যৌক্তিকতাও। নাগরিকরা অবশ্যই কর দিতে চান এবং দেবেন, তবে ফাঁকি ঝুঁকির ফাঁকফোকর এড়িয়ে মাড়িয়ে। করখেলাপি বা ব্যাহতকারীকে যথাজবাবদিহিতার আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপ যেমন জরুরি, তেমনি কর দেয়ার পরিবেশ তৈরি, করদাতা ও আহরণকারীর মধ্যেকার যোগাযোগটি অধিকতর স্বচ্ছ ও পারস্পরিক সহায়তাধর্মী হওয়া আবশ্যক। প্রয়োজন করের আওতা ও করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য গবেষণালব্ধ পদ পদক্ষেপ গ্রহণে অবিরাম অবিচল থাকা। প্রদত্ত কিংবা আহরিত করের টাকা সবার মধ্যে বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমান ও ন্যায্যতার সাথে পুনঃবণ্টন বা পুনঃপ্রদান (Transfer)-এ থাকতে হবে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতামূলক পথ বা পন্থা। বাজেট বণ্টন বরাদ্দ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, পাবলিক ফান্ড ব্যবহারের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে আহরিত করের টাকা ব্যয়ের বিপরীতে গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস যথাযথ উৎপাদিত হবে না। ওই অর্থ অপাত্রে পড়ে অধিকতর অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা প্রকারান্তরে করদানে নিরুৎসাহ সৃষ্টি করতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এ পন্থা রীতিমতো হুমকিস্বরূপ।

সব উন্নয়নভাবনায় আস্থা একটি বড় জিনিস। বিশেষ করে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নিকট অতীতের কয়েকটি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাতে ও পুঁজিবাজারে যেসব আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে বা হচ্ছে তাকে ‘সামান্য ক্ষতি’ হিসেবে দেখার অবকাশ নেই এ জন্য যে, আখেরে এসব ক্ষত বৃহৎ আকারে ব্যাংকিং সেক্টর, মানি মার্কেট ও পুঁজিবাজারকে আস্থাহীন করে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। একটি প্রাগ্রসরমান অর্থনীতিতে আস্থা বিনষ্টকারী এ ধরনের বিচ্যুতি বিভ্রান্তি বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে।

লেখক : উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক


আরো সংবাদ



premium cement
কালীগঞ্জে আম পাড়তে গিয়ে কিশোরের মৃত্যু ‘নুসুক’ কার্ডধারী ছাড়া অন্য কারো মাশায়েরে মুকাদ্দাসায় প্রবেশ নিষিদ্ধ বোলারদের নৈপুণ্যে কষ্টার্জিত জয় বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ইসলামের সঠিক দাওয়াত পৌঁছাতে হবে : মোবারক হোসাইন নাঙ্গলকোটে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকা তরুণীর অনশন, পলাতক প্রেমিক চার উইকেট নেই জিম্বাবুয়ের বরিশাল অঞ্চল জামায়াতের উপজেলা আমির সম্মেলন অনুষ্ঠিত তারা আহম্মকের স্বর্গে বাস করেন : শাহজাহান খান অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক পহেলা বৈশাখ আমাদের মূল চালিকাশক্তি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাণীনগরে নদীতে ডুবে জেলের মৃত্যু ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ায় জনগণের আদালতে আ’লীগের বিচার হবে: জোনায়েদ সাকি

সকল