০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


হ্যাটট্রিক স্বর্ণে সোহেল প্রথম

-

আগের দিন দু’টি করে স্বর্ণপদক জিতে হ্যাটট্রিক স্বর্ণের আলোচনায় ছিলেন অলিম্পিকে নিজ যোগ্যতায় কোয়ালিফাই করা আরচার রোমান সানা, ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড কাপের স্বপ্ন দেখা ইতি খাতুন ও সাইলেন্ট কিলার সোহেল রানা। সবাইকে টেক্কা দিয়ে সবার আগে হ্যাটট্রিক পদক আদায় করে নেন রাজশাহীর ছেলে সোহেল রানা। আরচারিতে হ্যাটট্রিক পদকের কথা এলেই সবার আগে নিতে হবে সোহেল রানার নাম। তবে তার আগে ১৯৮৫ সাফ গেমসে সাঁতার ডিসিপ্লিনে ঢাকায় পাঁচটি স্বর্ণ জিতেছিলেন মোশাররফ হোসেন।
অভিজ্ঞদের সাথে পাল্লা দেয়ার কোনো মুভমেন্টই ছিল না সোহেল রানার। তিনি জানেন রোমান সানার তুলনায় তিনি কতটা পিছিয়ে। তা ছাড়া রোমান ও সোহেল দু’জন দুই বিভাগের। রোমান ও ইতি খাতুন খেলেন রিকার্ভ বিভাগে আর সোহেল খেলেন কম্পাউন্ড বিভাগে। তিনজনের ছিল দু’টি করে পদকের স্বাদ। আজ এককে জিতলে হয়ে যাবেন তিন স্বর্ণপদকের গর্বিত অ্যাথলেট। সে হিসেবে স্বাভাবিক নিয়মে গতকাল পোখারা রঙ্গশালার আরচারি দলের সাথে এসেছেন গ্রাউন্ডে। ফিকশ্চারের হিসেবে কম্পাউন্ডের খেলাই আগে হয়। ফলে সোমা বিশ্বাসের পর দিনের দ্বিতীয় কম্পাউন্ড এককের প্রতিযোগী হিসেবে ট্রাকে আসেন সোহেল। হাত পা কিছুটা কাঁপছিল। প্রথম দুই ধাপে নিজেকে প্রস্তুত করতে সময় লেগেছে। কিছুটা পিছিয়েও পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন ঘটেনি। সোহেল ১৩৭-১৩৬ পয়েন্টে ভুটানের তানদিন দর্জিকে হারানোর সাথে সাথে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তিনটি স্বর্ণের অধিকারী হয়ে গেলেন সোহেল রানা।
এর কিছুক্ষণ পরই অনুষ্ঠিত হয় রিকার্ভের খেলা। ইতি খাতুন আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তৃতীয় স্বর্ণের জন্য। চাপ কী জিনিস তা তিনি অনুভব করেননি অল্প সময়ের জন্যও। সাহসের সাথেই রিকার্ভ এককে ৭-৩ সেট পয়েন্টে ভুটানের প্রতিযোগীকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতেন।
সর্বশেষ প্রতিযোগী হিসেবে ট্রাকে আসেন আইকন রোমান সানা। প্রতিপক্ষ ভুটানের কিনলে শেরিংকে কোনো পাত্তা না দিয়ে ৭-১ সেট পয়েন্টে জিতে নেন তৃতীয় স্বর্ণ। এর আগে এই তিনজনেই মিশ্র ও দলগততে স্বর্ণ পেয়েছেন।
আরচারির প্রথম হ্যাটট্রিকম্যান হিসেবে সোহেল রানা বলেন, ‘মূলত এ দিকে আমার কোনো খেয়ালই ছিল না। ভেবেছিলাম প্রথম ম্যাচ হবে রিকার্ভ বিভাগে। হঠাৎ নাম ঘোষণা করায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। জিয়াউর স্যার সাহস দেন। বলেন তুই তো সবার ওপরে। চিন্তা কী। তার পরও প্রথম দুই সেটে একটু পিছিয়ে গিয়েছি সত্যি কিন্তু সাহস হারাইনি। যখন আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় তখন একটু অপ্রস্তুত হয়ে যাই। আনন্দের ভাষা বোঝাতে পারছি না। আগে কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি বলে কারো কোনো কথার উত্তর গুছিয়ে দিতে পারছি না।’
সহজ সরল মুখবয়বের সোহেল রানা ছিলেন ফ্টুবল খেলোয়াড়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের লোকাল লিগে ক্লাবের হয়ে খেলতেন। এক দিন প্র্যাকটিসের সময় দেখেন আরচারির উদ্বোধন হচ্ছে। কাছে গিয়ে তীরধনুকের খেলাটি দেখে ভালো লেগে যায়। ভর্তি হন রাজশাহীর একটি ক্লাবে। পরে সেনাবাহিনীর খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি হন। সাফল্য পেতে সময় লাগেনি। তার কথায়, ‘আমি সব রকম চেষ্টা করেছি শীর্ষে ওঠার। এক বন্ধু যখন বলল সাঁওতালের তীর ধনুক দিয়ে কি উপজাতি হয়ে যাবি, তখন তাকে বলেছিলাম দেখিস আমাকে টিভিতে দেখাবে। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে টিভিতে দেখানোর কৃষক বাবা আফসার আলি বলেছিলেন আমার ছেলে অনেক উপরে উঠবে। তার কথাটিই সত্যি হলো। আমি এই উন্নতির ধারা ধরে রাখতে চাই। কোচদের প্রতি কৃতজ্ঞ যারা আমাকে এই পর্যন্ত আসতে সাহায্য করেছেন।’
রোমান সানা ও ইতি খাতুনের কথায়, ‘বারবার ভারতের কথা বলে আমাদের লেভেলকে খাটো করে দেখা হয়। পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই আমরা এসেছি। ভুটান, শ্রীলঙ্কাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। ভারত এলে হয়তো পদক ভাগাভাগি হতো। একচেটিয়া আমরাও ১০টি পদক পেতাম না, তারাও পেত না। ডমিনেট করার দিন শেষ। আমরা এখন বিশ্বমানের। তবে হ্যাঁ পদকের কথা যদি বলেন তা হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা কয়টা খেলা খেলি। যত বেশি খেলা যাবে কনফিডেন্ট লেভেল তত বেশি হবে। যদিও আমরা এখন কোনো দলের বিপক্ষে খেলতে ভয় পাই না। তিনটি পদক পেয়েছি এটি অবশ্যই গর্বের ও সৌভাগ্যের। ভবিষ্যতে এটি প্রেরণা হয়ে থাকবে।’


আরো সংবাদ



premium cement