২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ব্যাঙের বন্ধু ইঁদুর

-

এক ছিল ব্যাঙ। সে নদীর পাড়ে ছোট্ট পাহাড়ে একটি ঝোপে বাস করত। তার ছিল দুটো ছেলেমেয়ে। মায়ের খুব ইচ্ছে ছেলেমেয়ে দুটোকে শিক্ষিত করবে, ব্যাঙের মতো ব্যাঙ যেন হতে পারে। সে জন্য মা প্রতিদিন সকালে-বিকালে ছেলেমেয়েদের পড়াতে বসায়।
ছেলেটার নাম টিয়াং আর মেয়েটার নাম পিয়াং। টিয়াং আর পিয়াং যেমন দেখতে মিষ্টি তেমনি দুষ্টু। সারাক্ষণ একজন আরেক জনের পেছনে লেগেই থাকে। যখনই নদীতে গোসল করতে যায় তখনই শুরু হয় এদের লুটিপুটি। একজন আরেকজনের মাথায় উঠে পানিতে লাফ দেয়। ডুব দিয়ে অনেকক্ষণ পানিতে থাকে। গোল্লাছুট বউচি খেলায়।
সকালে উঠে আজ মা পিয়াং কে বলল ‘বলো তো মা কিভাবে বর্ষা এলে গান গাইতে হয়?’ পিয়াং বলল ‘ক্যাকর ক্যাং ক্যাকর ক্যাং।’ এই গান শুনে মায়ের চোখে জল চলে এলো। এত্ত কষ্ট করে মা চাচ্ছে ব্যাঙবাচ্চাগুলোকে ব্যাঙের মতো ব্যাঙ বানাতে আর বাচ্চাগুলো কি না এখনো বর্ষা এলে কিভাবে গান গাইতে হয় সেটিই জানে না।
পিয়াং আর টিয়াং ব্যাঙের গান শিখতে মোটেই আগ্রহী নয়। দুই ভাইবোন সেদিন গিয়েছিল এক কনসার্ট দেখতে। আয়োজন করেছিল বানর ভাইয়া। ধবধবে ফর্সা এক বানর ইংরজিতে গান গেয়েছিল সে কনসার্টে। পিয়াং আর টিয়াং শুনেছে এই ধবধবে ফর্সা ইংরেজ বানরটিকে বানরেরা আমন্ত্রণ করেছিল শীতপ্রধান দেশ থেকে। সেখানে বানরগুলো ইংরেজিতে গান গায়। বানরের গান পিয়াং আর টিয়াং খুব ভালোবাসে আর সারাক্ষণ ঘুনঘুন করে গায়।
মা একদিন শুনতে পেল টিয়াং ঘুন ঘুন করে একটি ইংরেজি গান গাইছে... এ লিটালর ক্রিয়েচার ভেরি বিউটিফুল। সি হেজ থিফট মাই হার্ট। আই লাভ হার। এ গান শুনে মার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ছেলেমেয়েগুলো কি বিজাতীয় সংস্কৃতিতে ডুবে যাচ্ছে। এমন হলে তো এরা ওদের নিজস্ব সংস্কৃতি কেই ভুলে যাবে। মায়ের মনে পড়ল মেয়েটি সেদিন ঠিকমতো বর্ষার গানটাও গাইতে পারেনি।
ব্যাঙ মা ভেবে ভেবে ক্লান্ত। কিভাবে ছেলেমেয়ে দুটোকে ভদ্র, মার্জিত, শিক্ষিত ও নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করা যায়। রাতে শুয়ে শুয়ে মা বাচ্চাদের কবিতা গল্প গান শুনায়।
মা সকালে পাঠালো বাচ্চা দুটোকে হিসাব গণনা শেখার জন্য। ঝোঁপের পাশে ছোট্ট পেয়ারা গাছে নিচের ডান ডালে কয়টা পাতা আছে তা গুণতে পাঠিয়েছেন মা। মায়ের চেষ্টা আর দুশ্চিন্তা দেখে পিয়াং আর টিয়াং ও ভেবেছে তারা ভালো হয়ে যাবে। আর কখনো দুষ্টুমি করবে না।
দৌড়ে পিয়াং আর টিয়াং পেয়ারা গাছে লাফিয়ে উঠল। কিন্তু উপরে উঠেই দেখল একটা ইঁদুর সেখানে বসে আছে। ইঁদুরটিকে দেখেই ব্যাঙছানা দুটো কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে ফিরে এলো। বলল- মা জানো, পেয়ারা গাছে একটি ইঁদুর। কি ভয়ানক চোখে আমাদের দিকে তাকাল।’ আমরা ভয়ে চলে এসেছি।
কথা শুনে মা ছোটলে পেয়ার গাছের দিকে। সেখানে গিয়ে সে দেখল গাছে সত্যি একটি ইঁদুর। বাচ্চারা সত্যি কথা বলেছে সে জন্য মা খুব আনন্দিত হলো। গর্বে তার বুকটা ফোলে উঠল। সে চুপিচুপি গাছের ডালে উঠেই ইঁদুরটিকে ধরতে গেল। তখন ইঁদুরটি আসলে খেলছিল। ব্যাঙের আসার ব্যপারটি সে খেয়াল করেনি। ব্যাঙ যে হা করে ইঁদুর টিকে ধরতে যাবে তখন ভয়ে ইঁদুরটি চোখ বন্ধ করে ফেলল।
ব্যাঙ মা দেখল আসলে এটি বড় ইঁদুর না। ছোট্ট একটা তুলতুলে ইঁদুর ছানা। ছানাটিকে দেখে ব্যাঙের মায়া হলো। মুখে নিতে গিয়েও ইঁদুর ছানাটিকে মুখে নেয়নি। ইঁদুর ছানাটি তখন চোখ খুলে ব্যাঙের মহানুভবতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল।
ইঁদুর ছানাটি ব্যাঙের কাছে এসে ব্যাঙটিকে জড়িয়ে ধরল। একটি ছোট্ট চুমু খেল। ইঁদুর ছানার ব্যবহারে ব্যাঙ মা খুব খুশি হলো।
ইঁদুর ছানাটিকে ব্যাঙমা জিজ্ঞাসা করল তুমি এখানে এসেছ কেন? ইঁদুর আধো আধো কণ্ঠে বলল ‘আমি এখানে এসেছি দুটো সুন্দর ব্যাঙ ছানার খেলা দেখতে। তাদের কথা শুনতে। আমার কোনো বন্ধু নেই। তাই তাদের সাথে খেলা করতেই এসেছিলাম।’
ব্যাঙ মা তখন ইঁদুর ছানাটিকে সাথে নিয়ে বাড়ি এলো। পিয়াং আর ইয়াংয়ের ভয় দূর হয়ে গেল। ইঁদুর ছানাটিকে তাদের বন্ধু করে নিলো। পিয়াং আর ইয়াং দু’জনে মিলে ব্যাঙদের জাতীয় সঙ্গীত... ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ গেয়ে শোনাল। শুদ্ধ সুরে বাচ্চাদের কণ্ঠে ব্যাঙদের জাতীয় সঙ্গীত শুনে মা আনন্দে কেঁদে ফেলল। এভাবে এক দিন পিয়াং আর ইয়াং ব্যাঙের মতো ব্যাঙ হয়ে উঠল।


আরো সংবাদ



premium cement