০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,
`

হযরত বেলালের কাহিনী

হযরত বেলালের কাহিনী - মুফতি আবুল কাসেম - ফাইল ছবি

দ্বীনের জন্য ত্যাগ স্বীকার, শারীরিক-মানসিক, নির্যাতন সহ্য করা এবং মৃত্য নিশ্চিত জেনে ও সামনে এগিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। তবে এদের মাঝে হজরত বেলাল রা: অন্যতম। কারণ, ইসলাম গ্রহণের কারণে তাকে যে কঠিন অগ্নি পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, অন্য কাউকে এমন বিপদের সম্মুখীন হতে হয়নি। প্রাথমিক যুগে অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে ও এক আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। তার মা ছিল মক্কার কালো ক্রীতদাসীদের একজন। সে কারণে কেউ কেউ তাকে কালো দাসীর ছেলে বলেও ডাকত। হজরত বেলাল রা: লালিত-পালিত হন মক্কা মুকাররমায়। তিনি ছিলেন আবদুদ-দার গোত্রের কয়েকজন এতিম বালকের ক্রীতদাস। মৃত্যুর আগে তাদের পিতা কাফেরদের নেতা উমাইয়া ইবনে খলফকে তাদের অভিভাবক নিযুক্ত করে যান।

নতুন ধর্ম ইসলামের আলো যখন মক্কা নগরী আলোকিত হয়ে উঠল, মহানবী সা: যখন কালেমার দাওয়াত প্রচার শুরু করলেন, হজরত বেলাল রা: তখন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। এমন এক সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, যখন পৃথিবীর বুকে তিনি এবং কয়েকজন লোক ছাড়া আর কোনো মুসলিমদের অস্তিত্ব ছিল না। ইসলাম গ্রহণকারী প্রভাবশালীদের ওপর মুশরিক নেতৃবৃন্দ কোনো নির্যাতন করার সাহস পায়নি। কারণ, বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো শক্তিশালী আত্মীয়স্বজন ছিল। পক্ষান্তরে দুর্বল দাস-দাসীদের পক্ষে দাঁড়ানোর মতো কোনো আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব ছিল না। ফলে অসহায়- দুর্বলদের ওপর কুরাইশ নেতারা চাপিয়েছে নির্যাতনের পাহাড়। এ অসহায় লোকদের ওপর নির্যাতন চালানোর দায়িত্ব নিয়ে ছিল একদল কঠিন ও নির্দয় কুরাইশি কাফের। আবু জাহল হজরত সুমাইয়্যা রা:কে হত্যা করে এ দায়িত্ব পালনে সর্বপ্রথম কৃতিত্ব দেখায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই পাষণ্ড হৃদয় কাফেরদের অত্যাচার ছিল চরম অমানবিক। বেলাল রা:কে নির্যাতন করার দায়িত্ব নিয়েছিল উমাইয়া ইবনে খলফ এবং তার পাষাণ হৃদয়ের কিছু সঙ্গী। তারা চাবুকের আঘাতে তাকে রক্তাক্ত করত আর তিনি বলতেন, আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়। আহাদ, আহাদ। তারা তার বুকের ওপর চাপিয়ে দিত বড় বড় পাথর আর যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তিনি বলতেন, আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়। আহাদ, আহাদ।

তারা যতই তার কষ্টকে তীব্র করে তুলত তিনি বলতেন, এ একটি কথাই। আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়। আহাদ, আহাদ। তারা তাকে জোরাজুরি করত লাত, উজ্জা দেবদেবীর নাম নিতে। কিন্তু তিনি অবিরাম শুধু আল্লাহ ও মুহাম্মদ নামই উচ্চারণ করতেন। তারা বলত, আমরা যেভাবে আমাদের দেবদেবীর নাম জপ করি তুইও সেভাবে কর। বেলাল রা: জবাবে বলতেন, ওইগুলো আমি ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারি না। এ কথা শুনেই তারা তাকে আরো বেশি কষ্ট দিত। আরো ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালাত। পাপিষ্ঠ উমাইয়া যখন নির্যাতন চালাতে চালাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ত, তখন হজরত বেলাল রা:-এর গলায় মোটা রশি বেঁধে দুষ্ট বালকদের হাতে তুলে দিয়ে বলত, একে মক্কার পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথে ঘুরিয়ে নিয়ে এসো। আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনার অপরাধে বেলাল রা:কে যখন এভাবে গলায় রশি বেঁধে নেয়া হতো, এই কষ্ট তার কাছে খুব মজাদার লাগত। তিনি তখন ঈমানের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতেন আর জান্নাতি সঙ্গীত গাইতেন আহাদ, আহাদ। আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়। তিনিই আমার রব। তিনিই আমার সব। অবিরাম চলতে থাকত তার মুখের এই সুমধুর সুর। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা।


আরো সংবাদ



premium cement