২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আ’লীগ নেতারাও ক্যাসিনোর টাকার ভাগ পায় : জামায়াত

-

হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, গুম, নিয়োগ বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্য, অর্থ পাচার, ব্যাংক লুট, শেয়ার বাজার লুট, মাদকের ছড়াছড়ি, ক্যাসিনোতে জুয়ার আড্ডা, ব্যাপক ঘুষ, দুর্নীতিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানান তিনি।

বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন,‘ক্ষমতাসীন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার গত ১১ বছরে পরিকল্পিতভাবে রাজনীতি শূন্য করে দেশকে একটি ব্যর্থ, অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। গত ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জরুরি আমলের সরকার দেশকে রাজনীতি শূন্য করার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল বর্তমান সরকার বিগত ১১ বছরে সেই সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। দেশের বিরাজমান এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশবাসীর সাথে আমরাও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে ব্যালট পেপারের নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকে ব্যাপকভাবে সিল মেরে বাক্স ভরে সরকারি দলের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করে অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। বর্তমান সংসদকে কোনভাবেই নির্বাচিত সংসদ বলা যায় না। এই সংসদে বিরোধী দল বলতে কিছুই নেই। বর্তমান সংসদও ব্যর্থ ও অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

দেশের কোন কিছুর উপরেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ পাচার, ব্যাংক লুট, শেয়ার বাজার লুট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি, হত্যা, ধর্ষণ, গুমসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। কমিশন বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির অভিযোগে সম্প্রতি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে অপসারণ করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা মহানগরীতে কয়েকটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, মাদকদ্রব্য এবং ২৪ লাখ টাকা এবং নারীসহ যুবলীগ নেতা খালেদ ও অন্য প্রায় ১৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৪২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানাচ্ছে যে, গ্রেফতারকৃত খালেদের পিছনে আরও বড় বড় রাঘব বোয়ালদের সমর্থন রয়েছে। খালেদ ৫০ জনের নাম বলেছে। ক্যাসিনোগুলোতে যে টাকার খেলা চলত তা থেকে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতারাও ভাগ পেত। রাজধানী ঢাকার ৬০টি স্থানে চলছে ক্যাসিনো। এগুলোতে প্রতি রাতে উড়ছে ১২০ কোটি টাকা।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে শামিমের অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, নগদ ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা, প্রায় ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর চেক উদ্ধার করেছে। কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজসহ ৫জনকে অস্ত্র, গুলি, মাদকদ্রব্য, জুয়ার সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এ থেকেই অনুমান করা যাচ্ছে যে, দেশে কী ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। এ ধরণের মদ, জুয়ার আসর ও নারী কেলেংকারী শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই চলছে। গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা খালেদের নিয়ন্ত্রিত টর্চার সেলে ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার লোক যারা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করত তাদের ধরে এনে নির্যাতন চালানো হতো।

দেশবাসী মনে করে এ ধরনের অবৈধ ক্যাসিনো সরকারের ছত্রছায়ায় বহু আগে থেকেই গড়ে উঠেছে। একটি জাতীয় দৈনিকে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টনক নড়েছে এবং তারা অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু দেশবাসীর প্রশ্ন এর পূর্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দুর্নীতি দমন কমিশন কী করেছে? তারা কী ঘুমিয়েছিল? তারা আগে থেকে কেন এ সব দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেনি? দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ কী? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ সেপ্টেম্বর মন্তব্য করেছেন, ‘ছাত্রলীগের পর যুবলীগ ধরেছি, অন্যদেরও ধরব।’ দেশবাসীর প্রশ্ন তিনি এতদিন কেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী-দুর্নীতিবাজদের ধরেননি?

বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রহসন মঞ্চস্থ করার আগে প্রধানমন্ত্রী জাতির নিকট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের। কিন্তু তিনি তার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে ‘সারা গায়ে ব্যথা, ওষুধ দিব কোথা’ এ প্রবাদ বাক্যটি মনে পড়ে।

দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার কোন পরিবেশ নেই। ঘুষ-দুর্নীতির কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা ছাড়া ছাত্রলীগের নেতাদের ভর্তি করার বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষকগণ আন্দোলন করছে। আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। সম্প্রতি এক জরীপে দেখা যায় যে, বিশ্বের ১৩ শত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান এক হাজারেরও নীচে। বিবিসির জরীপে দেখা যায় বাংলাদেশের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ৬৫% ভাগই বাংলা পড়তে পারে না। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, শিক্ষাঙ্গণে কী সাংঘাতিক অবস্থা বিরাজ করছে?

ব্যাংকের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক লুট, ব্যাংকের রিজার্ভ অর্থ চুরি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ স্বর্ণ চুরি, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বালিশ কেলেঙ্কারিসহ নানা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলিতে তারল্য সংকট চলছে। সরকারের ব্যয়ের তুলনায় আয় কমে গিয়েছে। ধার-দেনা করে সরকার চলছে। এ সব ঘটনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা ষোলকলায় পূর্ণ হয়েছে। সরকারের উন্নয়নের ফাঁকা বুলি ব্যর্থতার আর্তনাদে পরিণত হয়েছে। সরকারের একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা বিরোধী দলগুলোকে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর সুযোগ না দিয়ে ঘরে অবরুদ্ধ করে রেখে নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো এবং সংবাদপত্র ও প্রচার-মিডিয়ার স্বাধীনতা হরণ করার কারণেই সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের ঘুষ-দুর্নীতি, গুম-খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন বাধাহীনভাবে চলছে। যে কারণে দেশ অকার্যকর ব্যর্থ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ব্যর্থ ও অকার্যকর সরকারের নিকট থেকে ভাল কিছু আশা করা বাতুলতা মাত্র।

তাই দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের নানা কেলেংকারি ও ব্যর্থতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিজ্ঞপ্তি।


আরো সংবাদ



premium cement