২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আবারো আগুন!

আবারো আগুন! - ফাইল ছবি

খেতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মানুষ মরে- এর মতো দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? রেস্টুরেন্টে ভরে গেছে ঢাকা শহর, তাই বলে খাবারের দাম কমেনি, বরং খাবার ব্যয়বহুলও অকল্পনীয়। তবে দেখা গেছে, এখানে মানুষের আগমনে আনন্দ ও টাকা খরচে কারো তেমন কার্পণ্য দেখা যায় না মোটেই। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য! অথচ এসব মানুষ বেশির ভাগই আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ।

সব সময়ই আমার মনে একটি প্রশ্নের উদয় হয়েছে যে, এসব মানুষ এত পয়সা খরচ করার সামর্থ্য পেল কোথায়? পরবর্তীতে আমার প্রশ্নের জবাব আমার মধ্যে এসে গেছে। ভেবেছি আমরাও তো এসব খাবারের দোকানে যাই যেন বাড়িতে খাবার তৈরি হয় না, তৈরি হওয়া সম্ভব না। তারপর নিগূঢ়ভাবে ভেবেছি এবং ভাবনার ফলে কারণও খুঁজে পেয়েছি বলে মনে হয়েছে। জবাবটি যথাযথ কিনা জানি না। আমার ধারণাটি এখানে তুলে ধরলাম। মানুষ ঘরে ঘরে একা, কেউ যেন কারো নয়। প্রতিবেশী অর্থাৎ নেক্সটডোর প্রতিবেশী আমাকে চেনে না, চিনতে চায় না। প্রকারান্তরে আমারও প্রকৃতি তাই, একে অপরকে গুরুত্ব না দিয়ে দিন শেষে টুপ করে ঘরে ঢোকা।

এ কেমন সমাজ! শিশুরাও একে অপরের সাথে কথা বলে না। খেলাধুলা করে না, খেলাধুলার কোনো মাঠ বা স্থান নেই, নেই কোনো গাছতলার ছায়া যেখানে একে অপরের সাথে বসে গল্প করবে, নানা বিষয় আলাপ-আলোচনা করে তৈরি করবে একাত্মতা। ঘরের বাইরে যাওয়ায় মা-বাবার নিষেধ। সব চেয়ে বড় কারণ হলো এই- প্রতিটি শিশুর রয়েছে একটি মোবাইলফোন, ওটি টিপে টিপে জগৎ তার চোখের সীমানায় পেয়ে অন্য সব ভুলে বসে, ভুলে বসে পাশের রুমের বোনকেও, এমনকি মা কিংবা বাবাকেও। আবার ওদের সব বাসায় ওরা ছাড়া আর কেউ নেই। এই বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন আমাদের কালচারে ছিল বাসায় বাসায় দাদা-দাদী, চাচা-ফুফু থাকার চল। তাও হারিয়ে গেছে পশ্চিমা কালচারের বাতাসের তোড়ে। অতএব শিশুরা প্রায় প্রতি উইকএন্ডে বায়না ধরে বাইরে খাবে। মা-বাবাও তা ফেলতে পারেন না, মায়েরাও অনেকেই চাকরি করেন, মায়ের বাড়তি আয় দিয়ে হলেও বাইরে খাওয়ার সুযোগ হয়ে যায়। তা ছাড়া সারা সপ্তাহ অফিস করে সপ্তাহে এক বেলা বাইরে খাওয়ার ব্যবস্থা হলে মা-ও ওই বেলাটা খানাপিনা তৈরি প্রভৃতির ঝক্কি থেকে রেহাই পান।

এ সব কারণেই কিনা জানি না, সব মানুষের সর্ব প্রকার প্রয়োজন ছাপিয়ে ঢাকা শহরে গড়ে উঠেছে খাবার দোকান। অসংখ্য এসব দোকানের চটকদার কত কী নাম, ‘কাচ্চি ভাই’ প্রভৃতি। সেদিন ধানমন্ডির কোথায় যেন এক খাবার দোকানের নাম দেখলাম ‘কাচ্চি ভাবী’ এসব দোকানের ফেলে দেয়া খাবারও অনেক মজা। কারণ এতে নতুন করে কিছু খুশবু মসলা, বেশি করে টেস্টিসল্ট যা খাওয়ার ফলে শিশুরা ফুলেফেঁপে উঠে, তা মিলিয়ে গরম করে উপরে কিছু লতাপাতা সস প্রভৃতি দিয়ে সুন্দর করে রাজকীয় কায়দায় উপস্থাপন করে, তখন সবার মন গলে যায় যেন বেহেশতি খানা! আমারও মন গলে যায়। কারণ আমার ছেলে ও বউমা যখন নাতি-নাতনিদের নিয়ে ওসব রেস্টুরেন্টে যায় তার আধাঘণ্টা আগে বউমা বলে; মা আধা ঘণ্টার মধ্যে রেডি হবেন, বাইরে খাব। আমার আরো মন গলে এ জন্য যে, কত রকম মানুষ দেখব, দেখব তাদের হালচাল, ভাবব এর প্রেক্ষাপটে এত খরচের সামর্থ্য কোথা থেকে আসে। ভাবনার সুযোগ হবে। উল্লেখ্য, আমার বউমাও চাকরি করে। ওকে আমি মা ডাকি। মায়ের কথার বাইরে তো যাওয়া যাবে না।

এই যে ভালো লাগার বিষয়ের পরিবর্তিত রূপ তা উপেক্ষা করার উপায়ই বা কী হতে পারে তাও তো ভাবনার বিষয়।

এখন আসল কথায় আসি- এই যে রেস্টুরেন্টগুলো সুন্দর সুন্দর অদ্ভুত অদ্ভুত নাম নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে তা দেখার কি কেউ আছে? আবাসিক ভবনে হোটেল-রেস্টুরেন্ট! এসব রেস্টুরেন্টে লিফট কিংবা গেটের সামনেও ভূতের ডিব্বার মতো দাঁড়িয়ে অগণিত গ্যাস সিলিন্ডার, না জানি আরো কত কত রয়েছে অন্যত্র! আমি প্রায়ই এ বিষয়টি ভাবতাম।

ভাবতাম চুড়িহাট্টার আগুন, আর কত কত আগুনের কথা! চুড়িহাট্টার আগুনের বীভৎস রূপের কথা লিখেছিলাম, কারণ ওই পথে আমার যাতায়াত ছিল অহরহ। বেইলি রোডের বিষয়টিও কিছুটা না লিখে পারছি না, কারণ ঠিক বেইলি রোডে না হলেও ওই সব রেস্টুরেন্টে ছানাপোনা নিয়ে আমার যাতায়াত আছে। ভেবে গা কাটা দিয়ে ওঠে এ পর্যন্তই।

আগুন লাগবে মানুষ নামের মানুষগুলো পুড়ে মরবে- এ এক চলমান ঘটনা মাত্র বৈ কিছু নয়; বরং এমন হলে কেমন হয়। আমাদের শিশু-কিশোররা এমনকি বড় বড় সন্তানরা মায়ের কাছে আবদার রাখবে অমুকটা খেতে ইচ্ছে করছে যা তোমার মতো আর কেউ রাঁধতেই পারবে না। এ ক্ষেত্রে মা যদি তা করে খাওয়াতে সক্ষম হন তিনি আকাশ পরিমাণ খুশি হয়ে যাবেন এবং করে খাওয়াবেন। এমনটি আবদার আমরা ছোট বেলায় করতাম। যেদিন মা এটি করে খাওয়াতেন সেদিনটি অনেকটা ঈদ ঈদ মনে হতো। এভাবে পরিবারের সবাই একত্রিত হওয়ার সুযোগ হবে। আনন্দে ভরে উঠবে ঘর। ঘুচে যাবে আমাদের আপনজনকে বদভ্যাসের বশবর্তী হয়ে পর করে ফেলা।

রেস্টুরেন্টে খেয়ে পকেটের বারোটা বাজিয়ে কাজ কী, জীবনের ঝুঁকি বা নেবো কেন। ঢাকা শহরের তথা নিজের এলাকায় বসবাসরত আপনজনের বাড়ি মাঝে মধ্যে একত্রিত হয়ে একাত্মতা ফিরিয়ে আনি, ধরে রাখি একাত্মতার পরম সুখ। বিচ্ছিন্নতা হলো হতাশার খনি। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবন হারিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মতো আমরাও কেন হায় হায় করব! সব কথার বড় কথা- দুর্ঘটনার বিষয় আমার নিরাপত্তার কথা আমাকেই ভাবতে হবে। সবার যা হবে আমার তা হবে, এটি ভেবে জীবনের ঝুঁকি নেয়া ঠিক নয়। সিলিন্ডারগুলো দেখেও এসব রেস্টুরেন্টে আমরা যাবইবা কেন?

লেখক : পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হিট স্ট্রোকে পর্যটকের মৃত্যু জামালপুরে বউ-শাশুড়ি দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ২ ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৪১.৫ ডিগ্রি, বেঁকে যাচ্ছে রেলপথ আটক জাহাজের ক্রুদের ছেড়ে দেবে ইরান ফতুল্লা ৮৩০ গার্মেন্টেস শ্রমিক বিরুদ্ধে মামলা শ্রীনগরে ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ টানা চতুর্থবার কমলো স্বর্ণের দাম দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা : সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন বগুড়ায় ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ৫ সোনারগাঁওয়ে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় নেপালের পানিবিদ্যুৎ কিনছে ভারত, বাংলাদেশের অগ্রগতি কতটুকু?

সকল