২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতও হয়তো তালেবানের সাথে আলোচনায় বসবে

ভারতও হয়তো তালেবানের সাথে আলোচনায় বসবে - ছবি : নয়া দিগন্ত

২০ বছর আগে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগান তালেবান একটি শান্তিচুক্তি করতে পারে। তবে এই অসম্ভবটি ২০২০ সালে বাস্তবে পরিণত হলো। আজ এটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন যে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত আফগান তালেবানের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, যারা গণতন্ত্রের প্রতি ‘ঘৃণা’ প্রকাশ করেছে। পেছনের দরজা দিয়ে যোগাযোগের ঘটনাগুলো সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। অথচ ভারতীয় কর্মকর্তারা এটা অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়গুলো সন্দেহ সৃষ্টির জন্য বেশ ভালো উপকরণ। মূলত তালেবানের সাথে ভারতের সম্পর্কের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা পাকিস্তান সরকারকে প্রায়ই বিরক্ত করেছে এবং যে ইতিহাস আফগানিস্তানে দিল্লির সম্পৃক্ততা হ্রাস করতে চায়। তারপরও ইতিহাস থেকে যেমনটা জানা যায়, এ চাওয়া স্বল্পসময়ের জন্য। গৃহযুদ্ধ এড়াতে এবং আফগানদের কিছু মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সব আঞ্চলিক খেলোয়াড়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকা উচিত।

ভারতীয় কর্মকর্তারা তালেবানদের সাথে ২০১৩ সালে প্রথম সরাসরি যোগাযোগ করেছিলেন। সে সময় একটি সম্মেলনের জন্য তারা তালেবানের শীর্ষ নেতা আবদুস সালাম জায়িফকে ভিসা দিয়েছিলেন। জায়িফ পাকিস্তানে তালেবানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। কিন্তু নাইন-ইলেভেনের পর পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়। ২০১০ সালে ভারত থেকে তার বই গু ষরভব ডরঃয ঃযব ঞধষরনধহ প্রকাশ করা হয়। জাতিসঙ্ঘের সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত তালিকা থেকেও তার নাম মুছে ফেলা হয়। এরপর কোনো একসময় তিনি ভারতে আসেন। একটা প্রশ্ন থেকে যায়, কেন তিনি ভারত সফরে রাজি হলেন এবং ভারত কেন তাকে ঢুকতে দিলো? নাইন-ইলেভেনের পর পাকিস্তানের ইউটার্নে আফগান তালেবান খুশি ছিল না। জায়িফ তার বইয়ে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিভাগের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘তাদের এক মুখে দু’টি জিহ্বা এবং এক মাথায় দু’টি চেহারা যাতে তারা প্রত্যেকের ভাষায় কথা বলতে পারে। তারা সবাইকে ব্যবহার করে। সবাইকে ধোঁকা দেয়।’ পাকিস্তানের কারাগারগুলোতে তার সহকর্মীদের যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তিনি এর কঠোর সমালোচনা করেছেন।

অন্যতম শীর্ষ তালেবান নেতা আবদুল গনি বারাদারকে ২০১০ সালে পাকিস্তানে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই গ্রেফতার ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট। বারাদার আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন, যিনি চুপিচুপি রাশিয়া, ইরান ও ভারতকে তালেবানের সাথে সংলাপের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কারজাইয়ের সাথে বারাদারের যোগাযোগের কারণে পাকিস্তান অসন্তুষ্ট হয়েছিল এবং তাকে গ্রেফতার করেছিল। পাকিস্তানের হাতে এমন লাঞ্ছনা তালেবানকে রাশিয়া, ইরান ও ভারতের সাথে ‘চ্যানেল’ খুলতে বাধ্য করেছিল। তারা সুকৌশলে এই আশ্বাস দিয়ে রাশিয়া ও ইরানের সাথে যুক্ত থাকে যে, একমাত্র তালেবানই আফগানিস্তানে আইএসকে থামাতে পারে। তবে তারা ভারতের সাথে লেনদেনে বেশ সতর্ক ছিল।
২০১৮ সালে পাকিস্তান বারাদারকে মুক্তি দেয় এবং তালেবান তাকে কাতারে তাদের আলোচনার প্রতিনিধিদলের প্রধান বানিয়ে দেয়। একই বছরে কয়েকজন শীর্ষ তালেবান নেতা মস্কোতে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা ভারতকে ‘নিরপেক্ষ’ করতে চেয়েছিলের। কারণ ভারতীয়রা অতীতে তালেবানবিরোধী শক্তিকে সমর্থন করেছিল। এ দিকে ভারত তালেবানের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল, কারণ আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্ট তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ভারত নাইন-ইলেভেনের পর আফগানিস্তানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এমনকি কাবুলে একটি নতুন সংসদ ভবনও নির্মাণ করে দিয়েছে। ভারত আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ, রাস্তাঘাট, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও স্টেডিয়াম তৈরি করেছে। তালেবানের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ না হলে এগুলো সবই নষ্ট হয়ে যাবে।

গত বছর আমেরিকাও ভারতকে তালেবানের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে বলেছিল। ভারতীয়রা দুশ্চিন্তায় ছিল, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার জম্মু-কাশ্মিরে জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে পারে, যেমনটা ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার বাহিনী প্রত্যাহারে ঘটেছিল। তালেবান ভারতকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কাশ্মিরে হস্তক্ষেপ করবে না। তালেবানও জানত, ভারত আশরাফ গনি সরকারকে সহায়তা দিচ্ছে। তারা ভারতকে নিরপেক্ষ থাকতে সতর্ক করেছিল।

গত মাসে কাতারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা প্রকাশ করে দেন, ভারতীয় কর্মকর্তারা এবং তালেবান নেতারা দোহায় একটি বৈঠক করেছেন। এই প্রতিবেদনে পাকিস্তান খুশি হয়নি। প্রকৃতপক্ষে আফগান শান্তি আলোচনায় পাকিস্তান ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তান সম্প্রতি ভারতের সাথে ‘সমঝোতা চুক্তি’ করেছে, কিন্তু পাকিস্তান কখনোই তালেবান ও ভারতের মধ্যে সমঝোতা চুক্তিতে আগ্রহী ছিল না। গত ফেব্র“য়ারিতে পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সংসদ সদস্যদের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বলেছেন, ‘আফগান তালেবানরা এখন আর সহযোগী নয়। তারা এখন জোর করে কাবুল দখল করতে চায়।’ এই বৈঠকে কর্মকর্তারা আরো বলেন, আফগান তালেবান ও পাকিস্তানি তালেবানের (টিটিপি) মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, যারা দীর্ঘ দিন ধরে পাকিস্তানি নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। পাকিস্তান বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) ভারতের সমর্থনপুষ্ট।

পাকিস্তানের কেউ কেউ তালেবান ও ভারতের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনকে ইসলামাবাদের জন্য ‘কূটনৈতিক লজ্জা’ বলে মনে করেন। ভারতেও একই কথা শোনা যায়। সেখানে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সবসময় বলে যাচ্ছে, ‘সন্ত্রাসীদের সাথে কোনো আলোচনা নয়’। তারা তালেবানকে ‘পাকিস্তানের প্রক্সি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আফগানিস্তানের পরিবর্তিত দৃশ্যপট সেই ‘টেররিস্টদের’ সাথে আলোচনা করতে তাদের বাধ্য করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্প্রতি বলেছেন, আফগানিস্তানে ভারত সবচেয়ে বড় পরাজিত ও ক্ষতিগ্রস্ত। তবে গৃহযুদ্ধের সময় আফগানরা যেন হেরে না যায়, এটা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

আফগানদের কাছে কথা বলার স্বাধীনতা, নারীর অধিকার ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সুরক্ষার দাবি করার কারণ রয়েছে। আর যদি ভারতীয়দের সম্পৃক্ততায় তালেবানসহ আফগানদের কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে এটাকে স্বাগত জানানো উচিত। প্রকৃতপক্ষে যদি এটা আরো স্থিতিশীল আফগানিস্তান নিশ্চিত করতে সাহায্য করে, তবে এটা পাকিস্তানকেও সাহায্য করতে পারে।

‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ থেকে ইংরেজির ভাষান্তর
ইমতিয়াজ বিন মাহতাব

ahmadimtiajdr@gmail.com

লেখক : পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement
জাল ভোট হলে তাৎক্ষণিক সেই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ : ইসি আহসান হাবিব রাবিপ্রবিতে‘এ’ ইউনিটের গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতি ৭৭.৩৯ শতাংশ রাজধানীর জুড়ে ইসতিসকার নামাজ আদায় নাগরপুরে তীব্র তাপদাহে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে উপজেলা নির্বাচন : নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের যে শর্তের কথা জানালেন রিজভী গুচ্ছের বিজ্ঞান বিভাগে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৯০ শতাংশ গাজায় ছড়াতে পারে মহামারি নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন : বিচার কোন পর্যায়ে? মৌলভীবাজারে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, খোলা আকাশের নিচে অনেক পরিবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা : জবিতে মোট উপস্থিতি ৮৩ শতাংশ ব্যস্ত শহর বগুড়া ফাঁকা : বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় অব্যাহত

সকল