খাশোগি প্রবেশের পর চুলা জ্বালাতে বলা হয়েছিল কনস্যুলেটে
তুরস্কের আদালতে সৌদি কনস্যুলেটকর্মীর সাক্ষ্য- আলজাজিরা ও রয়টার্স
- ০৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০
সাংবাদিক জামাল খাশোগি তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর কনসাল জেনারেলের বাসভবনে ডাকা হয়েছিল কনস্যুলেটেরই এক টেকনিশিয়ানকে। তুরস্কের আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে জেকি ডেমির নামের ওই টেকনিশিয়ান জানিয়েছেন, খশোগি কনস্যুলেটে পৌঁছানোর এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে কনসালের বাড়িতে চুলা (ওভেন) জ্বালাতে বলা হয়েছিল তাকে।
চুলার আশপাশের আলামত দেখে মনে হয়েছে সেগুলো কেমিক্যাল দিয়ে পরিষ্কার করা। এ ছাড়া কনসালের বাগানে থাকা ওই চুলার পাশাপাশি কিছু ঝলসানো মাংসখণ্ড ও বারবিকিউ দেখতে পেয়েছিলেন বলেও জানান ডেমির। গত শুক্রবার তুরস্কের একটি আদালতে সৌদি কনস্যুলেটের ওই কর্মী সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় এসব তথ্য দিয়েছেন।
সৌদি রাজ-পরিবারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগি ২০১৮ সালের অক্টোবরে ওই কনস্যুলেট ভবনে খুন হন। ভবনটিতে প্রবেশের পর থেকে এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
খাশোগি হত্যা মামলার শুনানির প্রথম দিন শুক্রবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের স্থানীয় টেকনিশিয়ান জেকি ডেমির। মামলার আসামি সৌদি আরবের ২০ কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে আদালতের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সময় এই সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড ঘিরে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল সৌদি আরব। ডেমির বলেন, খাশোগি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর তাকে কনস্যুলেটের আবাসিক ভবনে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে পাঁচ থেকে ছয়জন উপস্থিত ছিলেন...তারা আমাকে তন্দুর (ওভেন) জ্বালাতে বলেন। সেখানে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল।
২০১৮ সালের অক্টোবরে নিজের বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে যান সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তারপর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। পশ্চিমা কিছু দেশের সরকারের পাশাপাশি মার্কিন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বলেছে, তাদের ধারণাÑ সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও সৌদি কর্মকর্তারা বরাবরের মতো এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশের ধারণাÑ খাশোগিকে শ্বাসরোধে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে থাকতে পারেন ঘাতকরা। টেকনিশিয়ান জেকি ডেমিরের সাক্ষ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন তিনি কনস্যুলেটের বাগানে গোশত কাটার অনেকগুলো বোর্ড দেখেছিলেন। এ ছাড়াও বাগানের চুলায় ছোট বারবিকিউয়ের আয়োজনও দেখেছেন তিনি। চুলার চারপাশের মার্বেলের স্ল্যাবগুলোর রঙ পাল্টে গিয়েছিল। সেগুলো রাসায়নিক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছিল বলে তার ধারণা।
এ ঘটনায় পৃথক জবানবন্দী দিয়েছেন কনস্যুলেটের গাড়িচালক। তিনি বলেছেন, স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট থেকে তাকে কাবাবের কাঁচা গোশত আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে জেকি ডেমির বলেন, একটি কালো গ্লাসের গাড়ি কনস্যুলেটের ঢোকার সময় বাগানের গ্যারেজের দরজা খোলার কাজে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে দ্রুত সেখান থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তুরস্কের আদালতে সৌদির গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক উপপ্রধান আহমদ আল-আসিরি ও রাজকীয় আদালতের সাবেক উপদেষ্টা সৌদ আল-কাহতানির বিরুদ্ধে ‘ভয়ানক উদ্দেশ্য নিয়ে হত্যায় প্ররোচনা’ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।