০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সৌদি যুবরাজের মিথ্যাচারকেই সমর্থন করছেন ট্রাম্প

ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়
-

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানকে সমর্থন করে যাচ্ছে। বিন সালমান ইস্তাম্বুলে সৌদি কন্স্যুলেটে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে ‘জবাবদিহিতা থেকে রেহাই পেতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন’। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা এ মন্তব্য করেছে।
শনিবার রাতের এক স্বাক্ষরবিহীন সম্পাদকীয়তে পত্রিকাটি সম্পাদকীয় বোর্ড লিখেছে, বৃহস্পতিবার রিয়াদের একজন রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সব অপরাধ ও দায় থেকে যুবরাজকে অব্যাহতি দিয়ে একটি বিবরণ প্রদান করেছেন, যা প্রতিষ্ঠিত সত্য ঘটনাবলির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। অথচ এই গর্হিতকর ধামাচাপার বিষযটিকে প্রত্যাখ্যান করার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিবরণকে ভিত্তি করেই ঘটনার গভীরে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়, মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে খুনের ঘটনায় জড়িত নি¤œপর্যায়ের সন্দেহভাজন ১৭ জন সৌদির ওপর অবরোধ আরোপ করলেও মোহাম্মাদ বিন সালমান ও শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এর দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন পোস্টেই প্রকাশিত সিআইএ’র ফাঁস হওয়া রিপোর্টে কথা উল্লেখ করা বলা হয়, ‘খাশোগি হত্যার জন্য যুবরাজই দায়ী বলে রিপোর্টটিতে বলা হলেও ট্রাম্প তাকেই সমর্থন দিয়ে যাবেন বলে আমরা এখন জানতে পেরেছি’।
পোস্ট জানায় যে, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ‘সম্পূর্ণ নিশ্চিত’ যে, তাদের মূল্যায়নের সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো প্রেসিডেন্টকে অবহিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডের অডিও রেকর্র্ডিং, ‘ঘাতকদলের’ ফোনালাপ এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতের ফোনকল। ‘তৎসত্ত্বেও মোহাম্মদ বিন সালমান যে দায়ী তা মানতে ট্রাম্প মোটেই রাজি নন। এর সম্ভবত কারণ হলো, ৩৩ বছর বয়স্ক যুবরাজকে দায়ী বলে মেনে নেয়ার অর্থ হবে কৌশলগত মিত্র হিসেবে গ্রহণ করার হোয়াইট হাউজের বোকামির পদক্ষেপ ছিল মারাত্মক ভুল।’ নিবন্ধটিতে বলা হয়, উভয় দলের অনেক আইনপ্রণেতা ধামাচাপা দেয়ার ওই বিবরণ প্রত্যাখ্যান করার পক্ষে কথা বলেছেন। তারা এ ব্যাপারে প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া জানানোর দাবি জানিয়েছেন। তিনজন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে ও গ্রাহাম, টড সি ইয়ং ও সুসান কলিন্স রবাট মেন্ডেজসহ তিন ডেমোক্র্যাট সিনেটরের সাথে মিলে একটি প্রস্তাবকে সমর্থন করে বলেছেন, খাশোগি হত্যার বিষয়ে এ বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণের আলোকে সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্ট যেকোনো কর্মকর্তা অথবা রাজপরিবারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে প্রশাসনকে অবশ্যই অবরোধ আরোপ করতে হবে।
মোহাম্মাদ বিন সালমানের জড়িত থাকার বিষয়কে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে বলে সিআইএ’র উপসংহার টেনে প্রস্তাবটিতে ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধ এবং সব ধরনের মানবিক ত্রাণ সরবরাহে বাধা দান বন্ধ না করা পর্যন্ত সৌদি আরবের কাছে সব ধরনের মার্কিন অস্ত্র বিক্রি স্থগিত রাখারও কথা বলা হয়েছে।
পোস্ট লিখেছে, পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব কর্কার ট্রাম্পকে মোহাম্মদ বিন সালমান সম্পর্কে সত্য বলার এবং মার্কিন কৌশল ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে কার্যকর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে একটি সংশোধনীর মাধ্যমে তার নীতিমালাগুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার একটি সুযোগ দিয়েছেন। তারা আরো লিখে, যদি সৌদি যুবরাজের মিথ্যাচারের প্রতি হোয়াইট হাউজ সমর্থন অব্যাহত রাখলে কংগ্রেস এ ব্যাপারে অবশ্যই দ্রুত ও নিশ্চিত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ওয়াশিংটন পোস্টের কলামলেখক সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কন্স্যুলেটে ঢোকার কিছু সময়ের মধ্যে হত্যার শিকার হন। সৌদি আরব প্রথমে হত্যার কথা অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে যে, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি মারা যান এবং এটি কোনোভাবেই পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল না। পরে অবশ্য তারা স্বীকার করে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারেই নির্মমভাবে খাশোগিকে হত্যা করা হয়। ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ইস্তাম্বুলে জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কংগ্রেসকে অবশ্যই সত্যের ওপর জোর দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement