২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডব্লিউডব্লিউএফের রিপোর্ট

৬০ শতাংশ বন্যপ্রাণী ধ্বংস করেছে মানুষ

বনাঞ্চল কেটে চারণভূমি তৈরি করা হয়েছে অ্যামাজনে : ইন্টারনেট -

১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ স্তন্যপায়ী জীবজন্তু, পাখি, মাছ ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী ধ্বংসের পেছনে ভূমিকা রয়েছে মানুষের। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বন্যপ্রাণী ধ্বংস এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, মানব সভ্যতাও হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর নেচার (ডব্লিউডব্লিউএফ) সম্প্রতি নতুন এ রিপোর্টে এ হুঁশিয়ারি জানায়। এ রিপোর্ট তৈরির কাজে বিশ্বের নানা প্রান্তের ৫৯ জন বিজ্ঞানী সহযোগিতা করেন। প্রতি দুই বছর অন্তর লিভিং প্লানেট রিপোর্ট নামে বন্যপ্রাণী সংরণবিষয়ক এ রিপোর্ট প্রকাশ করে দ্য ডব্লিউডব্লিউএফ। এর মাধ্যমে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ও সংরণ বিষয়ে পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে।
২০১৮ সালে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বিশ্বের চার ভাগ অঞ্চলের মধ্যে মাত্র এক ভাগ অঞ্চলে মানবসৃষ্ট এ বিপর্যয় থেকে বন্যপ্রাণীরা নিরাপদ রয়েছে। তা ছাড়া বাকি তিন ভাগে তাদের জীবন চরমভাবে সঙ্কটাপন্ন। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের দশ ভাগের মধ্যে নয় ভাগ অঞ্চল বন্যপ্রাণী বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে।
নতুন এই রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বের মানুষের ক্রমবর্ধমান খাদ্য ও সম্পদ চাহিদার কারণে বন্যপ্রাণীদের জীবনধারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ তাদের এ ধারা তৈরি হতে সময় লেগেছিল শত শত কোটি বছর। মানবসমাজ পরিষ্কার বাতাস, পানিসহ সব কিছুর জন্যই এর ওপর নির্ভরশীল। ডব্লিউডব্লিউএফের অন্যতম নির্বাহী পরিচালক মাইক ব্যারেট বলেন, আমরা এখন একটি খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছি। যেভাবে বন্যপ্রাণীর ৬০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, তেমনটি যদি মানুষের ক্ষেত্রে ঘটত তাহলে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ, চীন ও ওশেনিয়া মহাদেশ মানবশূন্য হয়ে পড়ত। আমরা যা করছি, তার প্রতিচ্ছায়া আসলে এ-ই।
জার্মানির পোটসড্যাম ইনস্টিটিউট ফর কাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক জোহান রকস্ট্রম বলেন, আমরা খুব দ্রুত প্রান্তসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছি। এ অবস্থায়ও শুধু প্রতিবেশ ও জলবায়ুকে কেন্দ্র করেই আমরা মানুষের জন্য পৃথিবীতে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করতে পারি। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সভ্যতার শুরু থেকে এ পর্যন্ত মানুষের হাতে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ৮৩ শতাংশ এবং অর্ধেক গাছপালা ধ্বংস হয়েছে। যদি এর ধারাবাহিকতায় বন্যপরিবেশ ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে এটি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে ৫০-৭০ লাখ বছর।
চার হাজার প্রজাতির ১৬ হাজার ৭০৪টি স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, মাছ, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এসব প্রাণী ধ্বংসের হার ৬০ শতাংশ। চার বছর আগে যা ছিল ৫২ শতাংশ। ব্যারেট বলেন, এ ক্ষেত্রে নির্মম সত্যটি হচ্ছে, বন্যপ্রাণী ধ্বংসের এ কাজটি চলছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জলবায়ুবিষয়ক আরেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক বব ওয়াটসন বলেন, বন্যপ্রাণী ও প্রতিবেশ মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলেন, প্রকৃতির ধ্বংসের এ বিষয়টি জলবায়ু পরিবর্তনের মতেই বিপজ্জনক। মানুষের হাতে যেসব কারণে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে তার পেছনে প্রধান হচ্ছে, মানুষ বনভূমিকে কৃষিজমিতে রূপান্তর করে ফেলছে। বর্তমান বিশ্বের তিন চতুর্থাংশ জমিতে মানুষ তাদের কর্মকাণ্ড বিস্তার করেছে। এ ছাড়া খাদ্যের জন্য হত্যার কারণেও বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ৩০০ ধরনের প্রাণী শুধু এ কারণে বিলুপ্তির পথে। সাগরগুলোয় আগের চেয়ে অনেক বেশি মাছ ধরা হচ্ছে। রাসায়নিক দূষণের কারণে রোগে আক্রান্ত হয়েও অনেক প্রাণী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
দণি ও মধ্য আমেরিকায় বন্যপ্রাণীরা সবচেয়ে বেশি সঙ্কটের মুখে পড়েছে। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে ১৯৭০ সালের তুলনায় ওই অঞ্চলে ৮৯ শতাংশ বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। বর্তমানে প্রতি দুই মাসে বৃহত্তর লন্ডনের মতো বনাঞ্চল হ্রাস পাচ্ছে। রিপোর্ট বলছে, মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় শিকার স্বাদু পানির প্রাণীগুলো। এ ছাড়া বিভিন্ন নদী, লেকে বাঁধ ও ড্যাম নির্মাণের কারণ জলজপ্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement