সুনামগঞ্জে এবারের বন্যায় মৎস্য খাতে মোট ২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস। বন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট দুর্যোগেও গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় চুরি হয়েছে গরু।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মনি বেগম বলেন, ‘বাড়িতে পানি উঠায় আমি সন্তানদের নিয়ে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। এ সুযোগে চোরদল আমার একডজন হাঁস চুরি করে নিয়েছে।’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সাংবাদিক নুরুল হক বলেন, ‘আমার মালিকানাধীন হক বহুমুখী খামার বাড়ির ফিশারিতে বিভিন্ন জাতের প্রায় আড়াই লাখ পোনা মাছ ছিল। সকাল এবং বিকেল হলে সব পুকুরজুড়ে পোনা মাছ ভাসত, খেলা করত, খাবার খেত, কত সুন্দর লাগত। শত চেষ্টা করেও পোনাগুলো রাখা গেল না অকাল বন্যার কারণে।’
মৎস্য খামারে প্রায় কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগ করেছিলেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সাফিউল ইসলাম (সুস্বাদ)। কয়েক মাস পরেই খামার থেকে লাভবান হবেন বলে স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু চলমান পাহাড়ি ঢলের আকস্মিক বন্যায় তার সে স্বপ্ন ভেসে গেছে। বানের পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ায় তিনি এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সবকিছু হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা।
সাফিউল ইসলাম সুস্বাদ বলেন, ‘স্বপ্ন নিয়েই খামার করেছিলাম। খামারে প্রায় কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ করেছিলাম। আশা ছিল মাছ বিক্রি হলে অর্ধকোটি টাকা আয় হবে। কিন্তু বন্যায় আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। এ ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেবো তা ভেবে পাচ্ছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। সরকারের কাছে আমার দাবি, আমিসহ আমার মতো যারা সহায়-সম্বল হারিয়েছে তাদের দিকে একটু নজর দেয়ার জন্য।’ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারের তালিকায় নাম পাঠিয়ে দেবো। সরকারি কোনো সহায়তা এলে অবশ্যই জানানো হবে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আবুল কালাম আজাদ জানান, সুনামগঞ্জে এবারের বন্যার স্থায়িত্ব বেশি দিন ছিল না। কিন্তু এর ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ করে আমাদের মৎস্যসম্পদের ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বলেই আমি মনে করি। মোট ২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে শুধু মৎস্য খাতে। তিনি বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত প্রণোদনা পাঁচ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার এক লাখ ২১ হাজার ৭৪৩ জন মৎস্যজীবীর জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দের দাবি করছি আমরা।’
এ ছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক মৎস্যচাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণসহ মৎস্যজীবীদেরকে ঋণসহ অন্যান্য সুবিধাদি প্রদানের জন্যও বলা হয়েছে। পোনা অবমুক্তির পরিমাণ আরো বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি বজ্রপাতে নিহত জেলার দু’জন মৎস্যজীবীর পরিবারকে সরকার দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের সিদ্বান্ত নিয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা