২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পাঁচগাও ভ্রমণের সাতকাহন

পাঁচগাও ভ্রমণ সাতকাহন - নয়া দিগন্ত

: হ্যালো...
: জয় বাংলা মোড়ে?
: ওকে, পাঁচ মিনিটে আসছি।

এক নিঃশ্বাসে তিনটি বাক্য বলার পরই যেন মনে খানিকটা স্বস্তি আসে। বুকের ধড়ফড়টা কমে আসে। ওপার থেকে আসা একটা জবাবই শীতলতা এনে দিয়েছে হৃদয়ে।

ঘটনার সূত্রপাত মুহূর্ত খানিক আগে। ঘুম ভাঙা মাত্রই হঠাৎ নিজের অজান্তেই উঠি লাফিয়ে। চোখ মেলে বাইরের আবছা রোদেলা আলো দেখেই বুঝি, রোদ্দুরে এই সকালেই হয়তো আমার সন্ধ্যার বিষন্নতা নেমে এসেছে। তবে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মনে খানিকটা আশার সঞ্চার হয়। তবুও নিশ্চিত হবার জন্য দ্রুত ডায়াল করি একটা নম্বরে৷ অতঃপর উপরে লেখা ‘খানিকটা স্বস্তি।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ এক আলোচনায় বন্ধু আরিফ বলে উঠে, ‘চল ঘুরে আসি।’ যদিও শেষ মুহূর্তে তারই আর যাওয়া হয়নি, তবে সেই সূত্র ধরেই ‘ময়মনসিংহ ট্রাভেলার্সের’ প্রিয় বড়লোক ভাইকে (মাহাবুব আলম ফকীর) চিঠি পাঠাই ফেসবুকের নীল খামে। এর আগেও বেশ ক’বার চিঠি আদান-প্রদান করেও শেষে আর ভাগ্য সায় দেয়নি। কখনো সময় সুযোগ, কখনো বা প্রাক্তনের দহনের কারণে।

তবে এবার যেন মাহাবুব ভাই দৃঢ়প্রত্যয়ী, মনোবলটা যেন হিমালয় জয়ী৷ সেই বিশ্বাস রাখতেই ব্যস্ততার ভিড়েও তাই বন্ধুদের মিলিত করে ফেললাম একটা প্লাটফর্মে। সেখান থেকে জোয়ার-ভাটা শেষে আটজন নিশ্চিত হলাম নেত্রকোনার শেষ সীমান্ত কলমাকান্দার ‘পাঁচগাও’ ভ্রমণে। যার পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রম লুকিয়ে আছে বন্ধু কাউসার ও সা'দের।

৭ তারিখ শুক্রবার, ভোর ৬টায় গাড়ি ছেড়ে যাবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েই ছয় তারিখ রাতে ঘুমাতে যায় সবাই। তবে লিখতে গিয়েই ভোর হয় আমার। যে সময়টা আসবে বলে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম আপনমনে, সেই ভোরেই অনাকাঙ্ক্ষিত এক কারণে ক্লান্ত চোখটা কিভাবে জানি লেগে আসে। আর তাতেই যেন দিনের শুরুতেই আমার বেলা ফুরোয় বলে!

এলার্ম আর ১৮ ফোন কলকে অভিশাপ দিয়ে ৫ মিনিটে পৌঁছে যাই নির্দিষ্ট স্থানে। ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে ছয়টা ছুঁই ছুঁই করে। দুঃখ প্রকাশ শেষে ২৬ জন ভ্রমণ পিপাসুদের সঙ্গী করে ময়মনসিংহ ট্রাভেলার্সের ব্যানারে চলতে শুরু করি গন্তব্য স্থলে। পথ-পরিচায়কের ভূমিকায় প্রিয় বড় ভাই মোহাম্মদ রোমান ও আশিকুর রহমান।

নেত্রকোনায় নাস্তা শেষে ফের ছুটে চলি লক্ষ্য পানে। তবে রাস্তার কাজ চলমান থাকায় বেশ কয়েকটা রাস্তা ঘুরেফিরে অবশেষে জুমু’আর খানিকটা পূর্বে পৌঁছে যাই পাচঁগাও গ্রামে। খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করে ছুটে চলি বিখ্যাত বটতলা গাছের উদ্দেশ্যে। বটতলার ছায়ায় যেন মিশে আছে শান্তির নীড়। ছায়াতলে যাওয়া মাত্রই যেন মনটা জুড়িয়ে যায়। সাথে পাথরের পাহাড় বেয়ে উঠাটাও কম উপভোগ্য নয়। গাছের ছায়াতলে আর পাহাড়ের এবড়োখেবড়ো স্থানে দাঁড়িয়ে ক্যামেরার কারসাজি শেষে উদ্দেশ্য এবার পাঁচগাও ঝর্ণা।

পানিটা যদিও ঘোলাটে, তাতে কি আর আনন্দে ভাটা পড়ে? দুটো ঝর্ণায় ভাগাভাগি করে যে যেভাবে পেরেছে ভিজেছে, ভিজিয়েছে। নেচেছে, মেতেছে। দুটো ঝর্ণার বারিধারায় নিজেকে উৎসর্গ করে, পাথরের কোণে লুকিয়ে থাকা বিষধর সাপটার স্মৃতি সঙ্গী করে পরের গন্তব্য পিচ্চি ট্রেইল।

এতো সুন্দর একটা জায়গা এখানে পাথরের পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে, কখনো ভাবতে পারিনি। মহান প্রভুর সৃষ্টির এক অপরূপ নিদর্শন যেন পিচ্চি ট্রেইল। যেখানে পা রাখা মাত্রই আপনার ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে, মনটা ভালো হয়ে যাবে। হৃদয়ে শান্তির বাতাস বয়ে যাবে। এতো শীতল, নির্মল, আরামদায়ক একটা পরিবেশ। নাতিশীতোষ্ণ শব্দটা আসলে কি এবং কেন, খুঁজে পেয়ে যাবেন এখানে। আর ছবির ভিউ এতো সুন্দর যে, আপনি ভিজবেন না ছবি তুলবেন, এই দ্বিধাতেই ঘন্টা সময় পাড় হয়ে যাবে।

তবে অনেকেই হয়তো পরিবেশটা উপভোগ করতে পারেনি দ্রুততার কারণে কিংবা পানিতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা পাথরগুলোর কারণে। পিচ্চি ট্রেইলের পেছনের দিকটা আপনাকে বান্দরবানের ট্রেইলগুলো হয়ে চোখের সামনে ভাসিয়ে তুলবে। ছোট্ট করে একটা ঝর্ণাও আছে সেখানে। ছবির মতো দৃশ্য যাকে বলে।

এরপর ক্ষুধার্ত পেটকে পরিতৃপ্ত করার পালা। এই সময়ে গরম ভাপা উঠা ভাত আর ঝাল আলুভর্তার বিকল্প হতে পারে না। সাথে মুরগীর ঝোল আর ডাল। ক্ষুধা না থাকলেও তো ক্ষুধা লাগাবে আপনাকে, চোখের ক্ষুধা তো হবে নিঃসন্দেহে। আর ক্ষুধার্ত অবস্থায় তা যেন অমৃতসম!

আসার পথে চালকের হঠাৎ পথ হারিয়ে ফেলা। এ যেন ‘একটার সাথে আরেকটা ফ্রী’ অফারের মতো আরেকটা নান্দনিক স্থান দুর্গাপুর অভিমুখে এগিয়ে যাওয়া। যাহোক, প্রায় ২০ ঘন্টার ভ্রমণ শেষে অবশেষে ঘরে ফেরা রাত দশটার পরে পরে। মাঝের সময়ে প্রকৃতির মুগ্ধতা ছাড়াও আর কি দেখেছি জানেন? ‘ময়মনসিংহ ট্রাভেলার্সের’ আন্তরিকতা।

ভ্রমণের যাত্রাপথের বিঘ্নতা কাঁটিয়ে দিয়েছেন তারা আন্তরিকতার দ্বারা। কোন তাড়াহুড়ো নেই, তাড়া নেই, নিষেধ নেই। আছে সেবা, সবার খুঁজ রাখা, সহায়তা ও তথ্য দিয়ে উপকৃত করার মন্ত্রমুগ্ধতা। এর পর যখন আবার আপনার থালায় নিজের হাতে ভাত তুলে দিবেন, নিজেরা না খেয়ে আপনার প্রয়োজন পুরো হয়েছে কিনা খুঁজে নেবেন; তাদের ‘ধন্যবাদ’ বলা ছাড়া আর কিইবা বলার থাকে!

সীমাবদ্ধতার এই জীবনে সবারই মনে এক সুপ্ত ইচ্ছে থাকে। কারো তা পূরণ হয় কোনো এক কালে, কারও বা সুযোগ আর সামর্থ্যের বেড়াজালে স্বপ্নটাকে মাটিচাপা দিয়েই ছুটে চলতে হয় বাস্তবতার নিরিখে। সেই সুপ্ত ইচ্ছেগুলোর কোন একটা বিশাল অংশ জুড়ে থাকে ভ্রমণ! জাত-ধর্ম উর্ধ্বে রেখে, শ্রেণী বিভেদ ভুলে প্রায় প্রতিটি মানুষের ইচ্ছেগুলো এই একটা জায়গায় এসে মিলে যায়, মিশে যায়; গান ধরে সমস্বরে।

পাঁচগাও, কলমাকান্দা : ০৭/১০/২০২২। জীবন ডায়েরিতে লিখে রাখলাম দিনটা। সাধ্য, সামর্থ্য, সুযোগ আর সীমাবদ্ধতার বেড়াজাল ছিঁড়ে এই দিনে চলে গিয়েছিলাম প্রকৃতির টানে, পাঁচগাওয়ের উদ্দেশে।


আরো সংবাদ



premium cement
বাইপাস সার্জারির জন্য কৃত্রিম রক্তনালী তৈরির চেষ্টা হামাসকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইলি প্রস্তাব বিবেচনার আহ্বান যুক্তরাজ্যের প্রথমবারের মতো সিরি-এ ম্যাচে ছিলেন সব নারী রেফারি ফেনীতে তাপদাহে তৃষ্ণা মেটাতে শিবিরের পানি-স্যালাইন বিতরণ ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাংলাদেশে যাদের ইলমে দীন অর্জনের সৌভাগ্য হয়েছে, তারাই প্রকৃত ধনী ৩৩ ইসরাইলির মুক্তির বিনিময়ে গাজায় ৪০ দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব ইসরাইলের ‘টেকসই প্রস্তাব’ কী হবে হামাসের প্রতিক্রিয়া উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের রাত ১১টার মধ্যে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান বন্ধের নির্দেশ ডিএমপির ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া কি হোঁচট খেল?

সকল