বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন এক হাজার জনের নমুনা সংগ্রহের টার্গেটে এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এজন্য উপকরণ এবং প্রশিক্ষণের অভাবকে বড় ঘাটতি হিসাবে তুলে ধরেছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনেকে।
তবে সরকারি সূত্রগুলো বলেছে, এখন নমুনা সংগ্রহের পর্যাপ্ত উপকরণ দিয়ে প্রতি উপজেলায় এর টার্গেট আরও বাড়িয়ে এখন থেকে প্রতি উপজেলা থেকে দুই জনের জায়গায় সর্বোচ্চ ১০জনের করে নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৭৯২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ৪১ জনকে করোনায় আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, টার্গেটে না পৌঁছালেও নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার সংখ্যা প্রতিদিনই অনেক বাড়ছে। সর্বশেষ ৪১জনকে শনাক্ত করায় দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৪ জনে। দেশে কমিউনিটি সংক্রমণ এখনও এলাকাভিত্তিক আছে বলে সরকার দাবি করছে। তাতেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
এপ্রিল মাসকে বাংলাদেশে সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক চিত্র বা ধারণা এখনও সরকারেরই কাছে নেই। সেই প্রেক্ষাপটে উপজেলা পর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, এখন সন্দেহ হলেই পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা তারা করছেন।
‘ক্ষেত্র বিশেষে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে র্যানডম নমুনা সংগ্রহ চলছে। কারণ অনেক সময আমরা দেখি, লক্ষণ না থাকলেও পজিটিভ হয়। পরিস্থিতিটা বোঝার জন্যই আমরা এভাবে নমুনা সংগ্রহ করছি। অবশ্যই পরীক্ষার সংখ্যা অনেক বেড়েছে।’
গত ২রা এপ্রিল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, প্রতিদিন প্রতি উপজেলা থেকে দু'জনের করে প্রায় এক হাজার জনের নমুনা সংগ্রহের টার্গেট নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে গত পাঁচদিনের কোন দিনই সেই টার্গেট পূরণ করা যায়নি।
যে এলাকাগুলোতে করোনার সংক্রমণ বেশি হয়েছে বলে চিহ্নিত হয়েছে, তার মধ্যে মাদারিপুর জেলা অন্যতম। এই জেলার কালকিন উপজেলা থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আলবিধান সানাউল্লাহ বলছিলেন, তাদের উপজেলা থেকে গত কয়েকদিনে তারা তিন জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলেন।
‘আমাদের কাছে তিনটা ভিটিএম বা নমুনা সংগ্রহের উপকরণ ছিল, তার মাধ্যমে তিনটা নমুনা পাঠিয়েছিলাম। আজ মঙ্গলবার আমরা তিনটা ৩০টি ভিটিএম পেয়েছি।’
ভিটিএম কী?
ভিটিএম বা নমুনা সংগ্রহের উপকরণটি আসলে কি- সে সম্পর্কে তিনি বলছিলেন,‘ভিটিএম হলো ভাইরাস ট্রান্সফার মিডিয়া।আমরা গলা এবং নাক থেকে নমুনা নিয়ে তা এই ভিটিএম এ একটা তরলের মধ্যে দিয়ে পাঠাতে হয়। ভ্যাকসিন ক্যারি করার জন্য যে ব্যাগ থাকে, তার চারপাশে চারটা আইস প্যাকের মাঝে ভিটিএমটা দিতে হয়। আইস প্যাকের ভিতরে ভিটিএম দিয়ে দুই থেকে আট ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয়। এতে ভাইরাসটা জীবিত থাকবে।’
তিনি জানিয়েছেন, তারা এখন নমুনা সংগ্রহের উপকরণ পেয়েছেন এবং নতুন নির্দেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে তারা প্রতিদিন ১০ জন পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা করবেন।
দেশের আরও কয়েকটি উপজেলায় কথা বলে জানা গেছে, তাদের স্বাস্থ্য উপকরণ, নমুনা সংগ্রহকারির সংরক্ষা সামগ্রী এবং প্রশিক্ষণের যেমন অভাব ছিল। একইসাথে মানুষেরও নিজে থেকে নমুনা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম ছিল। সে কারণে এই কয়েকদিনে নমুনা সংগ্রহের টার্গেট পূরণে ঘাটতি ছিল।
জাতিসংঘের রোগতত্ত্ববিদ মনিকা বেগ বলছিলেন, এখন নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রমের ঘাটতি দ্রুত নিরসন করে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা বাড়ানো আরও প্রয়োজন।
‘কমিউনিটি সংক্রমণের বিপর্যয় ঠেকাতে হলে পরীক্ষা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নাই। এখন হয়তো সরকারের একটু সমস্যা হচ্ছে। কারণ এটার জন্য যে শুধু উপকরণ বা প্রশিক্ষণের ব্যাপার আছে, সেটা নয়। এটার জন্য যথেষ্ট জনবল দরকার এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত উপকরণ পাঠানো হয়েছে। এসবের কোনো ঘাটতি নেই বলে তিনি দাবি করেছেন।
‘নমুনা সংগ্রহ করে সেটা সঠিকভাবে করা না হলে কষ্টাটা বৃথা যাবে। কাজেই প্রথমদিকে একটু স্লো থাকা ভাল। তবে নমুনা সংগ্রহের গতি বাড়ছে। এখন কিন্তু প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।’ সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা