১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


ঘরের চাবিটি পকেটে নিয়ে প্রতিবেদন লিখতে শুরু করেন গাজার ওই সাংবাদিক

আল জাজিরা ও এপির কার্যালয় যে ভবনটি ছিল, তা ভেঙে পড়ছে - ছবি : সংগৃহীত

শনিবার গাজা উপত্যকার আরো একটি বহুতল বিমান হানায় ধ্বংস করল ইসরাইল। সেই বহুতলে ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম এপি এবং কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার দফতরও। ইসরাইল অবশ্য দাবি করেছে, সেখানে ছিল প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের দফতর। এ কারণেই তারা ভবনটি ধ্বংস করেছে। তবে ওই ভবনের মালিক তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, সেখানে সংবাদ মাধ্যমের অফিস ছাড়া ছিল প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর কার্যালয়। আর বোমারু বিমান দিয়ে হামলা করার প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছে এপি ও আল জাজিরা। বহুতলটিতে হামাসের ঘাঁটি ছিল, ইসরাইলের এই দাবির সমর্থনে প্রমাণ দিতে বলেছে এপি। তাদের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এই ভবনে ১৫ বছর ধরে এপি-র অফিস। হামাস এখানে রয়েছে বা সক্রিয় এমন কোনো ইঙ্গিত আমরা পাইনি। জেনেশুনে আমাদের সাংবাদিকদের আমরা বিপদে ফেলব না।’

এ নিয়ে ইসরাইলকে আমেরিকার বার্তা : সাংবাদিক এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা সর্বোচ্চ দায়িত্ব।

শনিবার ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষ থেকে মাত্র আট মিনিটে পর পর তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ফেলা হয় এফ–১৬ বিমান থেকে। নিমেষে নিশ্চহ্ন হয়ে যায় সেই বহুতল। সোমবার থেকে এই নিয়ে গাজার তিন নম্বর বহুতল।

চোখের সামনে নিজেদের কাজের জায়গা, মাথা গোঁজার আশ্রয়কে ধ্বংস হতে দেখলেন অসংখ্য মানুষ। এপি–র এক সাংবাদিক তুলে ধরলেন সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। ২০০৬ সাল থেকে ওই বহুতলেই দু’‌টি তল জুড়ে ছিল এপি–র দফতর।

শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১.‌৫৫। দুই তল বিশিষ্ট অফিসের দু’‌তলায় একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছিলেন ওই সাংবাদিক। আচমকাই সহকর্মীদের ধাক্কাধাক্কি। ঘোষণা, হাতে মাত্র ১০ মিনিট। পারলে জীবন বাঁচিয়ে নাও। কেন?‌ খালি করতে হবে বহুতল। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামলা করবে এই বহুতল ভবনে। শুনে গোটা বিষয়টি তখনো বোধগম্য করতে পারেননি ওই সাংবাদিক। ছুটে যান নিজের কাজের টেবিলে।

সেখানে সাজানো রয়েছে ৫ বছরের সংসার। একগুচ্ছ স্মারক। বন্ধুদের দেয়া কার্ড। অফিসের দেয়া সম্মানপত্র। কোনটা ছাড়বেন আর কোনটা তুলে নেবেন?‌ ল্যাপটপ, ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেট, পরিবারের ছবি আর মেয়ের দেয়া কফি মগটাই তুলে নেন ওই সাংবাদিক। মেয়ে এখন মায়ের সঙ্গে থাকে কানাডায়। তার পাঠানো কাপ তো আর হাতছাড়া করা যায় না।

ব্যস, সব বুকে জড়িয়ে দুদ্দার করে দৌড়। অফিসে তখন পড়ে রয়েছে বিগত পাঁচ বছরের স্মৃতি। সহকর্মীদের সঙ্গে খুনসুটির জায়গা, আড্ডা দেয়ার ক্যান্টিন। সব। তবু ওটা ছিল তাদের অফিস। আর ওই বহুতল ভবনটির যাদের ঘর ছিল?‌ তারা?‌ তাদেরও তো হাতে ওই ১০ মিনিটেরই সময়। গোটা জীবন, সঞ্চয়, স্বপ্ন, সবই পিছনে ফেলে আসতে হয়েছে।

একবার মনে হয়েছিল, এ রকম হয়তো করবে না ইসরাইল। নাহ্‌। ছাড় দেননি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পর পর তিন ক্ষেপণাস্ত্র। ধুলোয় মিশে গেল বহুতল ভবনটি। ওই বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের সঙ্গেই সাংবাদিকরাও তাসের ঘরের মতো ভাঙতে দেখলেন তাকে। আট মিনিট ধরে।

ওই সাংবাদিকের কথায়, যেন এক বাটি চিপসে কেউ ঘুষি মেরেছে। চার দিকে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। যদিও এই বহুতল ভবনের কেউ হতাহত হননি।

তার পর?‌ আট মিনিট পর উল্টা দিকের রাস্তাতেই বসে পড়েন। খুলে ফেলেন ল্যাপটপ। লেখা শুরু করেন প্রতিবেদন। এই অভিজ্ঞতা যে বলতে হবে গোটা দুনিয়াকে!‌ পকেটে এখন সেই চাবি, যেই ঘর আর নেই।

সূত্র : আজকাল


আরো সংবাদ



premium cement