২১ মে ২০২৪, ০৭ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫
`


‘আমার আর থাহার কোন জাগা নাইরে বাজান!’

‘আমার আর থাহার কোন জাগা নাইরে বাজান!’ - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘বাড়ীতী তিনড্যা ছাপড়া ঘর আছিল। তা ঘুণ্নিঝড়ে ভাইঙ্গ্যা ফ্যালাইছে। ইট্টু-ইট্টু দুইড্যা মনা আমার, ওগে নিয়্যা আমি কুথায় থাকবো রাইতি? এহনতো এই খুলা আকাশের নিচে ঘুমানু ছাড়া আমার আর থাহার কোন জায়গা নাইরে বাজান!’

ঘুর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়নের চাপখন্ড গ্রামের কৃষক বিল্লাল শেখের (৫৫) স্ত্রী গৃহিণী আলেয়া বেগম। ছোট ছোট দুটি সন্তান রয়েছে তাদের।

শুক্রবার (১০ মে) সারাদিন বিধ্বস্ত মালামালের পাশে বসে বিলাপ করছিলেন স্বামী স্ত্রী। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে কালবৈশাখীর ঝড়ে মুহূর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি, গাছপালা সব তছনছ করে দিয়ে গেছে।

তাদের ঘরের মালসামানা এমনকি চাল-ডালও নষ্ট হয়ে গেছে। শুকনো কিছু চিড়ামুড়ি ছাড়া জোটেনি খাবার। হতদরিদ্র এই পরিবারের পাশে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে দাড়াতে দেখা যায়নি কাউকে।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বৃহস্পতিবার বিকেলে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়েছে গাছপালা। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের পিলার ভেঙ্গে পড়েছে। পড়ে গেছে ঘরবাড়ি, উড়ে গেছে টিন।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শুরু হয়ে ঘণ্টাব্যাপী কালবৈশাখী এ তাণ্ডব চালায়। শুক্রবার দুপুর ৩টার সময়ও বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার প্রায় ৩০টি গ্রাম বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ঝড়ে কোনো এলাকায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

শেখর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইস্রাফিল মোল্লা জানান, সহস্রাইল বাজারের ১২টি ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেছে। বাজারের অনেক ঘরে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজসহ অন্য মালামাল ছিল। শেখর ও রূপাপাত ইউনিয়নে প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক এলাকায় এখনো গাছে টিন বেধে রয়েছে এবং বিদ্যুতের পিলার ভেঙে বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছে গ্রামগুলো।

আলফাডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার ওবায়দুর রহমান জানান, সন্ধ্যার কালবৈশাখীর ঝড়ে বোয়ালমারীর সহস্রাইল বাজার থেকে আলফাডাঙ্গা সড়কে বড় কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে ছোটবড় যান চলাচল ব্যাহত হয়। খবর পেয়ে আমরা গাছপালা অপসারণ করি। এই এলাকায় যান চলাচল এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এস এম নাসির উদ্দিন বলেন, জেলার ৯০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌছে গেছে। পিলার ভাঙ্গা বা তার ছেড়া এলাকায় রাতেই মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য কাজ চলছে।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মেহেদী হাসান জানান, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ করা হচ্ছে।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো: কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, খবর পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা শুরু করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতাসহ পুনর্বাসন করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement