২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


করোনায় অধূমপায়ীদের থেকে ধূমপায়ীদের মৃত্যু ৩ গুণ বেশি

গবেষণার তথ্য
-


বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীতে অধুমপায়ীদের চেয়ে ধূমপায়ী রোগীদের মৃত্যুর হার তিন গুণ বেশি ছিল এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সংক্রান্ত এক গবেষণার ফল প্রকাশ করে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারীতে ধূমপায়ীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ৬.৬ শতাংশ, ধোঁয়াবিহীন তামাক বা এসএলটি (জর্দা-গুল-সাদা পাতা) ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪.৪ শতাংশ এবং অধূমপায়ীদের মধ্যে ২.১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ‘দ্য রিলেশনশিপ বিটউইন স্মোকিং অ্যান্ড কোভিড-১৯ আউটকামস ইন টার্মস অফ মর্বিডিটি অ্যান্ড মর্টালিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই গবেষণা পরিচালনা করে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার’ ১২ জুন ২০২০ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ১২৭,০৭১ জন সেবা গ্রহীতার মধ্যে ১৬০৭ জনের উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: রোকেয়া সুলতানা এমপি। তিনি বলেন, তামাকের ভয়াবহতা রুখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নানা গবেষণা ও পরিসংখ্যান দিয়ে আমরা সহজেই বুঝতে পারি তামাক আমাদের জন্য কত ক্ষতিকর। তাই তামাক রুখতে সবার অংশগ্রহণ একান্ত জরুরি এবং আমরা যেকোনোভাবে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: মো: আবদুল আজিজ এমপি বলেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশের আন্দোলন এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাইকে কাজ করতে হবে। করোনার সাথে ধূমপানের সম্পর্কের নিরূপণে যে গবেষণা করা হয়েছে তার ফলাফলে আমরা শঙ্কিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আফতাব উদ্দীন সরকার এমপি বলেন, সংক্রামক এবং অসংক্রামক রোগসহ তামাকের অন্যান্য ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের তামাক চাষ নিয়েও সচেতন হতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে তামাকের নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

ডা: আবু সালেহ মো: নাজমুল হক এমপি বলেন, ধূমপান এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা গবেষণার ফলাফলে দেখতে পাই যে ধূমপানের পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাকের প্রভাবেও করোনায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি এই বিপুল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে।
কানন আর বেগম এমপি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করতে প্রয়োজনে পাঠ্যবইয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়বে এবং তামাকের বিস্তার রোধ করা যাবে।
অরুণা মুক্তি গোমেজ এমপি বলেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে ধূমপান এবং তামাকের ক্ষতি নিয়ে গবেষণা আরো বেশি দরকার। পাশাপাশি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলন করতে হবে।
ধূমপান, পরোক্ষ ধূমপান এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকের সাথে কোভিড-১৯-এর মৃত্যুহার এবং অসুস্থতার সম্পর্ক নিরূপণে পরিচালিত গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র এবং গণপরিবহনকে ১০০ ভাগ ধূমপানমুক্ত রাখা, কার্যকর করারোপের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধি করে তামাক পণ্য তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে রাখা, তামাকের যেকোনো প্রচারণা নিষিদ্ধ করাসহ বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারাকে শক্তিশালী করে তামাকের বিস্তার রোধ করা জরুরি।
একই সাথে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং তামাক সম্পর্কিত চিকিৎসা এবং তামাক ব্যবহার রোধে কার্যকর কাউন্সিলিংও করতে হবে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং ৭০ কোটি ৪০ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ২২ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৯৩ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৯ জন। করোনা সময় থেকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার আওতায় স্বাস্থ্য বাতায়ন দেশে করোনা রোগীদের সেবা দানে সচেষ্ট ছিল।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মো: রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা গবেষণার ওপর প্রশ্নোত্তরপর্বে অংশ নেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement