জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলে বলেছেন, মানবাধিকারের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে সুরাহায় সুশীলসমাজের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ ও অনুকূল পরিবেশ দরকার।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গতকাল সোমবার সুশীলসমাজের প্রতিনিধি ও মানবাধিকারকর্মীদের সাথে মতবিনিময়ের পর এক টুইট বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে গুম, বাকস্বাধীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।
ব্যাচেলের সাথে মতবিনিময় শেষে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছি। একজন তার ভাই নিখোঁজ হওয়ার কথা বলেছেন। আদিবাসীরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। প্রতিবন্ধীরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। নারী নির্যাতন নিয়েও কথা হয়েছে। তিনি বলেন, মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশবিদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হচ্ছে, কিন্তু এর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছে না; তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব বিষয় ব্যাচেলের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার প্রধানের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, তিনি বলেছেন, তার কাছে কোনো জাদু নেই। এগুলো নিয়ে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেতে পারে। একটি নির্বাচন হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে না। পদ্ধতি ঠিক না থাকলে নির্বাচন হলেও মানুষ গণতন্ত্র পাবে না। ব্যাচেলে জানিয়েছেন, বিষয়গুলো নিয়ে তিনি সরকারের সাথে কথা বলবেন। সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন।
গুম নিয়ে কাজ করা ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, আমরা জোরপূর্বক গুমের ঘটনাগুলো ব্যাচেলের সামনে তুলে ধরেছি। তাকে জানিয়েছি, এই সরকারের আমলে ছয় শতাধিক মানুষ গুমের শিকার হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী খুশি কবীর জানান, আমরা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ভালো ও মন্দ দু’টি দিকই তুলে ধরেছি।
দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন মিশেল ব্যাচেলে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি জাদুঘরের পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার সাথে ছিলেন।
মিশেল ব্যাচেলে চার দিনের সফরে গত রোববার ঢাকায় আসেন। এ দিন তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সাথে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব বৈঠকে মন্ত্রীরা মানবাধিকার নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এ ছাড়া মানবাধিকার ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘের সাথে অব্যাহত সংলাপ ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সফরকালে ব্যাচেলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন এবং উদ্বাস্তু, সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলবেন। আগামীকাল বুধবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিন রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটিজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) বক্তব্য রাখবেন। এ ছাড়া তিনি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করবেন। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে ব্যাচেলে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা