২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিম্নচাপের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ায় লঞ্চ ট্রলার ফেরি চলাচল বন্ধ

-

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের ফলে ঢাকাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতা সঙ্কেত ঘোষণাসহ জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে। বিভিন্ন নৌবন্দর ও ফেরিঘাটে লঞ্চ, ট্রলার ও ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার সকাল থেকে শিমুলিয়া রুটে ফেরিসহ সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া রুটে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে ঘাট এলাকায় অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। বাড়তি যানবাহনের চাপ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঘাটে যাত্রীবাহী বাস-কোচ, মাইক্রো-প্রাইভেটসহ সহস্রাধিক যানবাহন ফেরি পারের অপেক্ষায় আটকে ছিল। যার মধ্যে পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এরই মধ্যে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ভোগ কয়েক গুণে বাড়িয়ে তুলেছে।
সূত্র জানায়, সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এ রুটে এমনিতেই যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আর এর সাথে যোগ হয়েছে বৈরী আবহাওয়া। এতে পদ্মা উত্তাল হয়ে উঠায় নৌপথের নির্দিষ্ট চ্যানেলে স্বাভাবিক ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। দুই দিন আগে আসা যানবাহনও রয়েছে পারের অপেক্ষায়। অপেক্ষমাণ যানবাহনের চাপ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। ফেরিঘাট এলাকায় অপেক্ষমাণ যানবাহনের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় তা টার্মিনাল ছাপিয়ে মহাসড়কে লাইন গড়িয়েছে। সব মিলিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।
ফেরি সেক্টর বিআইডব্লিউটিসির আরিচা আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ রুটে বর্তমানে ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। বহরের ফেরিগুলো পুরনো হওয়ায় মাঝে মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটিতে দু-একটি ফেরি সাময়িক মেরামতে রাখা হচ্ছে। দুর্ভোগ লাগবে যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। এতে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো অপেক্ষায় থাকচ্ছে।
এ দিকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যানজট কমাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উথলী সংযোগ মোড় থেকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে আরিচা পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তায় লাইনে সারিবদ্ধভাবে আটকে রাখা হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থায় পর্যায়ক্রমে তা ঘাটের দিকে ছাড়া হচ্ছে।
খুলনা ব্যুরো জানান, গভীর নিম্নচাপের কারণে সম্ভাব্য দুর্যোগের ক্ষতি এড়াতে খুলনায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চার লাখ ১৬ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি চিকিৎসার জন্য উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ১১৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন সভাপতিত্ব করেন।
সভায় জানানো হয়, পর্যাপ্ত অর্থ ও খাবার মজুদ আছে। ইতোমধ্যে খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, দুই লাখ টাকা এবং পর্যাপ্ত চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় চার হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবিক) জিয়াউর রহমান, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মো: সাইদুল ইসলাম, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দারসহ রেড ক্রিসেন্ট, আশ্রয়ণ ফাউন্ডেশন, নবযাত্রা, সিপিপি, ফায়ার সার্ভিস ও রূপান্তরের কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হাতিয়া (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, সাগরে নিম্নচাপজনিত ৪ নং হুঁশিয়ারি সঙ্কেত থাকায় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বুধবার থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। ফলে হাতিয়ার সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী সদরের সাথে সব রকমের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। দুই পাড়ে শতশত যাত্রী আটকা পড়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য ও জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
গত বুধবার রাত থেকে প্রবল ঝড়োবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। হাতিয়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৮০ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে বের হতে না পারায় শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে পড়েছে। নলচিরা ঘাট ও তমরদ্দি ঘাটের সর্ব প্রকার কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। দ্বীপ জুড়ে অন্ধকারময় এক পরিবেশ বিরাজ করছে।
হাতিয়া উপজেলা সিপিপি কর্মকর্তা বদিউজ্জামান জানান, সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম ৪নং হুঁশিয়ারি সঙ্কেত পাওয়ার পর সব প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ১৭৭টি সিপিপি ইউনিটে পতাকা উত্তোলন করাসহ সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা পরিষদে নিয়মিত আগাম প্রস্তুতিমূলক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভা চলছে। সৃষ্ট নিম্নচাপটি থেকে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে উপকূল অতিক্রম করা পর্যন্ত ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তা ছাড়া প্রবল বায়ু প্রবাহের কারণে অস্বাভাবিক জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, চট্টগ্রামে দুই দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। আর এতেই নগরীর অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন নগরীর হাজার হাজার মানুষ।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাধ তঞ্চঙ্গ্যা নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন স্থানে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের ওপর এখনো মৌসুমি বায়ু বলবৎ আছে। রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে, বিভাগের অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ দিকে টানা বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের কারণে নগরীর নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ষোল শহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বাকলিয়া, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, চকবাজার, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, বাদুরতলা, হালিশহর ছোটপুল, আগ্রাবাদসহ নগরীর বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চলে পানি উঠে গেছে। অনেকের বাসাবাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। গতকাল শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকায় লোকজন রাস্তাঘাটে বের হতে তেমন দেখা যায়নি।
অন্য দিকে টানা বৃষ্টিতে তাপমাত্রা বেশ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। আবহাওয়াভিত্তিক ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদারের তথ্যমতে, শুক্রবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি।


আরো সংবাদ



premium cement
কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২

সকল