৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কুষ্টিয়ায় হাটে পেঁয়াজের প্রচুর আমদানি, দামও বেশি

-

দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা কুষ্টিয়া। এখানকার হাট-বাজারে পেঁয়াজ আমদানি প্রচুর হলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তবে চড়া মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পেরে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন। এ দিকে প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে শহরের পাইকারি ও খুচরা বাজারে মূল্য এখন স্থিতিশীল। সারা দেশের মতো কুষ্টিয়ার সর্বত্র গত এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজ পাইকারি ও খুচরা মূল্যে কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা। পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়ে আর তখন থেকেই বাজারে প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে পেঁয়াজের উচ্চ মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার জেলার কুমারখালী উপজেলার পান্টি পেঁয়াজের হাট ছিল। আশপাশের কয়েকটি জেলায় পান্টি স্কুল মাঠের এই হাটটিতে বছরের সব সময় প্রচুর পেঁয়াজের আমদানি হয়। প্রতি শুক্রবার ফজরের নামাজের পর থেকেই এই হাটে পেঁয়াজ বেচাকেনা শুরু হয়। বেলা ১০টার মধ্যে বেচাকেনা শেষ হয়। পান্টি পেঁয়াজের হাটে গতকালও প্রচুর পেঁয়াজের আমদানি ছিল। স্কুলের পুরো মাঠটিতে পেঁয়াজ কেনা বিক্রি চলছিল। এই হাটে সবচেয়ে ভালো পেঁয়াজের পাইকারি দাম ছিল ৩১০০-৩২০০ টাকা মণ। এখানে প্রকার ভেদে পেঁয়াজের মণপ্রতি দাম ২৬০০-৩২০০ টাকা। এই হাটে গুটি পেঁয়াজের (বীজ) মণ ৩০০০ টাকা ছিল। শৈলকুপার ইসমাইল ব্যাপারী স্কুলের সাইকেল স্ট্যান্ডে পেঁয়াজ কিনে গুদামজাত করছেন। তিনি জানালেন, পেঁয়াজ ভেদে ২৮০০-৩০০০ টাকায় কয়েক হাজার মণ পেঁয়াজ কিনেছি রংপুরে নেয়ার জন্য। কুমারখালী মোহন নগর গ্রামের কৃষক আখতারুজ্জামান বলেন, বাড়িতে রাখা পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসছি। ২৯০০ টাকা মণে ১০ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করে অনেক লাভবান হয়েছি। তিনি জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ না এলে দেশের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ বিক্রি করে আরো লাভবান হবেন। তিনি আরো জানান, এলাকার বাড়িতে বাড়িতে প্রচুর পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। বেশি দাম পাওয়ার আশায় কৃষকেরা ঘরে পেঁয়াজ রেখে আস্তে আস্তে বিক্রি করছে। খেুজর বাড়িয়া গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক তোয়াজুদ্দিন কয়েক বস্তা গুটি পেঁয়াজ (বীজ) নিয়ে হাটে এসে ৩০০০ টাকা মণ বিক্রি করতে পেরে দারুণ খুশি। পান্টি হাটে মৌসুমি মজুদদারদের বেশি মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে। আবার অনেকে খাওয়ার জন্য বেশি করে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এ দিকে সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর পেঁয়াজের হাটে শুক্রবার প্রচুর পেঁয়াজের আমদানি ছিল। এই হাটে গুটি পেঁয়াজের (বীজ) আমদানি বেশি। এহাটে গুটি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৬০০০-৩২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ী বজলু জানান, হাটে প্রচুর পেঁয়াজের আমদানি। কৃষকেরা নিজ নিজ বাড়ি থেকে পেঁয়াজ হাটে আনছে। তা ছাড়া এখানে ব্যবসায়ীদের প্রচুর পেঁয়াজ মজুদ আছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এই হাটে গুটি পেঁয়াজের আমদানি প্রচুর। চাষিরা গুটি পেঁয়াজ বিক্রি করে বেশি লাভবান হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে পেঁয়াজের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তারা আশা করছে। এই কারণে অনেকে পেঁয়াজ বিক্রি না করে শেষ পর্যন্ত দেখার অপেক্ষায় আছে। এ দিকে কুষ্টিয়া শহরের পৌরবাজারের পেঁয়াজের আড়তে শুক্রবার ৭০-৭৫ টাকা পর্যন্ত পাইকারি এবং খুচরা ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে শহরতলী এবং গ্রামে পেঁয়াজের প্রতি কেজি খুচরা মূল্য ৯০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস জানান, দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা কুষ্টিয়া। এখানে চাহিদার থেকে দ্বিগুণের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলের পেঁয়াজের মান ভালো হওয়ায় অতিরিক্ত পেঁয়াজ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। বর্তমানে কুষ্টিয়ার কৃষকের ঘরে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। এখানে পেঁয়াজের কোনো সঙ্কট নেই। এখান থেকে প্রতিদিন টন টন পেঁয়াজ বাইরের জেলায় যাচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement