ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে ভোট ডাকাতির মহাসত্য প্রকাশ হওয়ায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আঁতে ঘা লেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ জন্য সরকারের মন্ত্রীরা ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) মুখ লুকাতে পারছে না। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নজীরবিহীনভাবে কারাগারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। তাকে আটকে রাখার পেছনে ব্যক্তির প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে গত বুধবার আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। তার সুচিকিৎসার জন্য পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে কোনো আবেদনই কারা কর্তৃপক্ষ রক্ষা করেনি, বরং সরকারের প্ররোচনায় কারা কর্তৃপক্ষ বেগম জিয়ার অসুস্থতাকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দেয়ারই চেষ্টা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তৈমূর আলম খন্দকার, অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক, কেন্দ্রীয় নেতা শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রুহুল কবির রিজভী লিখিত বক্তব্যে বলেন, চিকিৎসা শেষ না হতেই হাসপাতাল থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফেরত পাঠানো হয়েছে কারাগারে। তার অসুস্থতা সত্ত্বেও সেটিকে আমলে না নিয়ে বারবার আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। হয়রানি ও শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়ার জন্যই সরকারের সাজানো অসত্য মামলায় বেগম জিয়াকে ঘনঘন আদালতে উপস্থিত করা হচ্ছে। সরকারের কারসাজিতেই বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা হচ্ছে না ও জীবন এখন গভীর সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
টিআইবির রিপোর্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিআইবির রিপোর্টে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আঁতে ঘা লেগেছে। টিআইবি রিপোর্টে ভোট ডাকাতির মহাসত্য প্রকাশ হওয়াতে সরকারের মন্ত্রীরা ও নির্বাচন কমিশন মুখ লুকাতে পারছে না। সে জন্য আর্তচিৎকার করে সত্য লুকানোর চেষ্টা করলেও কোনো লাভ নেই। মানুষ যা জানার নির্বাচনের আগের দিন রাত থেকেই জেনেছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন সংগঠন নির্বাচনে মহাভোট ডাকাতি নিয়ে প্রতিবেদন, মন্তব্য ইত্যাদি করেছে। বিশে^র নানা গণতান্ত্রিক দেশ বলেছেÑ এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এই ভুয়া ভোটের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং তদন্ত দাবি করেছে।
রিজভী বলেন, বিশ^বাসী এই নির্বাচনকে ইতিহাসের নিকৃষ্ট নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছে। ক্ষমতা চিরদিনের জন্য কোলবালিশের মতো আঁকড়ে ধরে রেখে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই ভোটারদের ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির মধ্যে রেখে, বিরোধী দলকে কারাগারে ঢুকিয়ে, ভোটারদের আতঙ্কের মধ্যে রেখে, নির্বাচন কমিশনে মোসাহেবদের বসিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে পার পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ জীবন উৎসর্গ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে, তারা প্রয়োজন হলে জীবন দিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবে।
রিজভী বলেন, জনগণের টাকা ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে লোপাট করে এখন আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের আলমারীতে টাকা, লকারে টাকা, তোষকের নিচে টাকা, আর বেশির ভাগ টাকা উড়ে গেছে বিদেশে। চার দিকে তাদের টাকা গিজগিজ করছে। তাই নিশীথ রাতে ভোটের তেলেসমাতির হোতাদের মোটা অঙ্কের উৎকোচ ও ভূরিভোজের পাশাপাশি এখন বীরত্বের পদক দেয়া হবে। অর্থাৎ ভোট ডাকাতির জন্য এবার রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের পুরস্কার দেয়া হবে, যা নজীরবিহীন। আসলে শেখ হাসিনার কথন, বলন সবই নজীরবিহীন। শেখ হাসিনার পুলিশ-র্যাবের ভোট ডাকাতির দক্ষতা, মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের অম্লানবদনে ডাহা মিথ্যা কথা বলা, বিরোধীদের প্রতি শেখ হাসিনার রণং দেহী ভাব, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনে আদালত, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের তথাকথিত নিরপেক্ষতার গুঞ্জন আর কথায় কথায় বিরোধী দলের প্রতি ধমক ও হুমকি, ভোটারদের ভোট-বঞ্চনা করতে দীর্ঘ সময়ব্যাপী পরিকল্পনাও নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য কালো আইন তৈরি করা সবই নজীরবিহীন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতির মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার পর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে শুরু করে থানায় থানায় উৎসব চলছে। কেন এই উৎসব? এখন তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক দেয়া হবে কেন, এগুলো জাতি তা জানতে চায়। এটা কি গায়েবি মামলায় মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার পুরস্কার? বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জেলে ঢোকানোর ও তাদের এলাকা ছাড়া করার পুরস্কার? বিরোধী দলকে নির্বাচনী মাঠে নামতে না দেয়া ও পোস্টার লাগাতে না দেয়ার পুরস্কার? ধানের শীষের প্রার্থীদের গুলি, হামলা করার পুরস্কার? বাংলাদেশ থেকে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার কৃতিত্বের জন্যই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে বলে জনগণ বিশ^াস করে।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সদর উপজেলার রাজঘর গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রামটি এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। মহিলাদের ওপরও নির্যাতনের কারণে তারা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। বর্তমানে ইরি মওসুমে ধানের চারা রোপণের কাজে কোনো নারী-পুরুষ গ্রামে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। আমি আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর এহেন ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের প্রতি ধিক্কার এবং অবিলম্বে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। নিহত বিএনপি কর্মী ইসরাইলের রূহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান রিজভী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা