২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেসবুকে ডাক্তার পরিচয়ে একাধিক তরুণী ও গৃহবধূর সঙ্গে প্রতারণা

চুয়াডাঙ্গা - প্রতীকী ছবি

ফেসবুকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের একাধিক তরুণী ও গৃহবধূকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ছবির আদান-প্রদান এবং পরে অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ভরি ভরি সোনার গয়না ও নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দুই স্কুলছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।

শুক্রবার দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া স্কুলছাত্ররা হলো- কুড়ুলগাছি গ্রামের লাল মোহাম্মদ পল্টুর ছেলে প্রতারণার মাস্টার মাইন্ড ডাক্তার পরিচয় দেওয়া মোস্তাইন আহম্মেদ বাপ্পী (১৮)। সে একই এলাকার দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র। গ্রেফতার হওয়া অপরজন হলো একই এলাকার সফিউল হোসেনের ছেলে তার সহযোগী শামীম হোসেন (১৭)। সে কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

জানা যায়, প্রতারক বাপ্পী তার এক বন্ধুর মারফত জানতে পারে, মেহেরপুর জেলায় এক তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরণের প্রতারণার শিকার হয়ে বেশ কিছু টাকা-পয়সা খুইয়েছেন। ওই ঘটনা থেকেই বাপ্পী প্রতারণার ফাঁদ পাতা শুরু করে। সোনার গয়না ও টাকা-পয়সা নেয়ার জন্য শামীমকে সহযোগী হিসেবে সঙ্গে নেয় সে।

দুই-তিন মাস আগে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের মাঝেরপাড়ার এক তরুণীকে ফাঁদে ফেলে বাপ্পী। ফেসবুকে এডিট করে সুন্দর ছবি দিয়ে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। সুন্দর কথা-বার্তার মাধ্যমে ওই তরুণীর বিশ্বাস অর্জন করে শুরু হয় বিবস্ত্র ছবি চাওয়া। ডাক্তার ছেলে হাত ছাড়া হওয়ার ভয়ে একটা সময় ওই ধরণের বিবস্ত্র ছবি দিয়েই ফাঁদে পড়ে মাঝেরপাড়ার ওই তরুণী। পরে ওই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে কিছু টাকা-পয়সাসহ দুটি মোবাইলের সিম কার্ড চায় প্রতারক বাপ্পী। পরে ওই তরুণী তার বড় ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা দুটি সিম দেয় বাপ্পাীকে।

নতুন দুটি সিম হাতে পেয়ে ফেসবুকে নতুন আইডি খুলে তার দ্বিতীয় শিকার হয় চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার এক কলেজছাত্রী। ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে ডাক্তার পরিচয়ে শুরু হয় প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্ক গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই কলেজছাত্রীর কাছেও বাপ্পী বিবস্ত্র ছবি চায়। তার ছবি পেয়ে তাকেও ভয়-ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় দুই-তিন ভরি সোনার গয়না। পরে আবার তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে প্রতারক বাপ্পী। ওই কলেজছাত্রীর পরিবার ঘটনাটি জানতে পেরে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে মাঠে নামে পুলিশ।

একপর্যায়ে সিমের মলিক মাঝেরপাড়ার ওই তরুণীর ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, সিম দুটি তিনি তার বোনকে দিয়েছেন। পরে তার বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারে পুলিশ।

এদিকে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে সঙ্গে মাঝেরপাড়ার আর এক গৃহবধূকে ফাঁদে ফেলে প্রতারক বাপ্পী। ওই গৃহবধূর কাছ থেকেও বিবস্ত্র ছবি নিয়ে তাকেও ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রথমে তার কাছ থেকে কিছু টাকা নেয় বাপ্পী। পরে সোনার গয়ণা বিক্রি করে টাকা দিতে বললে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।

একই ঘটনার দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর ও উপপরিদর্শক (এসআই) জসিমসহ সদর থানা পুলিশের একটি টিম তাদের তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে গতকাল দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা ও সোনার গয়না নেয়ার কথা স্বীকার করাসহ সোনার গয়নাগুলো গলিয়ে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করার কথাও তারা স্বীকার করেছে বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশ আরো বলছে, মান সম্মানের ভয়ে এ ধরণের প্রতারণার শিকার অনেক পরিবারই অভিযোগ না করলেও এরা আরও অনেককেই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অনুমান করছে তারা।

প্রেমের ফাঁদে ফেলে সোনার গয়না ও নগদ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় জড়িত বাপ্পাী ও শামীমকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর বলেন, গত ২৪ জুন ও ৪ জুলাই এই প্রতারণার বিষয়ে দুটি অভিযোগ আসে সদর থানায়। প্রথম অভিযোগ আসার পর থেকেই প্রতারক চক্রটিকে আটক করতে মাঠে নামে পুলিশ।

তিনি আরো বলেন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে তাদেরকে আটক করা সম্ভব হলেও হাতিয়ে নেয়া টাকা ও সোনার গয়নাগুলো উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।


আরো সংবাদ



premium cement