০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ফলাফল শূন্য, তুলে নেয়া হলো কুষ্টিয়ার লকডাউন

-

করোনা রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকলেও জনগণকে করোনার ঝুঁকিতে রেখে তুলে নেয়া হলো কুষ্টিয়া শহরের লকডাউন। এই ১৫ দিনে রোগীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনিভাবে মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে দ্বিগুন। তার পরেও এতবড় একটি ঝুঁকির মধ্যে প্রশাসন লকডাউন তুলে নেয়ায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক আরো বেশি দানা বেঁধে উঠেছে।

বুধবার থেকে শহরের সমস্ত দোকানপাট-বিপণী বিতান সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

কুষ্টিয়া শহরের করোনা রোগীর সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে গত ২৪ জুন গোটা পৌর এলাকাকে রেডজোন ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে জেলা প্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়। পরদিন ২৫ জুন থেকে কুষ্টিয়া শহর তথা পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ডে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। বিধি অনুযায়ী ওষুধসহ কিছু নিত্যপণ্যের দোকান সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। শহরের মোড়ে মোড়ে চেকপোষ্ট বসিয়ে পুলিশ প্রশাসন শহরে যানবাহন প্রবেশ সীমিত করে দেয়। তবে বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন। লক ডাউন চলাকালীন সময়ে শধু মাত্র শহরের এনএস রোডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছাড়া সকল সরকারি, বেসরকারি, স্বায়িত্বশাষিত প্রতিষ্ঠান, এনজিও, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অফিস, কুষ্টিয়া চিনিকল, বিএটিবি, বিসিক শিল্পনগরীর সকল শিল্প কারাখানা, রেনইউক এন্ড যজ্ঞেস্বর ও খাজানগরের চাল মিল খোলা ছিল। পৌর এলাকার উন্নয়নমুলক কাজ ছিল সচল।

লক ডাউনের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের অনুমতি আবার অনেকে অনুমতি না নিয়ে খোলা রাখে। মানুষ-জনের কর্মব্যস্ততার কারণে ঘরের বাইরে বের হতে হয়েছে। ফলে লকডাউন ঘোষণা হলেও এর কার্যকরিতার কোনো সাদৃশ্য দেখা যায়নি ফলে প্রতি দিনই করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। আবার পুরো ২১ দিনের আগের কর্তৃপক্ষের এই ধরনের হটকারি সিদ্ধান্তে স্থানীয়রা হতবাক। টানা ১৫ দিন লকডাউন চলার পর মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ভার্চ্যুয়াল জরুরি বৈঠক করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি।

কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য সচিব সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত, কুষ্টিয়া চেম্বারের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জেষ্ঠ্য মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. মুসা কবির। দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার আলোচনা শেষে করোনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন জানান, এই আলোচনার বিষয়টি কানাডায় অবস্থানরত কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের সাথে কথা বলে সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শহরের লকডাউন তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানায় প্রশাসন। রাতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বুধবার থেকে শহরের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকানপাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এছাড়া যেসব বাড়িতে করোনা রোগী রয়েছে শুধুমাত্র সেসব বাড়ি আগের মতই লকডাউন থাকবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে ১৫ দিন ধরে চলা এ লকডাউন কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ লকডাউন চলাকালে করোনা রোগী কমার চেয়ে বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।

গত ২৫ জুন থেকে গত ৭ জুলাই পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরে ১৫৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৮ জন। এ হার লকডাউন শুরুর আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড এখন রোগীতে ঠাসা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা ওয়ার্ডে আর মাত্র ৩টি শয্যা খালি আছে। যে হারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে আগামীতে তাদের চিকিৎসা দেয়ায় মুসকিল হয়ে পড়বে। এ দিকে লকডাউন চলাকালে শহরের মারা গেছে ১৫ জন এবং মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮১৯ জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতেই ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন প্রত্যাহার করায় শহরে করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ বলে মনে করছে সচেতন মহল।


আরো সংবাদ



premium cement