২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


৬০ ভাগের বেশি দুর্নীতি রাজনৈতিক প্রভাবে

সিজিএস ও সিআইপিইর যৌথ জরিপ
-

বাংলাদেশের ৬০ ভাগেরও বেশি দুর্নীতির ঘটনা ঘটে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে। এ ছাড়া ৪৬ শতাংশ চাঁদাবাজি, ৪৪ শতাংশ স্বজনপ্রীতি ও ৪৩ শতাংশ মাত্রাহীন পৃষ্ঠপোষকতা দুর্নীতির কারণ। আর প্রায় ৭৮ শতাংশ দুর্নীতির ঘটনা ঘটে থাকে উৎকোচের মাধ্যমে। সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি এখনকার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিবিম্ব যা দেশের অর্থনৈতিক খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই) এর যৌথ উদ্যোগে এসএমই খাতের উপর চালানো সাম্প্রতিক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
এসএমই জরিপের তথ্য অনুসারে দুর্নীতির যে দুইটি সর্বাধিক পরিচিত মাধ্যম ওঠে এসেছে সেগুলো হচ্ছে উৎকোচ ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের ব্যবহার ৬০ দশমিক এক শতাংশ। এ ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে চাঁদাবাজি ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ, স্বজনপ্রীতি ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং মাত্রাহীন পৃষ্ঠপোষকতা ৪৩ দশমিক এক শতাংশ। এই ধরনের দুর্নীতিই আমাদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিবিম্ব স্বরূপ, যেটা আমাদের অর্থনৈতিক খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জাতীয় সরকারের দুর্নীতি (২৭.৬%) চেয়ে স্থানীয় সরকারের দুর্নীতি মাধ্যমে এস এম ই খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উৎকোচ, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক (৬৮.৪%), এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্কই হচ্ছে সহজে সেবা গ্রহণ এবং অবৈধভাবে টিকে থাকার তরিকা (৬৮.৪%)।
সম্প্রতি সেন্টার ফর গভন্যোন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের (সিআইপিই) যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের এস এম ই খাতের সাথে জড়িত ৮০০ জন জাতীয় প্রতিনিধি নিয়ে এস এম ই সেক্টরের বর্তমান অবস্থার উপর একটি জরিপ করা হয়। এদের মধ্যে ৪০০ জন উৎপাদন খাত এবং ৪০০ জন সেবা খাতের সাথে সম্পৃক্ত। এই জরিপটি ২০২১ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পরিচালিত হয়।
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে, অর্ধেকের বেশি (৫২.০৬%) অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন যে কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় পরিষেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের ঘুষ প্রদান করতে হয় যেমন- নতুন লাইসেন্স তৈরি এবং নবায়ন, সরকারি সেবা ব্যবহার, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিন) সংগ্রহ, ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) সনদপত্র সংগ্রহ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে । প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন মনে করেন যে দুর্নীতি একটি সংক্রামক ব্যাধি। একটি বড় অংশ (৬২.৪%) বিশ্বাস করেন, প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যেই দুর্নীতির শেকড় অন্তর্নিহিত এবং আরো অধিকসংখ্যক (৭১.৩%) মনে করেন যে, দুর্নীতির অত্যধিক উপস্থিতি বাজারকে আরো অসম প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। অর্ধেকেরও বেশি উত্তরদাতা মনে করেন, বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে কঠোর সরকারি নিয়মকানুন দুর্নীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই সমস্ত ধারণার কারণে জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ এসএমই উদ্যোক্তা (৬১%) অনৈতিক পথ বেছে নিয়েছেন।
নতুন লাইসেন্স তৈরি এবং নবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিশেষ উপস্থিতি (যথাক্রমে ৩৬.৪% এবং ৩১.৮%) পরিলক্ষিত হয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ লোক যারা ঘুষ প্রদান করেছেন, তাদের মধ্যে ধারণা বিদ্যমান যে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ঘুষ প্রদান করা প্রয়োজন এবং ঘুষ প্রদান সময় বাঁচায় । দুর্নীতির সব থেকে বড় জায়গাগুলো হচ্ছে লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশনসংক্রান্ত অফিসগুলো (২৮.৮%), ট্যাক্স অফিস (২১.৬%), স্থানীয় সরকার /সিটি করপোরেশন/ পৌরসভা (১৯.৫%), ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস (১৩.৫%), পরিবেশ অধিদফতর (১২.৩%), এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো (১০.৬%)। এসব তথ্য এটাই নির্দেশ করে, যেখান থেকে উদ্যোক্তাদের জনসেবা নেয়ার কথা, সেখানেই তারা বেশি দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন।
বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারীর মতে, অর্থ সম্পদের প্রতি লোভ এবং সেই সাথে সরকারের উচ্চপর্যায়ে স্বচ্ছতার অভাবই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করে। তবে এ ছাড়াও বেশ কিছু কারণের কথা তারা উল্লেখ করেছেন। এসএমই থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সব থেকে বেশি যে ক্ষেত্র দুইটির কথা ওঠে এসেছে সেগুলো হচ্ছে দুর্নীতিবিরোধী আইনের অনিয়মিত প্রয়োগ (৮৬.২%) এবং দুর্নীতিবিরোধী আইনের একদমই প্রয়োগ না করা (৭৯.৫%)। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে পেশাদারিত্বের অভাব (৭৭.৪%), সেই সাথে সেবাদানের ক্ষেত্রে ঘুষের জন্য অনুরোধ (৭৩.৯%) সেবাগ্রহণকারীদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়, যেখানে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ অথবা বিশেষ সুবিধা ভোগের প্রতি চাহিদা (৭৩.৯%) দুর্নীতিকে আরো উৎসাহিত করছে।
ব্যাপকহারে বিস্তৃত দুর্নীতির তুলনায়, অভিযোগ প্রদানের হার অত্যন্ত কম। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা কোনো না কোনো একপর্যায়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন, যার মধ্যে ৭০% বলেছেন যে তারা অভিযোগ প্রদান করে নেতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন।
যদিও সরকার বারবার বলছেন যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা “জিরো টলারেন্স নীতি” গ্রহণ করেছেন, কিন্তু অর্ধেকের ও কম (৪৬%) অংশগ্রহণকারী মনে করেন যে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতিরোধে সত্যিই কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এদের আবার বেশির ভাগই মনে করেন না যে এই ধরনের কর্মকাণ্ড কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারের দুর্নীতি প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর গবেষণায় দেখা যায়, এখানে অন্যতম একটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগের পদ্ধতি। এখানে দুইটি বিষয় বিবেচনার দাবি রাখে- এক. অভিযোগ ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং দ্বিতীয়ত, সহজে অভিযোগ করা যাচ্ছে কি না। দুইটি ক্ষেত্রেই উত্তরদাতাদের সমানসংখ্যক ইতিবাচক ও নেতিবাচক উত্তর উঠে এসেছে । কাজেই আমরা বলতে পারি, অভিযোগব্যবস্থা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অনুকূলে না। হুইসেলব্লোয়ারদের অনিরাপত্তাও আরেকটি চিন্তার বিষয় যেখানে অধিকাংশ উত্তরদাতা (৭২.৮%) তাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
যেখানে অধিকাংশ উদ্যোক্তা (৫৫.১%) দুর্নীতি প্রতিরোধে তাদের ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট, ৭৮ শতাংশের এর বেশি এসএমই উদ্যোক্তারা স্বাধীনভাবে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি প্ল্যাটফর্মে যোগ দিতে আগ্রহী।
জরিপের প্রধান ফলাফলগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ৫২ শতাংশ এস এম ই প্রতিষ্ঠান কে ঘুষ দিতে হয়, ৯০ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস করে দুর্নীতি একটি সংক্রামক ব্যাধি, ৭১ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান মনে করে দুর্নীতির কারণে বাজারে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়, ৬১ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান ঘুষ দেয়ার মাধ্যমে সরকারি নিয়মকানুন এড়িয়ে যায়, নতুন লাইসেন্স সংগ্রহ এবং পুনঃনবায়নের ক্ষেত্রে ঘুষ আদান-প্রদান বেশি প্রচলিত, দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে ৭৮ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি উদ্যোগে একটি প্লাটফর্ম করতে ইচ্ছুক।


আরো সংবাদ



premium cement
প্রবীণ সাংবাদিক জিয়াউল হক আর নেই নোয়াখালীতে ফের নতুন গ্যাস কূপের সন্ধান, খনন উদ্বোধন বরিশালে তীব্র তাপদাহে ৩ স্কুলছাত্রী অসুস্থ বগুড়ায় জব মেলায় চাকরি পেলেন বেকার প্রকৌশলীরা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার নীলনকশা থামছে না : রিজভী তাজউদ্দীন মেডিক্যাল দুদকের অভিযান : নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য মিলেছে পূর্ব কালুরঘাটে বেইলিব্রিজে টেম্পু চাপায় কলেজশিক্ষার্থী নিহত কুবি শিক্ষকদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মী শনাক্ত দিনাজপুরে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ১ ভারতে মসজিদের ভেতর ইমামকে পিটিয়ে হত্যা তীব্র গরমে কাঁঠালিয়ায় এক শিক্ষার্থী অসুস্থ

সকল