০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গণতন্ত্র জোরদারের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

‘প্রতিবাদের অধিকার বিশ্ব স্বীকৃত’‘প্রতিবাদের অধিকার বিশ্ব স্বীকৃত’
-

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, মানবাধিকার, শ্রম অধিকারসহ মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা এবং শরণার্থীদের সুরক্ষা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল ওয়াশিংটনে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নিড প্রাইস এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে আমাদের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে। এই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আমরা অনেক ইস্যু তুলতে পারি ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে পারি। এই আলোচনা আমরা প্রকাশ্যে অথবা ব্যক্তিগতভাবে করে থাকি।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত মঙ্গলবার কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশ সম্পর্কে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বার্তা পাঠান। এতে তিনি নির্বাচন, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বার্তা সম্পর্কে ওয়াশিংটনে নিড প্রাইসের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দেয়া এবং নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মা নদীতে চুবানো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী প্রতিবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মুখপাত্র বলেন, সমাবেশের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদের অধিকার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশের জন্যও এটি সমানভাবে প্রযোজ্য। আমরা নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এই অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানাই।


আইপিইএফ সম্পর্কে তথ্য চায় বাংলাদেশ : ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক রূপরেখা (আইপিইএফ) সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরো তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল ওয়াশিংটনে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি এবং পরিবেশবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হোসে ডব্লিউ ফার্নান্দেজ বৈঠকে সহ-সভাপতিত্ব (কো-চেয়ার) করেন। বৈঠক শেষে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে উভয় দেশ সহমত পোষণ করে। গত মে মাসে যাত্রা শুরু হওয়া আইপিইএফ সম্পর্কে বৈঠকে বাংলাদেশকে অবহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর উত্তরে বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন এবং ডিকার্বোনাইজেশন পিলার সম্পর্কে আরো তথ্য চেয়েছে। এ ছাড়া সমুদ্র সম্পদ আহরণ এবং সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এতে বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্সিং করপোরেশন (ডিএফসি) তহবিল থেকে অর্থ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সাথে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) রোডম্যাপ বাস্তবায়নের ওপর যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বারোপ করেছে।
এ ছাড়া আইএলওর রোডম্যাপ বাস্তবায়নে দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ নেয়া, শ্রম সংস্কার এবং শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। ডিএফসির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করে থাকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় শ্রমমান সন্তোষজনক না হওয়া এই তহবিল থেকে বাংলাদেশে অর্থায়ন করতে পারছে না সংস্থাটি।


এদিকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞতিতে জানানো হয়েছে, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা, পণ্য উৎপাদন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আরো মার্কিন বিনিয়োগ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ডিএফসির অর্থায়নের জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের জন্য একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সাথে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক ফ্রিল্যান্সারদের সুবিধা গ্রহণ করে হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করার জন্য মার্কিন তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করেন।
উভয়পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য শক্তি, সুনীল অর্থনীতি, কোভিড-১৯, পর্যটন এবং বেসামরিক বিমান চলাচলে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছে। ঢাকা ও নিউইয়র্কের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট আবারো চালু করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। উভয় দেশের প্রতিনিধিরা এ জন্য একযোগে কাজ করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য উভয়পক্ষ একমত পোষণ করেছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের ভিসা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উভয়পক্ষ ২০২৩ সালে ঢাকায় সুবিধাজনক সময়ে তৃতীয় অর্থনৈতিক আলোচনা আয়োজন করতে সম্মত হয়।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও বেগম শামসুন নাহার, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সহিদুল ইসলামসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কেলি কেইডারলিং, অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টোফার উইলসন, শ্রম বিভাগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি থিয়া লি এবং সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement