২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


মন্দঋণ ও ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ আইএমএফের

-

- প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৪% এবং মূল্যস্ফীতি বছরজুড়ে থাকবে ৯.৪% ঘরে
- ঋণের তৃতীয় কিস্তি ১১৫ কোটি ডলার ছাড় করতে সম্মত আইএমএফ

মন্দঋণ কমিয়ে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারকার্যক্রম জোরদার এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
পক্ষকালব্যাপী বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের পক্ষ থেকে এ সুপারিশ করা হয়। ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বাধীন আইএমএফের মিশন এই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবারো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার কম হবে। এই হার হতে পারে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে, পুরো অর্থবছরজুড়ে মূল্যস্ফীতির দাপট চলবে। ফলে বছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকবে ৯ দশমিক ৪ শতাংশের ঘরে।
আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশকে ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। আইএমএফের একটি দল ইসিএফ/ ইএফএফ/ আরএসএফ ব্যবস্থাপনার আওতায় দ্বিতীয় পর্যালোচনা শেষ করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে স্টাফ লেভেল চুক্তিতে পৌঁছেছে।
চুক্তিটি ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতার নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে হবে এবং আগামী সপ্তাহে হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় পর্যালোচনা শেষ হলে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ)/ এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) আওতায় প্রায় ৯৩২ মিলিয়ন ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় প্রায় ২২০ মিলিয়ন ডলার পাওয়া পাবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বোর্ডের অনুমোদন পেলে বাংলাদেশ প্রায় ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, কর্মসূচির অধীনে কাঠামোগত সংস্কারে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য একটি সূত্রভিত্তিক জ্বালানি মূল্য সমন্বয় প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও, বৈশ্বিক আর্থিক অবস্থার কড়াকড়ি থেকে প্রত্যাশিত-বৃহত্তর স্পিলওভার এবং এখনো উচ্চতর আন্তর্জাতিক পণ্য ও খাদ্যের দাম, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সাথে এক হয়ে ক্রমাগত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের দিকে পরিচালিত করেছে। এটি অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়িয়েছে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের জটিলতা বাড়িয়েছে।

বলা হয়, বিনিময় হার পুনরুদ্ধার করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাহসী পদক্ষেপকে আইএমএফ স্বাগত জানায়। খুচরা সুদের হারের উদারীকরণের পর, মুদ্রানীতির অতিরিক্ত কড়াকড়ি বিনিময় হার সংস্কারের ফলে যেকোনো মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমাতে সাহায্য করবে। রাজস্বভিত্তিক একত্রীকরণের মাধ্যমে আর্থিক নীতির এই আর্থিক কঠোর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা উচিত। যদি বাহ্যিক এবং মুদ্রাস্ফীতিজনিত চাপ তীব্র হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষকে নীতি আরো কঠোর করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
আইএমএফ প্রতিনিধি বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে সংস্কারের গতি এবং চলমান প্রচেষ্টা বজায় রাখা অপরিহার্য। পলিসি পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু করার সাথে সাথে সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংস্কার কর্মসূচি বাংলাদেশকে একটি কঠিন বাহ্যিক পরিবেশে নেভিগেট করতে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে সাহায্য করবে, যেখানে অর্থনৈতিক সংস্কারকে ত্বরান্বিত করবে এবং টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তাদের জলবায়ু এজেন্ডা প্রদান করবে।
এদিকে, গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক শেষে ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই বলে দাবি করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। তিনি বলেন, আইএমএফ নতুন করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আয় বাড়ানো, সুদহারের বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছে। জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবেলার পরামর্শ অনুসরণ করে চলতি বছরই কাজ শুরু করবে সরকার। বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল ঋণের শর্ত ও সংস্কারের কতটা অগ্রগতি এবং আরো কতটা করতে হবে সেসব বিষয়ে সুপারিশের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেছে বলে জানান অর্থ প্রতিমন্ত্রী।
করের হার বা আওতা বাড়ানোর যে আলোচনা আছে, তাতে মানুষের কষ্ট বাড়বে কি- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শর্ত পূরণ করতে গিয়ে মানুষের জন্য ভোগান্তি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না বাংলাদেশ।
আইএমএফ প্রতিনিধিদলের বৈঠকের বিষয়ে অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, ১০টি শর্তের মধ্যে বাংলাদেশ কেন একটি পূরণ করতে পারেনি তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ পক্ষ। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে জুনে রিজার্ভে যোগ হতে পারে তৃতীয় কিস্তির টাকা।

 


আরো সংবাদ



premium cement