২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


বাজারভিত্তিক হলো ঋণের সুদহার

-


টাকার সঙ্কট দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ধার করে ব্যাংকগুলো। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সুদ গুনতে হয়। ব্যাংকিং ভাষায় একে রেপো বলা হয়। আর এ রেপো হারকে নীতিসুদহার বলা হয়। নীতি সুদহার বাড়লে বেড়ে যায় ব্যাংক ঋণের সুদহার। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন এক নির্দেশনায় নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে সাড়ে ৮ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করেছে। আগে যা ছিল ৮ শতাংশ। একই সাথে ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণের বিদ্যমান পদ্ধতি অর্থাৎ স্মার্ট সুদহার পদ্ধতি তুলে দেয়া হয়েছে। বাজারভিত্তিক করা হয়েছে ব্যাংক ঋণের সুদহার। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পৃথক দুইটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, সরকার ব্যাংক থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বেশি সুদে ঋণ নিচ্ছে। আর এ বাড়তি সুদের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে ব্যাংক ঋণের সুদহারের ওপর। কারণ, নতুন পদ্ধতিতে সুদ হার নির্ধারণ করা হচ্ছে সরকারের ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহারের ভিত্তিতে। আর এ পদ্ধতি চালু হয়েছে গত বছরের জুলাই থেকে। সঙ্কোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে এর সুদহার ক্রমেই বেড়ে চলছে। ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সাথে নির্দিষ্ট অংশ যোগ করে সুদ নির্ধারিত হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসেই সুদহার বাড়ছে।
যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, সেটি পরিচিত স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, জুলাইয়ে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে যা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা আরো বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এভাবে প্রতি মাসেই এ স্মার্ট রেট বেড়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরে স্মার্ট রেট বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে আরো বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ স্মার্ট রেট ৮ শতাংশের ঘরে চয়ে যায়, যা থাকে পর পর দুই মাস। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ডিসেম্বরে স্মার্ট রেট বেড়ে হয় ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত মাসে এক লাফে প্রায় এক শতাংশ বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে স্মার্ট রেট ছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ থেকে আড়াই শতাংশ বৃদ্ধি করে গড় সুদহার ১০ শতাংশের ওপরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ স্মার্ট হার তুলে দেয়া হয়েছে। ঋণের সুদহার এখন বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদহার আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ দিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক । চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে গত বছরের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। এই অবস্থায়, আগেও কয়েকবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা ছিল এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই বছরের জানুয়ারিতে তা আরো ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়। গতকাল তা আরো বাড়িয়ে করা হয় সাড়ে ৮ শতাংশ।
শিল্প উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এক দিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। অপর দিকে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। ফলে সবদিক থেকেই বেড়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ী ব্যয়। কিন্তু একই সাথে ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ী ব্যয় তাদেরকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। এ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে হারে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখে ওই হারে পণ্যের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। এতে তাদের মুনাফার অংশ কমে যাচ্ছে। অনেকেই লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। ব্যাংকের ঋণ ঠিক মতো পরিশোধ করতে না পেরে ব্যাংকের খাতায় ঋণখেলাপি হিসেবে যুক্ত হচ্ছেন। আর একবার ঋণখেলাপি হলে নতুন করে পণ্যের এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়ছে। সবমিলেই শিল্পোক্তারা একপ্রকার কঠিন সময় পার করছেন। অনেকেই লোকসানের ধকল কাটাতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
এ দিকে ভোক্তারাও বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছেন। যে হারে ব্যয় বাড়ছে, বিপরীতে তাদের আয় বাড়ছে না। ফলে বিদ্যমান আয় দিয়ে ভোগ ব্যয় কমিয়ে দিয়ে দিন পার করছেন। কিন্তু এটা কতদিন চালাতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement