২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


ইসরাইল মানছে না যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব, ফের শুরু আলোচনা

ইসরাইলি বর্বরতায় রাফা ছাড়ছেন ফিলিস্তিনিরা : আল জাজিরা -

- রাফায় হামলার জেরে ইসরাইলে অস্ত্র চালান স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র
- ইসরাইলের গাজা ক্রসিং বন্ধ করা অগ্রহণযোগ্য : যুক্তরাষ্ট্র
- গাজায় বোমা হামলায় একই পরিবারের ৭ জন নিহত

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে আবার মিসরের কায়রোয় গেছেন ইসরাইলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু এবারো চুক্তি হবে কি না তা নিয়ে রয়ে গেছে প্রশ্ন। মধ্যস্থতাকারীরা একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ইসরাইল ও হামাস। দুই পক্ষই রাজি হয় এমন একটি প্রস্তাব মধ্যস্থতাকারীরা এখনো দিতে পারেননি।
সোমবার মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য একটি প্রস্তাব দেয়ার পর ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস তাতে রাজি হয়। কিন্তু প্রস্তাবটিতে বাদ সেধেছে ইসরাইল। কায়রোয় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলোচনায় উপস্থিত হয়ে ইসরাইলের প্রতিনিধিরা মধ্যস্থতাকারীদের দেয়া প্রস্তাবটির চারটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই আছে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি করার বিষয়টি।
ইসরাইলের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবে যুদ্ধ অবসানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এমন হলে নারী সেনারা অনেক দেরিতে মুক্তি পেতে পারে- এমন আশঙ্কা আছে বলে তারা মনে করেন। প্রস্তাবে প্রথম ধাপে ৩৩ জন বন্দীকে জীবিত কিংবা মৃত যেভাবেই হোক মুক্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল চায় ৩৩ জন বন্দীকে জীবিত মুক্তি দিক হামাস।

এছাড়াও প্রস্তাবে হামাসের দেয়া তালিকা অনুযায়ী ইসরাইলের জেলে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে, যেখানে কারো মুক্তির ক্ষেত্রে ইসরাইলের কোনো ভেটো ক্ষমতা থাকবে না। কিন্তু ইসরাইল বলছে, তারা কোনো বন্দীকে মুক্তি দেবে বা দেবে না তা নির্ধারণ করতে তাদের ভেটো ক্ষমতা থাকতে হবে। প্রস্তাবে উত্তর গাজায় ফিরে যাওয়া অধিবাসীদের কোনো নিরাপত্তা তল্লাশি ছাড়া অবাধে চলাফেরা করতে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল বলছে, হামাস বন্দুকধারীদের প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে নিরাপত্তা তল্লাশির প্রয়োজন রয়েছে।
বিষয়গুলো নিয়ে ইসরাইলের আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে লড়াইয়ে এক সপ্তাহের বিরতির পর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান বেরিয়ে আসেনি।
ইসরাইলে অস্ত্র চালান স্থগিত : ইসরাইলে অস্ত্রের একটি চালান গত সপ্তাহে স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা নগরীতে ইসরাইলের আক্রমণের তোড়জোড়ের বিরোধিতা করে এ পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বাইডেন প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছেন। রাফায় ইসরাইলের সর্বাত্মক হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করছেন বাইডেন। গাজায় চলমান যুদ্ধে প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি অন্যান্য জায়গা থেকে সরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে এই নগরীতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, রাফায় আক্রমণ চালানোর জন্য ইসরাইলি নেতারা সিদ্ধান্ত নেয়ার দিকে এগোচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। তাই ইসরাইলকে বিশেষ অস্ত্র দেয়ার প্রস্তাবটি আমরা সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে দেখতে শুরু করেছি। সেই পর্যালোচনার ফলস্বরূপ আমরা গত সপ্তাহে অস্ত্রের একটি চালান স্থগিত করেছি। এই চালানে ছিল ১,৮০০টি ২,০০০ হাজার পাউন্ড (৯০৭ কেজি) এবং ১,৭০০টি ৫০০ (২২৭ কেজি) পাউন্ড ওজনের বোমা। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশেষ করে দুই হাজার পাউন্ড ওজনের বোমার ব্যবহার এবং গাজার অন্যান্য অংশে ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকায় এর প্রভাবের বিষয়টি মাথায় রেখেছি। এ চালান কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সে বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’ চারটি সূত্র জানিয়েছে, চালানটি অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এ চালানে বোয়িংয়ের তৈরি জয়েন্ট ডাইরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন (জেডিএএম)ও রয়েছে, এই স্যাটেলাইট-নির্দেশিত ‘স্মার্ট’ বোমা যেকোনো আবহাওয়ায় নির্ভুলভাবে নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম। এমন সময় এ অস্ত্রের চালান স্থগিত করা হলো যখন রাফায় আশ্রয় নিয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষাব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সেখানে ইসরাইলকে তাদের পরিকল্পিত আক্রমণ পিছিয়ে দিতে প্রকাশ্যে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

গাজা ক্রসিং বন্ধ করা অগ্রহণযোগ্য : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরাইল। রাফা ক্রসিংয়ের একপাশে গাজা, অন্যপাশে মিসরের সিনাই উপদ্বীপ। এরপরই গাজার সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করা ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার বার্তাসংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইল গাজার দক্ষিণের রাফা শহরে ট্যাংক পাঠিয়ে এবং মিসরের সাথে সীমান্তবর্তী ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার পর মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজ বলেছে, গাজার সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করা ‘অগ্রহণযোগ্য’।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘যে ক্রসিংগুলো বন্ধ করা হয়েছে সেগুলো আবারো চালু করা দরকার, সেগুলো বন্ধ করা অগ্রহণযোগ্য।’ তিনি আরো বলেন, গাজা ও ইসরাইলের মধ্যে অবস্থিত কেরাম শালোমে আরেকটি ক্রসিং বুধবার আবার খোলা হতে পারে আশা করা হচ্ছে।

পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, ইসরাইল বুধবার কেরাম শালোম ক্রসিং এবং রাফা ক্রসিং জ্বালানি সরবরাহের জন্য আবার খুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার জানিয়েছে। এই দু’টি ক্রসিং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে পরিচিত।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসরাইল আগামীকাল (বুধবার) কেরাম শালোম ক্রসিং আবার চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাস্তবে যেন এটিই ঘটে তা আমরা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি, এতে করে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা যাবে।’ হামাসের হামলার কারণে কেরাম শালোম ক্রসিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ আবার চালু করতে চায়।
মিলার আরো বলেন, ‘রাফার ক্ষেত্রেও একই জিনিস চায় যুক্তরাষ্ট্র। তারা (ইসরাইল) বলেছে, জ্বালানি সরবরাহের জন্য রাফাহ ক্রসিং পুনরায় চালু করবে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য এই জ্বালানি অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ, গাজার ভেতরে মানবিক সহায়তা সরবরাহকারী ট্রাকগুলোতেও জ্বালানি সরবরাহ করা অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং বেকারি চালানোর জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এটি সম্পূর্ণরূপে আবার চালু দেখতে চাই।’
একই পরিবারের ৭ জন নিহত : গাজা নগরীর একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে একই পরিবারের সাতজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজ। ওয়াফার বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটি গাজা নগরীর পূর্ব দিকের জেইতুন এলাকায় অবস্থিত। হামলায় একটি পরিবারের সাত সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন স্বামী, স্ত্রী ও তাদের পাঁচ সন্তান।
এদিকে, দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে সালাহুদ্দিন গেট এলাকায় একটি মোটরসাইকেল নিশানা করে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এই হামলায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন কয়েকজন। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, রাফায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল। গত মঙ্গলবার মিসর সীমান্তবর্তী রাফা ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement