২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ, আহত ২০

আন্দোলনে উত্তাল শাবি বন্ধ ঘোষণা

-

তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলা ও হেনস্তার ঘটনায় উত্তাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে। খবর পেয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘ক্রাইসিস রেসপন্স টিম’ (সিআরটি) ও শতাধিক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবনের তালা ভেঙে ভিসিকে বের করা হয়। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এদিকে রাত সাড়ে ৮টায় অনির্দিষ্টকালের জন্য শাবি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের আজ বেলা ১২টার মধ্যে হল ছাড়তে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রোববার বেলা ৩টার দিকে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে শাবি ভিসি বের হন। তাকে দেখা মাত্র গোল চত্বরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা দৌড়ে দিয়ে ঘিরে ফেলেন। এ সময় ভিসির পাশে থাকা অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মকর্তারা তাকে নিয়ে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে আশ্রয় নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের ঘিরে টানাহেঁচড়া করতে থাকেন। প্রায় ৫ মিনিট পর শিক্ষক ও কর্মকর্তারা ভিসিকে আইআইসিটি ভবনের ভেতরে নিয়ে যান। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভবনের ভেতরে জোরপূর্বক ঢুকতে চাইলে ভবনে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা তাদেরকে বাধা দিয়ে ভবনের সবগুলো গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশের পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা উত্তেজনাকর স্লোগান দিতে শুরু করেন। তীব্র উত্তেজনার মুখে সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এতে একজন পুলিশ সদস্য ও অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এর আগে বেলা পৌনে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মহিবুল আলম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দীন আহমেদ, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছেন জানিয়ে এক সপ্তাহের সময় চান; কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তা না মানায় শিক্ষকররা ওই স্থান ত্যাগ করেন।
‘প্রক্টরের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ : এ দিকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন ঢুকতে ও বের হতে দেয়া হয়নি। বিশ্ববদ্যালয়ের প্রধান সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।
স্লোগানের মধ্যে ‘প্রক্টরের উপস্থিতিতে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘হামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’, ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান, এক হও লড়াই করো’, ‘ছাত্রলীগের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘তিন দফা তিন দাবি, মানতে হবে মেনে নাও’, ‘প্রভোস্ট বডির পদত্যাগ, করতে হবে করতে হবে’ উল্লেখযোগ্য।
আন্দোলন থেকে সরে গেল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট : গত শনিবার ছাত্রীদের আন্দোলনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট একাত্মতা প্রকাশ করলেও পরে তারা আন্দোলন থেকে সরে যায়। রোববার দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, বেগম সিরাজুন্নেছা হলের শিক্ষার্থীদের চলমান ৩ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ১৫ জানুয়ারি রাত ৯টায় নৈতিক সম্মতি জ্ঞাপন করে এবং শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের পরিপূর্ণ সমর্থন করে। কিন্তু এই আন্দোলন রোববার হঠাৎ সহিংস রূপ নেয়ায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই ব্যাপারে কোনো সম্পৃক্ততা ও সমর্থন নেই।
সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলা এবং কর্তৃপক্ষ তিন দফা দাবি না মানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এসব সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষার্থীরা। এরপর ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে একটি মশাল মিছিল বের করা হয়।
এ ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার শেল ও গুলি ছোড়া হয়েছে কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত রাত সাড়ে ৮টায় ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তার বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ (লিজা) ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তার জায়গায় নতুন প্রাধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’

সকল