০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তাপপ্রবাহের নতুন রেকর্ড অসহ্য গরমে টেকা দায়

চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড ৪২.৭ ডিগ্রি, সিলেট চট্টগ্রাম বিভাগে কিছুটা স্বস্তি ৫ দিন শেষে বৃষ্টি হতে পারে
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। এরপরও জীবিকার তাগিদে মানুষকে বাইরে বের হতে হচ্ছে : আবদুল্লাহ আল বাপ্পী -


অসহ্য গরমে টেকা দায় হয়ে গেছে। গতকাল দেশে উচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিকে গরমে ও প্রচণ্ড ঘামে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। কাজ করার জন্য দিনের যে সময়টা নির্ধারিত সে সময়টাতে মানুষকে ঘরে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। কারণ বাইরে বের হলে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তা ছাড়া এই গরমে গায়ের চামড়া পুড়ে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছে, ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে অনেকের গায়ে। বাধ্য হয়ে অনেকেই ঘরে বসে থাকছেন। বিকেলে রোদের তাপ কমলে স্বাধীন শ্রমজীবী মানুষ কাজে বের হচ্ছেন। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, বগুড়া, মংলা, যশোর, টাঙ্গাইল, ঢাকার তাপমাত্রায় গায়ে ফোস্কা পড়ার অবস্থা।

এ দিকে গরমের এই অবস্থায় রাস্তায় ঠাণ্ডা ও বরফ মিশ্রিত লেবুর শরবতের রমরমা ব্যবসায় চলছে। রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ গরম ও ঘাম সহ্য করতে না পেরে রাস্তার বরফ মিশ্রিত শরবত পানে শরীর জুড়াচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ঠাণ্ডা খেলে সাময়িক আরাম বোধ হয় কিন্তু স্থায়ী নয়। বরং শ্রমজীবী মানুষ ইচ্ছা করলে সঠিক উপায়ে খাবার স্যালাইন গুলিয়ে পান করলে ভালো আরাম বোধ করবেন। খাবার স্যালাইনে ক্লান্তি দূর হবে। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে তাদের খাবার স্যালাইন পান করা উচিত হবে না। তাতে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাবে। বরং তারা বেশি করে বাসা থেকে নিয়ে আসা পানি পান করতে পারেন। তাতে ক্লান্তি দূর হবে আবার জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকবে না।
গরমে আরাম পেতে রাস্তায় যে শরবত বিক্রি হচ্ছে তা নয়, অনেক এলাকায় স্বেচ্ছা ভিত্তিতে বিশুদ্ধ পানিতে ভিটামিন সি জাতীয় কিছু মিশিয়ে মানুষকে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। রাজধানীর বনশ্রীতে গতকাল দুপুরে স্বেচ্ছাসেবকরা এমন ঠাণ্ডা পানি রিকশাওয়ালাসহ পথচারীদের বিতরণ করেছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী রোববারের দিকে দেশের বর্তমান উচ্চ তাপমাত্রার পারদ নিচে নেমে যেতে পারে। সেদিন সারা দেশের দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। অবশ্য আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসগুলো অনেক সময় ঠিক থাকে না কারণ আবহাওয়া যেকোনো সময় পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে, প্রকৃতিতে নতুন মাত্রার যোগ হওয়ার কারণে। ২৪ ঘণ্টার যে পূর্বাভাস দেয়া হয় তা বেশির ভাগ সময়ই মিলে যায়। এর আগেও আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হয়েছিল যে, ২৫ এপ্রিল তাপমাত্রা কমে যেতে পারে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে। কিন্তু সেটা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি, বরং আবহাওয়া অফিস ২৫ এপ্রিলই নতুন করে আবারো ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে। তবে আজ শনিবার থেকে পরবর্তী পাঁচ দিনের শেষে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

এ দিকে সারা দেশে উচ্চ তাপমাত্রা, তীব্র তাপপ্রবাহ এবং কোথাও কোথাও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় অঞ্চলের জেলাগুলোতে তুলনামূলক স্বস্তিতে আছে। এই দুই বিভাগে অল্প কিছু স্থানের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। পূর্বাভাসে এই বিভাগের প্রায় প্রতিদিনই অস্থায়ীভাবে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিলেও বৃষ্টি হচ্ছে না। তবে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকছে।
এ দিকে দেশে তাপপ্রবাহের নতুন রেকর্ড হয়ে গেল। চলতি গরম মৌসুমের গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গাতে ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি গরমে মৌসুমে বাংলাদেশে এটাই সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড। অতি তীব্র তাপপ্রবাহের এই চিত্র যে শুধু চুয়াডাঙ্গাতেই নয়, রাজশাহী, ঈশ্বরদীতেও কাছাকাছি রকমের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহীতে ও ঈশ্বরদীতে গতকাল ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আজ শনিবার সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্র বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে জনমনে অস্বস্তিভাব বিরাজ করতে পারে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় রাজশাহীতে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এর আগে গত বছরের ১৭ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর চলতি বছরে ২৬ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলো ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ২০০৫ সালের এপ্রিলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ দিকে টানা তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এবার এপ্রিলজুড়েই স্মরণকালের তপ্ত মৌসুম পার করছেন রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। মৃদু থেকে মাঝারি, মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে খরাপ্রবণ রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানিয়েছে, এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। চলতি মৌসুমে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এটিই ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তারও আগে শনিবার বেলা ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছি ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতেই। ওই দিন রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তাপমাত্রার এ রেকর্ড আর ভাঙেনি।

তবে দেশে এবারের চলমান অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আগের সেই সর্বোচ্চ রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অব্যাহত এই তাপপ্রবাহে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। খরতাপে ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি। বৃষ্টির জন্য হাহাকার থামছেই না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গেল সপ্তাহ থেকে রাজশাহীতে তাপপ্রবাহ নিয়ে সতর্ক থাকতে মাইকিং করেছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। তারা এই গরমে হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে। এ ছাড়া গত বুধবার থেকে একই ধরনের কর্মসূচি চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত রয়েছে অতি তীব্র তাপদাহ। এতে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে এখানকার মানুষের জনজীবন। গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছাঁয়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাথের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা। চলমান তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, আজ ২৬ এপ্রিল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১১ শতাংশ। বৃহস্পতিবার থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপদাহ অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে বা তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে হিট অ্যালার্ট মেনে চলতে। যেহেতু হিটস্ট্রোক হচ্ছে। সেহেতু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সেই সাথে সবার যে অবলম্বন বিশেষ করে কৃষি, গবাদি পশু-পাখির প্রতি যতœশীল হতে হবে এ মুহূর্তে। তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া অধিদফতর থেকে যে তথ্য ও নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে সে অনুযায়ী মাইকিং করা হচ্ছে।
ঈশ্বরদী সংবাদদাতা জানান, ঈশ্বরদীতে প্রায় মাসজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। গতকাল ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমের চলমান পক্ষকালের অধিক সময় তীব্র তাপদাহ বিরজমান। প্রায় প্রতিদিনই ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। ফলে ঈশ্বরদীর জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। আবহাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হেলাল উদ্দিন। তিনি জানান, এ তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে।
প্রকৃতিতে বৈরী আবহাওয়া দীর্ঘদিন স্থায়ী হওয়ায় ক্ষেত- খামার নিয়ে চরম চিন্তিত কৃষকরা। তারা জানান, মাঠে তেল ও ডাল বীজের বিপর্যয় হতে পারে। বিশেষ করে পাট, তিল, বাদামের ফলন হুমকির মুখে পড়েছে।
চৈত্রের কাঠফাটা রোদের পর বৈশাখের মধ্যেবর্তীতেও তাপমাত্রা না কমায় কাবু হয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধরা। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা বিরাজ করছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে বিদ্যুৎ এর ঘন ঘন লোডশেডিং। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। ঝরে যাচ্ছে মৌসুমি ফল বিশেষ করে আম, লিচু ও বাদাম।

প্রতিদিনই সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত একই মাত্রায় থাকছে এই অসহ তাপদাহ। সূর্য একটু উপরে উঠতেই মনে হয় যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছে না গ্রামের মানুষ। তাই দুপুর গড়াতেই পথঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে।
এ দিকে তীব্র তাপদাহের প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে- জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ হচ্ছে রোগীর সিরিয়াল। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হেলাল উদ্দিন জানান, গতকাল বিকেল ৩টায় ঈশ্বরদীতে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরো কয়েক দিন থাকতে পারে।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপদাহ। অসহনীয় এই তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গতকাল ছাড়িয়ে গেল চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা পাবনা জেলায় চলতি মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগের দিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত রোববার পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
বগুড়া অফিস জানায়, সারা দেশের মতো বগুড়াতেও অসহনীয় গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। কাকডাকা ভোর থেকেই সূর্যের তাপ অসহনীয় হয়ে উঠছে। দিনভর বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। মাঝে মধ্যে বাতাসের ছোঁয়া অনুভূত হলেও তীব্র রোদে সেই বাতাসও অনেকটা আগুনে রূপ নিয়েছে। ফলে ঘরের বাইরে পা ফেলা অনেকটাই অসহনীয় হয়ে পড়েছে। তাই গতকাল শুক্রবার সারা দিনই ব্যস্ত শহর বগুড়া ছিল অনেকটা ফাঁকা। এরই মধ্যে শুক্রবার বিকেলে বগুড়ার ইতিহাসে সর্বোচ্চ এবং চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। বেলা ৩টায় বগুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, বগুড়ায় শুক্রবার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে; যা বগুড়ার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে ১৯৮৯ সালের ২১ এপ্রিল বগুড়ায় ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল। তিনি জানান, তীব্র তাপদাহ চলমান থাকবে এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুব কম।

তীব্র তাপদাহের ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে বাইরে বের হওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে যারা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তাদের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। ঘন ঘন ঠাণ্ডা পানি পান করেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষেরা চরম কষ্টে রয়েছেন।
রায়পুরা (নরসিংদী) সংবাদদাতা জানান, নরসিংদীর রায়পুরায় হিটস্ট্রোকে দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার চাঁনুপুর ইউনিয়নের সওদাগর কান্দির এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে। চাঁনুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত শিশুর নাম ইয়াসিন। সে রায়পুরা উপজেলার চাঁনুপুর ইউনিয়নের সওদাগর কান্দি এলাকার প্রবাসী এনামুল হকের ছেলে।
নিহত ইয়াছিনের নানা বাচ্চু মিয়া জানান, গতকাল নাতিসহ মেয়ে নরসিংদী শহরে বাসাইলের ভাড়া বাসা থেকে আমাদের গ্রামের বাড়ি সওদাগর কান্দিতে নিয়ে আসি। আর আজই আমার নাতিটা মারা গেল। তিনি জানান, বেলা সোয়া ২টার দিকে ইয়াসিন তার মায়ের সাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় অতিরিক্ত গরমে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে সওদাগর কান্দিতে ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সাব সেন্টারের নিয়ে গেলে সেখানকার দায়িত্বরত ফার্মাসিস্ট মিজানুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সওদাগর কান্দির চাঁনুপুর ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সাব সেন্টারে দায়িত্বরত ফার্মাসিস্ট মিজানুর রহমান জানান, শিশু ইয়াছিনকে তার কাছে নিয়ে আসার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছিল। যারা নিয়ে এসেছেন তাদের ভাষ্যমতে অতি গরমে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।
দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়)সংবাদদাতা জানান, দেবীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে আহসান আলী ওরফে হাসান (৪০) নামে এক প্রাইভেটকার চালকের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ সুকাতু প্রধান উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুর পাড়ে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন আহসান আলী। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি।

আহসান আলী উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের তেলীপাড়া এলাকার মৃত হাসেম আলীর ছেলে। তিনি কালীগঞ্জ বাজারের মেসার্স সাবু টেডার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার চালক ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে কালীগঞ্জ বাজারসংলগ্ন সুকাতু প্রধান উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুর পাড়ে প্রাইভেটকার ধোয়ার জন্য নিয়ে যান আহসান আলী। সেখানে গাড়ি ধুচ্ছিলেন এবং মুঠোফোনে কথা বলতেছিলেন তিনি। হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করলে পাশে থাকা লোকজনকে তাকে ধরতে বলে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন আহসান আলী। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় আহসান আলীর।

 


আরো সংবাদ



premium cement