২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অলি আহাদের মৃত্যুবার্ষিকীর সভা

অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে : ফখরুল

-

এক ‘অদৃশ্য শক্তি’ দেশ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করে বলেন, প্রতি মুহূর্তে প্রতিক্ষণে আমাদের ওপরে খবরদারি করা হচ্ছে। তিনি বিএফইউজের (আওয়ামী লীগ পন্থী) নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আমি জাতীয় প্রেস ক্লাবের লাউঞ্জে চা খাচ্ছিলাম। আওয়ামী ঘরানার সাংবাদিকদের একটা নির্বাচন হচ্ছে। আওয়ামী ঘরানার একজন সাংবাদিক বললেন, অদ্ভুত কাণ্ড এই আমরা সবাই তো আওয়ামী ঘরানার। আমাদের কাছে মেসেজ আসতে শুরু করেছে ‘অদৃশ্য জায়গা’ থেকে যে, অমুককে ভোট দিতে হবে, অমুককে ভোট দিতে হবে। অর্থাৎ সারভিলেন্সটা এবং এই অদৃশ্য শক্তির যারা আসলে এই দেশটাকে চালাচ্ছে তাদের ক্ষমতা, তাদের যাওয়ার রাস্তা এত গভীরে চলে গেছে যে, তারা এ দেশের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে, এ দেশের সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এরকম একটা অবস্থার মধ্যে আমরা গণতন্ত্রের লড়াইটা করছি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ভাষাসৈনিক ও রাজনীতিক মরহুম অলি আহাদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। মরহুম অলি আহাদের মেয়ে ও বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সভাপতিত্বে ও ডা: জাহেদ-উর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অলি আহাদকে আপাদমস্তক একজন গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে অভিহিত করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান রেখে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এখানে আছেন আমি তাদের কাছে অনুরোধ করব, আমরা আমাদের ছোটখাটো সমস্যাগুলো ভুলে যাই এই মুহূর্তে। আসুন না আমরা একসাথে এক হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের আশা-আকাক্সক্ষার যে স্বপ্নগুলো ছিল সেগুলোকে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য এক হয়ে একটা লড়াই করি, সংগ্রাম করি। আমরা তো লড়ছি। আমরা আপনাদের কাছে এইটুকু আশা করব এই লড়াইয়ে একটা ইস্যুতে অর্থাৎ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই, সেই লড়াইয়ে আসুন আমরা একসাথে আসি। আমরা একসাথে লড়াইটা করি এবং দেশকে এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসি। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি। অন্তত একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা ফিরে আসি।
গণতন্ত্রের জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে গৃহবন্দী হয়ে আছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি লড়াই করছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান মিথ্যা মামলাগুলোতে পড়ে নির্বাসিত হয়ে আছেন। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ মামলা, সহস্রাধিককে হত্যা ও পাঁচ শতাধিককে গুম করার পর বিএনপির লড়াই করার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেনের গ্রেফতার প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশে এখন ওরা (সরকার) যা বলে তাই ইতিহাস হয়। ওই যে, বছর আড়াই আগে কুর্মিটোলা হসপিটালের ওখানে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, মোটামুটি দেখতে ভালো, স্বাস্থ্য ভালো শক্তিশালী তাকে ধর্ষণ করা হলো। এত বড় কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী এভাবে ধর্ষিত হবে। সবাই মিলে প্রতিবাদে তখন সরকার সেই ধর্ষককে গ্রেফতার করল। তার নাম কি মজনু, যার সামনের তিন-চারটা দাঁতই নেই। সেই লোককে ধর্ষণকারী বলে চালানো হলো...। ঠিক এরকম ইকবাল (ইকবাল হোসেন) দেখছেন না এখন। আবার একটা লোক হাজির করল যার মা বলেছেন ও নেশা করে তো ১০-১২ বছর ধরে, ওর মাথা ঠিক নেই। পুলিশ বলছে, ওকে জিজ্ঞাসা করলে জবাব দেবে কী? বিশ্বাসই করা যাবে না। কারণ তার কথাবার্তা উল্টাপাল্টা। অর্থাৎ এমন একটা লোক হাজির করেছেন। সত্যি সত্যি পুলিশ বলছেÑ এই কিন্তু এই কাজ করেছে। এদের (সরকার) ইতিহাস হলো মজনু আর ইকবাল হোসেনের ইতিহাস। সেভাবে তারা ইতিহাস তৈরি করবার চেষ্টা করছে, সমস্ত ইতিহাস বিকৃত করে একটা পঙ্গু, ন্যুব্জ ধর্মবিরোধী ইতিহাস তৈরি করবার চেষ্টা করছে। তখন অলি আহাদ আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। কারণ অলি আহাদ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় তখন তিনি দুই-তিনবার জেল খেটেছেন।
সরকার দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ : সরকার দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানুষ কী খাবে সে দিকে সরকারের খেয়াল নেই। তারা খেতে পারলেই হলো। আওয়ামী লীগ খেয়ে পেট মোটা করবে, শরীর মোটা করবে আর দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করে বিদেশে বাড়িঘর তৈরি করবে। এটাই তাদের একমাত্র কাজ। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার মানুষের খাওয়া-পরার দাম কমাতে পারে না। তারা কথা দিয়েছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। এখন চাল খাওয়াচ্ছে ৭০ টাকায়। এক সপ্তাহের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৬০ টাকা। চিনির দাম বেড়েছে, লবণের দাম বেড়েছে, সবজির দাম বেড়েছে, ডালের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ এই সরকার দেশ পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে পূজামণ্ডপে কোনো প্রকার নিরাপত্তা দেয়া হয় না এবং সরকারের মদদেই এই সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর একটাই কারণ সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। এই সরকার মানুষের অধিকারগুলো হরণ করছে, ধ্বংস করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এখন তাদের অধিকার চায়, ভোটের অধিকার চায়, দেশনেত্রীকে মুক্ত দেখতে চায়, আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মামলা তা প্রত্যাহার চায়, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা তা প্রত্যাহার চায়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেনÑ স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement