২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


এলসি খুলেও চাল আমদানি করতে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানকে সময় দিলো সরকার

নতুন করে পৌনে ২ লাখ টন আমদানির অনুমতি
-

বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যারা ব্যাংকে এলসি খুলেও নির্ধারিত সময়ে চাল আমদানি করে বাজারজাত করতে পারেননি তাদের ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া নতুন করে আরো ৫৭ ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরো এক লাখ ৮০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
দেশের অস্থিতিশীল চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে এর আগে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন শর্তে বেসরকারি পর্যায়ে মোট ৩২০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। তবে এর মধ্যে যারা গত ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের চাল আমদানির অনুমতি বাতিল করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বাকিদের বরাদ্দের চাল আমদানি করে বাজারজাতের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত।
গতকাল মঙ্গলবার বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চাল বাজারজাতকরণের স্বার্থে আইপি’র (ইমপোর্ট পারমিট) মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের পরিচালককে চিঠি দেয়া হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সংগ্রহ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যে আমদানিকারকরা ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলেছেন কিন্তু ইতোমধ্যে আইপির ((ইমপোর্ট পারমিট) মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে চাল বাজারজাত করতে পারেননি তাদের এলসিকৃত সম্পূর্ণ চাল বাজারজাতকরণের স্বার্থে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত আইপির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘যারা সঠিক সময়ে চাল আমদানি করে বাজারজাত করতে পারেনি এ সংখ্যা খুব বেশি না। আমাদের কাছে এ পর্যন্ত যারা জানাইছে পাঁচ-ছয়জন হতে পারে, এর বেশি হবে না।’
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের পরিচালক ডা: আজহার আলী নয়া দিগন্তকে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যারা গত ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আইপি অনুমোদন নিয়ে এলসি করেছে, চাল বাংলাদেশে ঢুকাতে পারেনি তাদের জন্য ১৫ মার্চ পর্যন্ত সুযোগ দেয়া হয়েছে।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন শর্তে বেসরকারি পর্যায়ে প্রথমে মোট ৩২০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। গত ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাংকে এলসি খোলার শেষ দিন ছিল। তাদের মধ্যে যারা খুলতে ব্যর্থ হয়েছিল তাদের চাল আমদানির অনুমতি বাতিল করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ সংখ্যা কত, জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এই সিনিয়র সহকারী সচিব বলেন, যতটুকু জানি যে, ৫০ জনের মতো (প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তি) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এলসি খুলতে পারেনি। তাদেরটা বাতিল করা হয়েছে। এ দিকে, চাল আমদানি প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও দেশের বাজারে দামে তা খুব একটা প্রভাব ফেলেনি বলে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। চালের বাজার এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলেই মনে করছেন ক্রেতাসাধারণ।
গত সোমবার নতুন করে যে ৫৭ ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরো এক লাখ ৮০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে সেখানে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ ভাঙাদানাবিশিষ্ট (বাসমতি নয়) সিদ্ধচাল শর্তসাপেক্ষে আমদানির জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে। চাল আমদানির শর্তে বলা হয়েছে, আগামী ১১ মার্চের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে। এলসি খোলা সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিকভাবে ই-মেইলে জানাতে হবে। বরাদ্দপ্রাপ্ত আমদানিকারককে এলসি খোলার ১০ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ২০ দিনের মধ্যে পুরো চাল বাজারজাত করতে হবে।
এ ছাড়া বরাদ্দে অতিরিক্ত আইপি (ইম্পোর্ট পারমিট) জারি বা ইস্যু করা যাবে না। আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের নামে প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করা যাবে না। প্লাস্টিকের বস্তায় আমদানি করা চাল বিক্রি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে না পারলে বরাদ্দ আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে বলে শর্ত দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্যশস্যের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রোধ, নি¤œআয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা এবং বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারি পর্যায়ে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৭ ডিসেম্বর বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য বৈধ আমদানিকারকদের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ ১০ জানুয়ারির মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement