২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্কুল-কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির যোগ্যতা

শিক্ষার অভিভাবক হবেন সুশিক্ষিতরা

-

স্কুল-কলেজ পরিচালনা আর নেতাগিরির মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। একজন নেতা হয়ে উঠতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু শিক্ষার বিষয়টি ভিন্ন। এটি দেখাশোনায় বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে। একজন নিরক্ষর মানুষ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারবেন, এমন আশা করা যায় না। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির হর্তাকর্তা বনে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীনদের পছন্দের ব্যক্তিরা। শিক্ষার প্রতি অনুরাগ দূরে থাক, অনেকে এ ব্যাপারে কোনো জ্ঞান রাখনে না; তারপরও হন সভাপতি কিংবা গুরুত্বপর্ণ সদস্য। শুধু ক্ষমতাসীনদের পছন্দের ভিত্তিতে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে তারা আসছেন। এতে একদিকে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ঘটছে পদ ও নিয়োগ বাণিজ্য।
এবার বেসরকারি স্কুল-কলেজে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড বেঁধে দিতে যাচ্ছে সরকার। বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের সভাপতি হতে হলে কমপক্ষে উচ্চমাধ্যমিক পাস হতে হবে। এর সাথে নিয়ম বেঁধে দেয়া হচ্ছে- এক ব্যক্তি পরপর দু’বারের বেশি এ পদে থাকতে পারবেন না। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধিমালা সংশোধন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংস্কার আনতে যাচ্ছে। প্রস্তাবটি যাচাইয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেলে এরপর আদেশ জারি হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে ন্যূনতম ¯œাতক পাস হতে হবে, এমন নিয়ম হয়েছে ২০১৯ সালে। অন্যদিকে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হতে আগে থেকে ডিগ্রি পাসের বিধান ছিল। একইভাবে উচ্চ আদালতের এক রায়ে ফাজিল মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতেও ডিগ্রি পাসের সনদ লাগছে। শুধু বেসরকারি স্কুল-কলেজের সভাপতি হতে শিক্ষাগত যোগ্যতার বালাই ছিল না এতদিন। ২০১৯ সালে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হলেও সরকারের ভেতর থেকে বিরোধিতায় নিয়ম বেঁধে দেয়া যায়নি।
এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সদস্য হওয়া একটি লোভনীয় বিষয়। সারা দেশে ৩৫ হাজার বেসরকারি স্কুল-কলেজ রয়েছে। গড়ে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ১১৬টির বেশি এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো ক্ষমতা চর্চার একটি উৎস। বর্তমান সরকারের আমলে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে নানা কারণে। এলাকার সংসদ সদস্য কিংবা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা এর সভাপতি হন বা এগুলোর পরিচালনা পরিষদে নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগ দেন। এর মাধ্যমে বড় ধরনের অর্জনের পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়। বাংলাদেশে শিক্ষা এখন দুর্নীতির বড় উৎস। শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা অভিজ্ঞতা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সভাপতি যদি নিরক্ষর হন কিভাবে তিনি সেটি যাচাই করবেন। লক্ষণীয়, এখানে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে অর্থকড়ি লেনদেন। ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়াও যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত। এ ছাড়া বরখাস্ত, বাতিল বা অপসারণ ও নৈমিত্তিক ছুটি দান কমিটির কাজ। এগুলো তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সার্বিক শিক্ষার মানে বড় অবনতি হয়েছে। এর কারণ যারা এর দায়িত্বে থাকার কথা ছিল তারা দায়িত্ব পাচ্ছেন না। মোট কথা, শিক্ষার যারা তদারকি করবেন; তাদের শিক্ষিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষাকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। স্কুল-কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে উচ্চমাধ্যমিক নয়; বরং কমপক্ষে ¯œাতক পাস হওয়া দরকার। এখন প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ¯œাতক পাস ব্যক্তির অভাব নেই।


আরো সংবাদ



premium cement