২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আইসিটি সূচকে পিছিয়ে আমরা

বাস্তবে নেই ডিজিটাল বাংলাদেশ

-

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বড় ধরনের কৃতিত্ব দাবি করে সরকার। সরকারের ভাষায়- তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছি। এটি সরকারের আন্তরিকতা ও দক্ষতায় সম্ভব হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে নিয়মিত প্রকাশিত বিভিন্ন বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিচে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) সূচকে দেখা যাচ্ছে, আমরা অর্থনৈতিকভাবে সমপর্যায়ের দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে। অথচ এ সরকার নিরবচ্ছিন্ন সুযোগ পেয়েছে।
বাংলাদেশে টানা তিন মেয়াদ আর কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকেনি। এ ছাড়া জ্বালাও পোড়াও হরতাল অবরোধের যে সংস্কৃতি তাও আগের মতো নেই। তার পরও আইসিটি খাতে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সরকার করতে পারেনি, প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই) প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ ২০২৩ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ ১৬৯টি দেশের আইসিটি পরিষেবার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, ৩৩টি দেশ সর্বোচ্চ ৯০-১০০ স্কোর পেয়েছে। ৪৭টি দেশ ৮০-৯০ স্কোর পেয়েছে। সব দেশ মিলিয়ে গড় স্কোর ৭২ দশমিক ৮। বাংলাদেশের অবস্থান গড়ের চেয়ে বেশ নিচে। সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৬১ দশমিক ১। এ অঞ্চলের কাছাকাছি অর্থনীতির দেশ এমনকি আরো পশ্চাৎপদ অর্থনীতির দেশের চেয়ে আইসিটি সুুবিধায় পিছিয়ে আমরা। শ্রীলঙ্কার স্কোর ৬৯ দশমিক ৯, ভুটানের ৭৬ দশমিক ৫, ভিয়েতনামের ৮০ দশমিক ৬, মালদ্বীপের ৭৯ এবং ইন্দোনেশিয়ার স্কোর ৮০ দশমিক ১।

আইসিটি সক্ষমতা দেখতে অবকাঠামো সুবিধাকে ইনডেক্সে দুটো ভাগে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। একজন মানুষ কতটা সহজে যোগাযোগ জালে সংযুক্ত হতে পারেন। পরিবার, সমাজ ও ব্যবসায়কে এর মাধ্যমে সংযুক্ত করতে পারেন কি না। নারী-পুরুষ, শিক্ষাগত যোগ্যতা এমনকি গ্রাম-শহরে যেখানে যে অবস্থায় থাকেন না কেন, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় কতটা সংযুক্ত হতে পারেন সেটি দেখা হয়েছে। ইনডেক্সে একে সর্বজনীন সংযোগ বলা হচ্ছে। এ বিভাগে বাংলাদেশের স্কোর ৩৯ দশমিক ২। তবে টেকসই সুবিধা বা অর্থবহ সংযোগ বিভাগে আমাদের স্কোর ৮৩। সাশ্রয়ীমূল্যের প্রযুক্তি, নিরাপদ ইন্টারনেট সেবা, ব্যবসায়িক পণ্যপ্রাপ্তি- এ ধরনের কিছু সুযোগ এখানে রয়েছে। তবে তার ব্যাপ্তি ও পরিসর সীমিত। খুব কম মানুষ ইন্টারনেটের এ ধরনের মানসম্পন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন।
আইডিআই সূচক তৈরিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা, বাড়িতে ইন্টারনেট সুবিধা, মোবাইলে ইন্টারনেট ট্রাফিক সাবস্ক্রিপশন- এ ধরনের ১০টি উপাদান যাচাই করা হয়েছে। এর মধ্যে আটটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গড় মানের চেয়ে বেশ পিছিয়ে। এমনকি নি¤œমধ্যম আয়ের দেশগুলোর যে গড় সূচক, সেখানেও বাংলাদেশ সাতটিতে পিছিয়ে। বাংলাদেশের মানুষ আয়ের ২ শতাংশ ব্যবহার করে মোবাইল ডাটা, ভয়েস ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে। মুঠোফোন মালিকানা রয়েছে ৬০ দশমিক ৮ শতাংশের কাছে। তবে এগিয়ে রয়েছে থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক কাভারেজে। এটি অনেকটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার মতো।
মানুষ এখন ডিজিটাল দুনিয়ার ওপর বেশি নির্ভরশীল। অর্থনৈতিক অগ্রগতি আর আইসিটি অবকাঠামো অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দেশের উন্নয়ন করতে হলে গড়ে তুলতে হবে বিস্তৃত নিরাপদ ডিজিটাল দুনিয়া। এখানে আরেকটি আশঙ্কার বিষয়- নিরাপত্তা ঘাটতি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে জালিয়াতির হাতিয়ার। এ দেশে অসংখ্য মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। জালিয়াতি প্রতিরোধে আমাদের ব্যবস্থাপনা খুব দুর্বল। অতএব আইসিটি অবকাঠামো কার্যকর বিস্তৃতির পাশাপাশি এর নিরাপদ ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। অন্য দিকে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বাড়তি কৃতিত্ব না নিয়ে সরকারকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement