২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাখ লাখ শিশু `

শিশুশ্রম নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে

-

দেশে শিশুশ্রম বন্ধ করা যায়নি। অথচ শিশুদের অধিকার নিয়ে নানা মহলে সব সময় তুমুল আলোচনা জারি রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমা সহায়তায় পরিচালিত এনজিওগুলো এ নিয়ে সরব। সরকারও জোর গলায় বলে আসছে, শিশুদের নিরাপদ শৈশব-কৈশোর নিশ্চিতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বঞ্চিত শিশুরা কতটুকু উপকৃত হচ্ছে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এ কথা তুলতে হচ্ছেÑ কারণ, খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে লাখ লাখ শিশু দারিদ্র্যের কারণে এখনো শৈশব-কৈশোর বিসর্জন দিয়ে পরিবারকে সহায়তা করতে কায়িক শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে।
বিবিএসের জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ এর প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশে এখনো ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। তাদের বয়স পাঁচ থেকে ১৭ বছর। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পল্লী এলাকায় বেশি। শহরে দুই লাখ ৫০ হাজার। গ্রামাঞ্চলে আট লাখ ২০ হাজার। তবে দেশে সার্বিকভাবে শ্রমজীবী শিশু রয়েছে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার।
বিবিএস বলছে, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি খাত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছে ৩৮ হাজার আট শ্রমজীবী শিশু। এসব শিশু ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তবে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে রয়েছে ২৪ হাজার ৯২৩ শিশু। আগুন, গরম যন্ত্রপাতি, বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক সরঞ্জামÑ এসবের সংস্পর্শে আসে ২০ দশমিক ২ শতাংশ শিশু।

জরিপের তথ্যে দেখা যায়, শিশুশ্রমিকের ৮২ শতাংশ নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করে। উৎপাদনে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং কৃষি, বনায়ন ও মাছ ধরায় ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু নিযুক্ত। সামগ্রিকভাবে শিশুশ্রমিক কর্মচারী হিসেবে শ্রেণীভুক্ত ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ। আর স্কুলে যায় ৫২ দশমিক ২ শতাংশ। শিশুশ্রমিকের গড় মাসিক আয় ছয় হাজার ৬৭৫ টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে ২০ লাখ ১০ হাজার শিশু গৃহকর্মী। যাদের পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। ৮০ হাজার শিশুশ্রমিক যারা পারিশ্রমিক প্রাপ্ত। উভয় ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। তিনটি প্রাথমিক সেক্টর যেখানে কৃষি ১০ লাখ ৭০ হাজার, শিল্প ১১ লাখ ৯০ হাজার ও পরিষেবা ১২ লাখ ৭০ হাজার শিশুশ্রমিক রয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলোতে কর্মরত সব শ্রমজীবী শিশুর মধ্যে ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ ছেলে। ২ দশমিক ৪ শতাংশ মেয়ে। স্কুলে উপস্থিতির হার বর্তমানে ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।
যদিও বিবিএসের তথ্য প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের চেয়ে সরকারের সুবিধা হয় এমন তথ্য পরিবেশনে বেশি মনোযোগী সংস্থাটি। তবু এর তথ্যের আলোকে সরকার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মূল্যায়ন করে দেশ থেকে শিশুশ্রম নিরসনে উদ্যোগী হবে, এ প্রত্যাশা করা বেশি চাওয়া নয় আমাদের। কারণ, শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। এটি খুব স্পর্শকাতর বিষয়। সঙ্গত কারণে, শিশুদের নিয়ে যেসব সরকারি-বেসরকরি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, এগুলোর আশু কর্তব্য হলো দ্রুত কর্মতৎপরতা চালিয়ে দেশ থেকে শিশুশ্রম নিরসনে উদ্যোগী হওয়া এবং সব শিশুকে বিদ্যালয়মুখী করার বাস্তব সুযোগ সৃষ্টি করা।

 


আরো সংবাদ



premium cement