২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মিয়ানমারের পরিবর্তিত পরিস্থিতি

সুযোগ নিতে চায় না বাংলাদেশ

-

রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যাগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ জন্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ১১ লাখ মানুষকে জায়গা করে দিতে হয়েছে। কিছু এলাকায় সংখ্যায় তারা স্থানীয় মানুষের চেয়ে বেশি। যেখানে দেশীয় মানুষের জন্য এই এলাকায় সম্পদের ঘাটতি রয়েছে, সেখানে তারা বাড়তি বোঝা হয়ে বসেছে। তাদের উপস্থিতি পুরো দেশের জন্য প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি করছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার বোঝা থেকে মুক্ত হওয়া আমাদের জন্য তাই একনম্বর অগ্রাধিকার পাওয়া দরকার। বাংলাদেশ সরকার এই ইস্যুকে যেভাবে মোকাবেলা করছে তাতে ধোঁয়াশা ও অস্পষ্টতা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার জন্য সরকারের যতটা তৎপর থাকা দরকার সেটা দেখা যায় না। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অনুকূলে ব্যবহার করতে আমরা জড়তায় ভুগছি, ক্ষেত্রবিশেষে সুযোগ যেন কজে লাগাচ্ছি না।
মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ সামরিক জান্তা হারিয়েছে। সারা দেশে তারা স্বাধীনতাকামী শক্তিগুলোর হাতে মার খাচ্ছে। জান্তার শক্তি ও মনোবল উভয় কমে আসছে। বাংলাদেশ সীমান্তে তাদের অবস্থা আরো খারাপ। আরাকান আর্মির কাছে জান্তা ধরাশায়ী হয়ে গেছে। বেশির ভাগ এলাকা আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে। তার প্রমাণ হচ্ছে, দফায় দফায় তাদের কাছে হেরে গিয়ে ভয়ে পালিয়ে আসছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। সবশেষ, এই বাহিনীর ১৭৯ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং তাদের আশীর্বাদপুষ্ট বাহিনী রোহিঙ্গা নিধনের জন্য দায়ী। তারা রোহিঙ্গাদের কোনো ধরনের মানবিক মর্যাদা স্বীকার করে না। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। গণহত্যা চালিয়ে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে। সে কারণেই বিপুল রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু জীবনে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। আবার এদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে জান্তা সরকার যে ধরনের প্রতারণা করেছে তা-ও এক ধরনের অপরাধ। এর বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার এমন নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছে তা রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশ কারোর জন্য কোনো ধরনের উপকার করতে পারেনি। জান্তা যেভাবে চেয়েছে, চুক্তি করেছে। একজন রোহিঙ্গাও ফিরিয়ে নেয়নি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যেকোনো জাতির নেতারা জান্তার বিরুদ্ধে সুযোগ পেলে তার সঠিক ব্যবহার করবে। কিন্তু আমাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, আমরা জান্তা সরকারের বন্ধু।
চলমান সঙ্ঘাতের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে আরাকান আর্মির তাড়া খেয়ে বিজিপির ৪৮১ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জান্তা সরকারের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী তাদের আমরা মিয়ানমারে নিরাপত্তার সাথে ফেরত পাঠিয়েছি। মিয়ানমারের জান্তা যখন আমাদের ওপর এক ধরনের পীড়ন ও অব্যাহত প্রতারণা করছে এর বিপরীতে আমরা তাদের সাথে করছি অত্যন্ত সম্মানজনক আচরণ। বাংলাদেশ এ অঞ্চলে এক অদ্ভুত দেশ হয়ে উঠছে। সে যেন তার শত্রু মিত্র চিনতে পারছে না। যারা তাদের দুঃখ দৈন্যের কারণ হয়ে উঠছে দেশটি যেন তাদের বন্ধু শুভাকাক্সক্ষী হয়ে উঠছে। অন্তত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে আচরণ দেখে আমাদের তাই মনে হচ্ছে।
মিয়ানমারের ভেতরের পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে এসেছে জান্তার নিয়ন্ত্রণ ঢিলা হয়ে গেছে। তারা পুনরায় পুরো দেশের ওপর তাদের শাসন কর্তৃত্ব করবেন, তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আমাদের সীমান্তে আরাকান আর্মি অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। রোহিঙ্গাসহ সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থে তারা প্রধান প্রতিপক্ষ হবে। এ অবস্থায় আমাদের বন্ধুত্ব যদি প্রদর্শিত হয় জান্তার প্রতি আমরা কিভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলা করব? নতুন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। ওই অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ যদি আরাকান আর্মি গ্রহণ করে সেই অবস্থায় জান্তার কোনো অবস্থান আর হয়তো থাকবে না। তখন আরাকান আর্মির সাথে বিরোধ করে কি আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারব? সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement