২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ওষুধের দাম একধাপে অনেক বৃদ্ধি

হুমকিতে পড়বে জনস্বাস্থ্য

-


অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের একটি ওষুধ। রোগ থেকে উপশম পেতে আমাদের ওষুধ সেবন করতে হয়। কিন্তু এই ওষুধের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। ফলে বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে আরো বিপাকে পড়বে সাধারণ মানুষ।
একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওষুধের দাম সর্বনিম্ন ২০ ও সর্বোচ্চ ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। গড়ে দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। নতুন বছরের শুরুতে এসব ওষুধের দাম বেড়েছে। ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, কোম্পানিগুলো ধাপে ধাপে নিজেদের ওষুধের দাম বাড়ানো অব্যাহত রেখেছে।
এমনিতে ঊর্ধ্বমুখী পণ্যমূল্যের বাজারে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। জীবনমান নিম্নমুখী, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাস্তবে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে আর্থিক বিপর্যয়ে দেশের বেশির ভাগ মানুষ। তার মধ্যে ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষজনের ওপর আর্থিক চাপ আরো বাড়ছে। এ ছাড়া ওষুধের দাম যে মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে, তা অযৌক্তিক ও অন্যায়। ভোক্তার অধিকার উপেক্ষা করে এমন মূল্যবৃদ্ধি কাক্সিক্ষত নয়।
প্রকৃত বাস্তবতায় ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। কারণ ওষুধের দাম ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় হতদরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার বাইরে থাকছে। এর মধ্যে ওষুধের দাম যদি আরো বেড়ে যায়, তাহলে চিকিৎসাবৈষম্য আরো বাড়বে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। এভাবে চলতে থাকলে বিভিন্ন রোগব্যাধিও বাড়বে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা মানুষ, যাদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তাদের অবস্থা আরো করুণ হবে। এ জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেশি করে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া উচিত, যাতে হাসপাতালের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে না হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয়ের অংশ প্রতি বছর কমছে। বিপরীতে ব্যক্তির পকেটের খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যয়ের তিন-চতুর্থাংশ বহন করছে ব্যক্তি নিজে। বাস্তবতা হলো- দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্য খাতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সরকারি বরাদ্দ কম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিসংখ্যান হলো- ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে স্বাস্থ্য ব্যয়ে সরকারের অংশ ছিল ২৮, ২৬ ও ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারের অংশ ক্রমান্বয়ে কমছে। আবার ওই বছরগুলোতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল ৬৪, ৬৬ ও ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ চিকিৎসা করাতে গিয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বেড়েছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ওষুধের দাম নির্ধারণ হওয়া উচিত দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। উৎপাদন খরচ মুখ্য হতে পারে না। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরকে।
এ কথা ঠিক যে, নিত্যপণ্যে দাম যে কারণে বাড়ে, ওষুধের দামও সঙ্গত কারণে বাড়তে পারে। যেহেতু ওষুধের কাঁচামাল এখনো আমদানি করতে হয়। কাঁচামালের সাথে ডলারের দামের তারতম্য হলে স্বাভাবিকভাবে ওষুধের দাম বাড়ে। প্রশ্ন হলো, সরকার ওষুধের দাম বাড়তে দেবে কি না। কারণ আর দশটি জিনিসের মতো ওষুধের বিকল্প হয় না।
ওষুধের দাম বেড়ে গেলে যদি মানুষ ওষুধ কিনতে না পারে, নিয়মিত ওষুধ সেবন না করতে পারে, তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাথে সাথে তার পরিবার, সমাজ, ক্ষেত্রবিশেষে দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় হলো, কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে দেয়া। ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রমোশন ও মার্কেটিং খরচ কমিয়ে আনা। বিশেষ করে চিকিৎসকের কমিশন কমিয়ে দেয়া। কাজটি সব ওষুধ কোম্পানিকে এক হয়ে করতে হবে। কেবল তখনই সম্ভব ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা।

 


আরো সংবাদ



premium cement