২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দুষ্টচক্র শুষে নিচ্ছে ভোক্তাকে

চাহিদা-জোগান বিধি অকার্যকর

-

পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। অর্থনীতির এ বিধি ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন আচরণ করতে পারে। সেটি ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজারের এ বিধি একেবারে অকার্যকর। এখানে পণ্যের দাম নির্ধারণে কাজ করে এক ভুতুড়ে ফ্যাক্টর। যেমন উৎপাদন বেড়ে গেলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়; এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কোনো একটি নিত্যপণ্যের জোগান পর্যাপ্ত রয়েছে, দেখা গেল তার দাম একবারে দ্বিগুণ হয়ে গেল। আমরা যদি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিরিখে নিত্যপণ্যের বাজার যাচাই করি; তাহলে এর প্রমাণ মিলবে। এ বাজারে একটি অদৃশ্য হাত রয়েছে। সেই হাত ইচ্ছেমতো পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়।
চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন গত বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে চিনির মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। মূল্যতালিকা অনুযায়ী, মিলগেট ও করপোরেট সুপারশপে প্রতি কেজির বিক্রয়মূল্য ১৫৫ টাকা। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৬০ টাকা। ৫০ কেজির বস্তা মিলগেটে কেজি ১৫০ টাকা দরে ও ডিলার পর্যায়ে বিক্রি ১৫৭ টাকা করা হয়েছে। অথচ বাজারে নিত্যপণ্যটির দাম সহনীয় করতে সম্প্রতি শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়। শুল্কের প্রভাবে এর দাম কমবে এমন আশায় গুড়েবালি। তার আগে কেজিপ্রতি চিনি ২০ টাকা দাম বেড়ে গেল।

বাংলাদেশে সব নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য নির্ধারণে এমন প্রবণতা প্রতিনিয়ত লক্ষ করা যায়। যে পণ্যগুলো প্রতিদিন বাজার থেকে কিনতে হয় এবং এর পরিমাণটাও বেশি। ধনী-গরিব সবাই এসব না কিনে পারেন না। সেগুলোর ক্ষেত্রে বাজারে এক ধরনের কারসাজি দেখা যায়। চিনির প্রকৃত দাম বাংলাদেশে কত হতে পারে সেটি আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর দাম বিবেচনায় নিয়ে যাচাই করতে পারি। চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার দিন ভারতের কলকাতায় প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৬২ টাকা ৬৭ পয়সা, দিল্লিতে ৬৭ টাকা ৫৪ পয়সা। পাকিস্তানের করাচিতে ৫১ টাকা, শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে ৯৯ টাকা, নেপালের কাঠমান্ডুতে ৮২ টাকা ৮৬ পয়সা। বেশির ভাগ প্রতিবেশী দেশে চিনির দাম অর্ধেকের কম। কিছু ক্ষেত্রে তিন ভাগের এক ভাগ। অথচ আমাদের দেশে চিনি উৎপাদনের প্রধান উপাদান আখ সস্তা। তাহলে আমাদের দেশে উৎপাদিত চিনি কোন যুক্তিতে কয়েকগুণ দাম হবে। এ নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে উপযুক্ত ব্যাখ্যা নেই।
প্রতিবেশী দেশগুলোতে যখন একটি ডিম ছয় টাকায় বিক্রি হচ্ছে; তখন এদেশে ১২ থেকে সাড়ে ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। লবণ পেঁয়াজ রসুন আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী অন্য দেশের তুলনায় আমরা কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে কিনে খাচ্ছি। এটি বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সাধারণ মানুষ বাজারের উত্তাপ মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু বাড়তি দাম যাচ্ছে কোথায় তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।
নিত্যপণ্যের দাম এভাবে সীমা ছাড়ালে একটি গোষ্ঠীর কাছে বিপুল অর্থ পুঞ্জীভূত হয়। উচ্চমধ্যবিত্ত ও ধনীরা এসব কিনতে চাপে না পড়লেও বিশাল নিম্নবিত্ত ও গরিবরা পিষ্ট হন। এটি নিশ্চিত করে বলা যায়, আমাদের বাজারে একটি দুষ্টচক্র রয়েছে। তাই পণ্যের দাম বিধি মেনে চলে না। সম্পূর্ণ দুষ্টচক্রের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। এ সিন্ডিকেট উচ্ছেদের কোনো আগ্রহ এখনো সরকারের মধ্যে দেখা যায়নি।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement