২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


খতনা করতে গিয়ে শিশুর প্রাণ যাচ্ছে

চিকিৎসা প্রশাসনের সক্রিয়তা দরকার

-


বাংলাদশে দুর্নীতি ও অনিয়মের এক জোয়ার চলছে। ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট এ বিকৃতি অল্প কিছু মানুষের জন্য সাময়িক ভালো কিছু প্রাপ্তি ঘটাচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষতির শিকার হচ্ছে অনেক বেশি মানুষ। এমনকি প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি অন্যায়ের শুরু যখন হয় এবং তার যখন বিচার হয় না সেটি ছড়িয়ে যায় পুরো দেশে। এভাবে করে একটি একটি খাতে অবক্ষয় এখন চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। ক্ষমতার ক্ষুদ্র বৃত্তও অনেক ক্ষেত্রে এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারছে না। একটি দেশে অন্যায় অনিয়মের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হলে শেষ পর্যন্ত তার অভিশাপ থেকে কেউ বাঁচতে পারে না। স্বাস্থ্য খাত নিয়ে মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। এই খাতটি যেখানে সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাবে; দেখা গেল, মানুষের দুর্বলতাকে আশ্রয় করে এ খাতে করা হলো সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি।

চিকিৎসাকে আমাদের দেশে সবাই উৎকৃষ্ট সেবা হিসেবে জানতাম। বিগত কয়েক দশক আগেও ‘এইম ইন লাইফ, জীবনের লক্ষ্য’ এই রচনায় স্কুল-কলেজের সবচেয়ে ভালো ছাত্ররা একজন চিকিৎসক হবো- এই মহান লক্ষ্য নির্ধারণ করত। সত্যিকার অর্থে তার প্রভাবও আমাদের চিকিৎসাসেবায় দেখা গেছে। বিগত দেড় দশকে এমন কিছু ঘটনা, চিকিৎসায় বাণিজ্য প্রধান হয়ে উঠল। করোনা মহামারীর সময় আমাদের চিকিৎসা প্রশাসনের কাছ থেকে মানুষ যখন ভালো একটা কিছু প্রত্যাশা করল তখনই দেখা মিলল সাহেদ ও সাবরিনার মতো বহু জালিয়াতের। তারা ঠিক মানুষের দুর্বলতাকে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ কামানোর অস্ত্র বানায়। এখন আমাদের চিকিৎসায় নিয়মিত অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এর সর্বশেষ নজির হচ্ছে সামান্য খতনা করাতে গিয়ে রাজধানীতে প্রাণ হারিয়েছে এক শিশু। খতনার সময় শরীরে সামান্য মাত্রায় আংশিক চেতনানাশক প্রয়োগ করার নিয়ম। দেখা গেল, মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিক্যাল চেকআপ সেন্টারের চিকিৎসকরা তার ওপর পূর্ণ চেতনানাশক প্রয়োগ করেন। ওভার ডোজের কারণে ১০ বছরের শিশুটি আর চেতনা ফিরে পায়নি। ছেলেশিশুদের খতনা করানো আমাদের দেশের ধর্মীয় ঐতিহ্য। শত শত বছর ধরে স্থানীয় হাজমরা এটি করে আসছে। সামান্য এই কাটাছেঁড়ায় শিশুদের মারা যাওয়ার রেকর্ড নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের মেডিক্যালগুলোতে পড়ে আসা ডাক্তাররা এই সামান্য অপারেশনের ব্যাপারেও কি যথেষ্ট অবহিত নন? বাংলাদেশের মেডিক্যালে পড়াশোনার একটা সুনাম ছিল। এখান থেকে পাস করা ডাক্তাররা দেশে তো দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, বিদেশে গিয়েও সুনাম কুড়িয়েছেন। এখানে আন্তর্জাতিক মানের বহু ডাক্তার গড়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসসহ নানা অনিয়মের খবর বের হচ্ছে। নতুন করে পাস করা ডাক্তাররা যখন আগের মান ধরে রাখতে পারছেন না, এ প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বাড্ডার ইউনাইটেড হাসপাতালে খতনার সময় আরো এক শিশু মৃতু্যুর ঘটনা ঘটেছে। ধানমন্ডির ল্যাবএইডে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে এক যুবক মারা গেছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা লেগেই আছে। এমনকি দেশের নামী দামি হাসপাতালগুলোতেও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে।

দেশে যখন একটি অনিয়ম ঘটে সরকার সেটিকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসেবে দেখাতে পছন্দ করে। আবার এগুলোকে তদন্ত করে কারণ উদঘাটন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার ক্ষেত্রে গড়িমসি করে। এভাবে সব সেক্টরে নীরবে বিস্তার ঘটেছে চরম অবক্ষয়ের পরিবেশ। সব মিলিয়ে জাতিকে ছোবল মারার জন্য যেন সেটি তৈরি হচ্ছে। হাসপাতালে মানুষের প্রাণ যাওয়ার ঘটনাগুলোকে যথেষ্ট যত্ন নিয়ে তদন্ত দরকার। এ ব্যাপারে কারো দায় থাকলে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সংস্কৃতি চালু করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে যদি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হয় তাহলে মেডিক্যালে ভর্তি নিয়ে কেউ যেন অনিয়ম করার সুযোগ না পায়, ফাঁকি দিয়ে যাতে কেউ ডাক্তার হতে না পারে- সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে হাতুড়ে ডাক্তারের পাল্লায় পড়ার আশঙ্কা দূর হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement